সুন্দরবনের কোলঘেঁষা গ্রাম পশ্চিম খেজুরিয়া। বন আর বসতির মধ্যে বয়ে গেছে ঢাংমারি নদী। এই নদীর উত্তর পারে গ্রামটি না দেখলে বোঝার উপায় নেই এখানে মানুষ-প্রকৃতি কিভাবে একীভূত হয়ে আছে। ওই পারে বাঘ-হরিণের হাঁকডাক, এ পারে মানুষের কোলাহল।
উদ্যোগ
আলো হাতে উদ্যমী ওরা
গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা

এই গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সূর্যের আলো থাকতেই তাদের পড়ালেখা শেষ করে। কারণ সন্ধ্যা নামলে ঘরের সামান্য কেরোসিনে বেশিক্ষণ কুপি জ্বালিয়ে রাখার সামর্থ্য তাদের নেই।
পশুর নদী পেরিয়ে বানিশান্তা বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে যেতে হয় পশ্চিম খেজুরিয়া গ্রামে। ওই গ্রামে বীণাপাণি নামে একটি স্কুল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগে গ্রামের মানুষ এখানে আশ্রয় নেয়। ফলে স্কুলটি একটি আশ্রয়কেন্দ্রও। এই স্কুলের দোতলায় রয়েছে শ্রেণিকক্ষ।
সেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনঘেঁষা এই জনপদের বেশির ভাগ পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। অনেকেই কৃষিকাজ করে। কেউ কেউ বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ কেউ মাছ ধরে। আবার কেউ কেউ দিনমজুরি করে। এলাকায় দিনমজুরি পাওয়া না গেলে অন্য এলাকায় যায়। তবে অভাবের মধ্যেও ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়।
দরিদ্র পরিবারগুলো নানা সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু প্রকৃতির মতোই তারা সরল, অল্পতেই তাদের চোখে-মুখে তুষ্টি এসে যায়। পেটের খাবার আর পরনের কাপড় কোনো মতে জুটলে তারা আর ভাবে না। কিন্তু তাদের স্বপ্ন আছে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু তাদের সন্তানরা আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রাত ১০টা পর্যন্ত ঘরে কুপি জ্বলবে এই পরিমাণ কেরোসিন তারা জোটাতে পারে না। অগত্যা সন্ধ্যা হলেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয় তাদের ছেলেমেয়েদের।
পশ্চিম খেজুরিয়া গ্রামের শিক্ষার্থী হৃদয় বাইন। সামর্থ্য না থাকায় তার বাবা কেরোসিন তেল কিনতে পারেন না। তারা দুই ভাই-বোন, মা-বাবা ও দাদিকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। একমাত্র উপার্জনকারী তার বাবা মধুসূদন বাইন। সন্ধ্যার দিকে দিনের আলো থাকতে থাকতে এবং ভোরবেলায় উঠেই হৃদয় পড়াশোনা করে। এখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভালো ছাত্র হিসেবে তার নাম ছড়িয়েছে। সে লেখাপড়ায় আরো মনোযোগী হতে চায়। আরো ভালো করতে চায়। কিন্তু ভালো করতে হলে তো পড়তে হবে। কিছুদিন ধরে তাই সে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়া করছে। কারণ সেখানে সোলারের একটি বাতি আছে।
বাবা মধুসূদন বাইনের মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে যায়। তিনি চান তাঁর সন্তান লেখাপড়া করুক। কৃষিকাজ করে স্বল্প আয় হয়। সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। একদিন হৃদয় স্কুল থেকে একটি সোলার হারিকেন হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরল। বাবা মধুসূদনের চোখ ছানাবড়া। কোথায় পেল হৃদয় এই আলো। জানা গেল কোরিয়া গ্রিন ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এবং বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বেডস) যৌথ উদ্যোগে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য সৌর বাতি বিতরণ করা হয়েছে। সেই সুবাদে হৃদয়ের হাতে একটি বাতি এসেছে।
বাতিতে নিয়মিত চার্জ দিতে হয়। তার জন্য উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই স্কুলের ছাদে একটি সোলার স্টেশন বসানো হয়েছে। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা সোলার বাতি নিয়ে আসে। স্কুলে ক্লাস করার সময় ল্যাম্পগুলো চার্জে বসানো হয়। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার সময় ল্যাম্পগুলো তারা নিয়ে যায়।
এখন পশ্চিম খেজুরিয়া গ্রামে সন্ধ্যা নামলে শিক্ষার্থীরা খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে না। ইচ্ছেমতো এক থেকে দুই বা তিন ঘণ্টা তারা লেখাপড়া করে। হদয়ের বাবা মধুসূদন বাইন বলেন, ‘আহা, একদিন যদি গ্রামটিও এভাবে আলোকিত হতো।’
সম্পর্কিত খবর

রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা


কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
- চার জেলায় ৪ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়া বাগেরহাটে যুবদল নেতাকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচ জেলায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ভূন্দুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজন হলেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে নুরুল আমিন (৪০), গোলাম শহিদের ছেলে বলু মিয়া (৫৫) ও ফুলবাবু (৫০)। তাঁরা সবাই জমি নিয়ে বিরোধে থাকা শাহাজাহান মিয়ার পক্ষের লোক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহুদিন ধরে ওই এলাকার শাহাজাহান মিয়া ও রাজু মিয়ার মধ্যে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্য কয়েকটি জেলায়ও পৃথক ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে সোহাগ সরদার (২৭) নামের যুবদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রূপা (১৮) তাঁর স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী দাবি করেছেন, রূপা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানকিদাহ এলাকায় নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে টাঙ্গন নদী থেকে। মৃত ব্যক্তি হলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম।

বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ২৮৭ যাত্রী নিয়ে নিরাপদে চট্টগ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় উড্ডয়নের পরপরই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট বিজি ১৪৮ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮৭ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছিল। এটি ৮টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফ্লাইটটি পুনরায় ফিরে এসে ৮টা ৫৮ মিনিটে শাহ আমানত বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, বিমানটি বিমানবন্দরের বে নম্বর-৮-এ অবস্থান করছে। ফ্লাইটের সব যাত্রীর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্য একটি ফ্লাইট বিজি ১২২-এ অনবোর্ড সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুবাই থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিমানের ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ৫০ আরোহীর সবাই নিহত
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাশিয়ায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি অ্যান-২৪ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রাথমিক খবরে জানানো হয়েছে, কেউই বেঁচে নেই। সিভিল ডিফেন্স, জরুরি ও দুর্যোগবিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছে, অ্যান-২৪ বিমানটি পরিচালনা করছিল সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারা। প্রথমে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সি বলেছে, চীনের কাছাকাছি আমুর অঞ্চলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মতো দৃষ্টিসীমা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। এ কারণে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন ক্রু।
স্থানীয় জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটি গন্তব্যের কাছাকাছি থাকাকালে হঠাৎ করে রাডারের বাইরে চলে যায়। গভর্নর অরলোভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।
উড়োজাহাজটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ যাত্রী ও ছয় ক্রু ছিলেন বলে আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ আগেই জানিয়েছিলেন। যেখানে উড়োজাহাজটি ‘রাডার থেকে হারিয়ে যায়’, সেটি রাশিয়ার তাইগা বনভূমি অঞ্চলে পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত আন্তোনভ আন-২৪ উড়োজাহাজ সাধারণত যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত এই মডেলের হাজারের বেশি উড়োজাহাজ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় এখন সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছে আরটি।
সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং খারাপ দৃশ্যমানতা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সূত্র : রয়টার্স