বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মশাবাহিত জিকা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। ডাব্লিউএইচওর সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার ম্যানিলায় সংস্থার বার্ষিক আঞ্চলিক বৈঠকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভাইরাসটি আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এই অঞ্চলের মধ্যে আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া।
জিকার ঝুঁকিতে এশিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা বিশ্বে ৭০টি দেশে জিকায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমপক্ষে ১৯টি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাব্লিউএইচওর পরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেন, এখনো এই ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মশাবাহিত এই ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ডাব্লিউএইচও ব্যক্ত করার আগে থেকে অবশ্য এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে গত ১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে ১০ জনের বেশি বাংলাদেশি জিকায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরফেরত সব যাত্রীর নাম-পরিচয়সহ শারীরিক অবস্থার সার্বিক তথ্য সংরক্ষণ শুরু করা হয় বিমানবন্দরে স্থাপিত বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাম্পে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসা সব যাত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে। অবশ্য এর আরো আগে থেকেই জিকা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি ছিল। বিশেষ করে ব্রাজিল ও আফ্রিকার তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আগের মতো এখনো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসা সব যাত্রীকে তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের আওতায় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারণ অনেকের শরীরে তাৎক্ষণিক কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ নাও থাকতে পারে, কিন্তু শরীরে বয়ে আনা বাহক থেকে পরবর্তী সময়েও এর প্রকাশ ঘটতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত জিকা ভাইরাসের উপসর্গ ধরা পড়েনি। এ ছাড়া দেশে প্রবেশ করা কারো শরীরে যদি জিকা শনাক্ত হয় তবে তাদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। শনাক্ত করা রোগীদের দ্রুত ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।
একই সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের ২৩টি দেশে মশকবাহিত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশও। তবে তখন বাংলাদেশে বা প্রবাসী কোনো বাংলাদেশি জিকায় আক্রান্ত না হলেও নানামুখী সতর্কতা ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয় সরকার। পরে গত মার্চ মাসে চট্টগ্রামে জিকায় আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হন। চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফলে জিকা ইস্যুটি অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। এমনকি ঢাকায় বিমানবন্দরসহ আরো কয়েকটি স্থলবন্দরে বসানো বিশেষ স্ক্যানার অচল হয়ে পড়ে আছে। বিশেষ করে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা তিনটি স্ক্যানারের একটি অনেক দিন ধরেই নষ্ট। ফলে দুটি চালু রাখা হয়েছে, যা দিয়ে সব যাত্রীর স্ক্যান করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
সূত্র মতে, ডেঙ্গুর মতোই জিকা ভাইরাস নিয়ে এ বছরের শুরুতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থাটি ওই সময়ই গঠন করেছে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষ টিম। বেশির ভাগ দেশেই জারি করা হয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এডিস মশা ও ডেঙ্গুপ্রবণ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এ রোগ নিয়ে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জিকা আর ডেঙ্গুর বাহক ও উপসর্গ অনেকটা একই হওয়ার কারণে বাংলাদেশে এক ধরনের ভীতি তৈরি হতে পারে। তবে জিকা আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা ধরা মুশকিল। এটা মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমিত হয়। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এটা সময়মতো ধরা যায় না। যদি এ ভাইরাসের কারণে কারো জ্বর থেকে থাকে তবে পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। এ ছাড়া ডেঙ্গু আর জিকার মধ্যে পার্থক্য হলো ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটলেও জিকায় মৃত্যুর ভয় নেই। এ ক্ষেত্রে বেশি ভয় নারীদের গর্ভের সন্তান নিয়ে। বিশেষ করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত নারীদের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের মাথা ছোট হয় বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম নেয়। এ ছাড়া ডেঙ্গু আর জিকার লক্ষণও প্রায় একই। সাধারণত জ্বর, লালচে র্যাশ, শরীরে গিঁটে গিঁটে ব্যথা, চোখ লাল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। তবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের উপসর্গ সাধারণত আগে দেখা যায় না। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগ দেখা দেয়। তবে ডেঙ্গুর মতোই জিকার ঝুঁকিমুক্ত থাকতে মশা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। বিশেষ করে এডিস মশার বিস্তার রোধ ও নিধনে বেশি নজর দিতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’