<p>৬৪. আমরা আপনার রবের আদেশ ছাড়া অবতরণ করি না। যা আমাদের সামনে ও পেছনে আছে এবং যা এই দুইয়ের মাঝখানে আছে, সব তাঁরই। আর আপনার রব ভুলবার নন। (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫৪)</p> <p>তাফসির : আগের অনেক আয়াতে বিভিন্ন নবীর ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। হজরত জাকারিয়া, মুসা, ইসমাঈল ও ইদরিস (আ.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছিল। ওহির এই ধারাবাহিকতা কিছুদিন বন্ধ থাকে। এতে মহানবী (সা.) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)-কে এই মর্মে নির্দেশ দেন যে আপনি বলুন, ওহি নিয়ে আসা আমার এখতিয়ারভুক্ত নয়। আলোচ্য আয়াতে জিবরাঈল (আ.)-এর জবানে কথাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। জিবরাঈল (আ.) বলেন, আমি আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া অবতরণ করি না। এবং আল্লাহর নির্দেশেই আমি ওহি নিয়ে আসি। আমাদের সামনে-পেছনে এবং মধ্যবর্তী তথা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ—সব বিষয়ে তিনি অবহিত। আল্লাহর কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। তাঁর কাছে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। তিনি সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবহিত। তিনি অতীতের কোনো কিছু ভুলে যান না এবং ভবিষ্যতের কোনো ঘটনাও তাঁর অজানা নয়।</p> <p>তিনি রাসুল (সা.)-কেও ভুলে যাননি। বরং মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ওহি প্রেরণ করেন।</p> <p>আলোচ্য আয়াতের প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য রয়েছে অন্য আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন তা নিঝুম হয়, তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি। এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি। (সুরা : দুহা, আয়াত : ১-৩)</p> <p>ভুলে যাওয়ার প্রবণতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সুখ কিংবা শোকের বহু অনুভূতি স্মৃতিপট থেকে হারিয়ে যায়। সেগুলো চিরদিন তরতাজা থাকে না। নিজের জন্মপ্রক্রিয়াই নিজের কাছে চিরদিন অজ্ঞাত থাকে। শিশুকাল,  শৈশব ও কৈশোরের বহু কথা সে ভুলে যায়। বলা হয়ে থাকে, ‘প্রথম মানুষ প্রথম ভুলের শিকার।’ আদি পিতা আদম (আ.) নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কথা ভুলে গেছেন। এ বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য হলো, ‘আমি (আল্লাহ) এর আগে আদমের প্রতি (বিশেষ) নির্দেশ দিয়েছিলাম; কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল। আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।’ (সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ১১৫)</p> <p>স্রষ্টা আর সৃষ্টির মধ্যে এটি অন্যতম পার্থক্য যে সৃষ্টিজগৎ বিস্মৃতিপরায়ণ; কিন্তু যিনি স্রষ্টা, তিনি কোনো কিছু ভুলে যান না।</p>