<p>গত পাঁচ বছরে ওষুধ রপ্তানি বেড়ে ৪ কোটি ডলার হয়েছে, যা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। স্থানীয়ভাবে দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ উত্পাদন করে রপ্তানী আয়ে বিশাল অবদান রাখছে এই খাত। এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ববাজারেও।</p> <p>সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার ফলে এ সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ শর্ত শিথিলের সুবিধাভোগী দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ হিসেবে ওষুধ রপ্তানি করে।</p> <p>খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উত্পাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাই তৈরি পোশাক খাতের মতো ওষুধশিল্পকেও এগিয়ে নিতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ওষুধের উত্পাদন খরচ কমিয়ে আনতে দেশেই কাঁচামাল (এপিআই) উত্পাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি এপিআই পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৫০ বছরে সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ সালে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার কোটি ডলার। আর ওষুধ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/Feature/02 February/04-02-2018/Kalerkantho_18-02-02-02.jpg" style="float:left; height:293px; margin:12px; width:450px" />রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের গত ৬ মাসে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর মেয়াদে) ওষুধ খাতে রপ্তানি আয় করেছে ৫ কোটি ডলার বা ৪০০ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১১.৬৬ শতাংশ এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৬৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে খাতটি থেকে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০ কোটি ডলার। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১১-১২ অর্থবছরে খাতটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং সমাপ্ত অর্থবছরে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৯১ লাখ ডলারে। সে হিসাবে পাঁচ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ৪ কোটি ডলার বা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ সময় খাতটি কম-বেশি হলেও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে।</p> <p>ইপিবি সূত্রে জানা যায়, দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার কয়েক বছর ধরে বর্ষপণ্যের ঘোষণা দেয়। সেই হিসেবে ওই সব পণ্যের সমস্যা চিহ্নিত করে এর মান উন্নয়নে নীতি সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর ফলে বর্ষপণ্যের মান উন্নয়নের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর চামড়াকে বর্ষপণ্য হিসেবে ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়। সরকার বর্তমানে পণ্যভেদে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি প্রণোদনা দিয়ে থাকে।</p> <p>ওষুধশিল্পের বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানি ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ চুক্তির আওতায় রপ্তানিতে শর্ত শিথিল হওয়ায় স্বল্পন্নোত দেশগুলো উন্নত দেশে সহজ শর্তে ওষুধ রপ্তানি করতে পারে। ২০১৫ সালে নাইরোবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) মন্ত্রীদের সম্মেলনে এ চুক্তির নবায়ন হয়। এর ফলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) ওধুষ রপ্তানি করতে পারবে।</p> <p>ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব বলেন, দেশে বর্তমানে ডোসেজ ফর্মের উন্নত প্রযুক্তির ওষুধ তৈরি হচ্ছে। ভ্যাকসিন, ইনসুলিন, অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিভাইরাল, হরমোন স্টেরয়েড, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পরিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক উত্পাদন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের কয়েকটি ওষুধ কম্পানি ইউএস এফডিএ, ইউকে এমএইচআরএ, ইএমএ, টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, জিসিসি, এএনভিআইএসএ ব্রাজিল সনদ লাভ করেছে।</p> <p>তিনি আরো জানান, সম্প্রতি তুরস্ক, কুয়েত, শ্রীলঙ্কা, বেলারুশ, দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানির চুক্তি করেছে। লাইসেন্সিং চুক্তি করে বাংলাদেশের কারখানায় উত্পাদন করে ওষুধ নিতে চায় জাপানি উদ্যোক্তারাও।</p> <p>বিশ্ব বাজারে আমাদের কদর বেড়েছে উল্লেখ করে ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘পৃথিবীর ১৫০টি দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি করছে। আমরা আশা করছি ওষুধ রপ্তানি করে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পোশাক খাতের কাছাকাছি চলে যেতে পারব।’ বর্তমান বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার ধরতে মনোযোগ দিচ্ছে সবাই।</p> <p>তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই রপ্তানিতে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মুন্সীগঞ্জের এপিআই পার্ক পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধশিল্পের কাঁচামালের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না এবং দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতেও সময় লাগবে না।</p> <p>জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ হাজার ৩৩৮টি ছোট-বড় ওষুধ উত্পাদনকারী কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে বেক্সিমকো, স্কয়ার, গ্লাক্সো, রেনেটা, ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার, এসকেএফ, সেনডোজসহ বেশ কিছু কারখানায় আন্তর্জাতিকমানের ওষুধ উত্পাদিত হয়। দেশের উন্নতমানের ৫৪টির বেশি কম্পানি আছে যারা অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৩০৩টি গ্রুপের ওষুধ রপ্তানি করে।</p> <p>খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বে বর্তমানে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ বাজার ধরা গেলে এ খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দেশের ওষুধের গুণগত মান ভালো এবং অন্য দেশের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এটা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা। এ জন্য সরকারের নজরদারি বাড়ানো একই সঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তাঁরা।</p>