পবিত্র রমজান মাসে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন আর তা নেই। ঈদের পর থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে চিকন চাল (মিনিকেট), মোটা চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, ফার্মের মুরগির ডিম—এই পাঁচটি পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে সংগতি না থাকায় খাদ্যপণ্যের চড়া দামে চাপে পড়েছেন ভোক্তারা।
খাদ্যপণ্যে ক্রেতার হাঁসফাঁস
সজীব আহমেদ

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্রিয়তা ধারাবাহিক নয়। ভোক্তারা এতে পণ্যের বাজারে প্রত্যাশিত সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এবং রাজধানীর খুচরা বাজারের ২৮ এপ্রিল ও গত ২৮ ফেব্রুয়ারির বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত দুই মাসের ব্যবধানে খুচরায় প্রতি কেজি চিকন চাল (মিনিকেট) ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে মানভেদে কেজি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মোটা চাল ব্রি-২৮ বা পাইজাম এই সময়ের ব্যবধানে ৭ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে এক লিটার ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
বাজারে সবজির দাম এখন বেশ চড়া। গতকাল রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেশির ভাগ সবজি ৮০ টাকা কেজি। কিছু সবজির দাম শতক ছাড়িয়েছে। বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০, ঝিঙা ১০০ থেকে ১২০, করলা ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৮০, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ৯০, শজনে মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০, ঢেঁড়স ৮০, টমেটো ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, গাজর ৫০ থেকে ৭০, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৪০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ এবং দেশি শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লম্বা লাউ ৭০ থেকে ৮০ এবং চালকুমড়া ৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বাজারে চাল, তেল ও সবজির চড়া দামে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যেতে পারে। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়ে। কয়েক অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে।
দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমের মধ্যেই ঈদের পরপরই হঠাৎ কেজিতে এক লাফেই ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই মাস আগের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে যে হারে দাম বাড়ছে, তা অস্বাভাবিক। আবার বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে।
রাজধানীর রামপুরার খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল বারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ী মজুদ বাড়িয়ে কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন।’
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সাইফুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজানে সবজির ভরা মৌসুম ছিল। তাই তখন বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহের কারণে দামও ক্রেতার নাগালে ছিল। এখন সবজির অফ সিজন চলছে, তাই বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। তাই পাইকারি বাজারেও দাম বাড়তি।’
বাড্ডার কাঁচাবাজারে রেবা সুলতানা নামের এক গৃহিণী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের পর সরকার বাজারের দিকে নজর কমিয়ে দিয়েছেঅ এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাঁদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ঈদের আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সবজিগুলো এখন ৮০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। এদিকে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু ভোক্তাদের বাড়তি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। মাঝে লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।’
মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোলাইমান শেখের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানে এ একই পদে চাকরি করছি। এই সময় আমার বেতন বেড়েছে মাত্র সাত হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বাসাভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল ও খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন পরিবার নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয়।’
ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। এর পেছনে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য।’
ভোক্তার নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রমজান শেষ হওয়ার পর থেকে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন গ্রীষ্মকালের সবজি ঝিঙা, করলা, পটোল ও চিচিঙ্গার দাম আকাশচুম্বী। গত বছর এই সময় এসব সবজির দাম প্রায় অর্ধেক ছিল। ভোক্তার আরো কষ্টের কারণ সম্প্রতি হঠাৎ করে তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে যাওয়া। সরকারকে দ্রুত বাজার তদারকিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
সম্পর্কিত খবর

গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক

জরুরি ভিত্তিতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার আবেদন জানালেও শেখ হাসিনার সরকার তা আমলে নেয়নি।
রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নে শায়রুল কবির বলেন, ‘আশা করছি, জরুরি পরীক্ষা শেষে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসবেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা
নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ
- পুরুষদের জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে
যৌন হয়রানির অভিযোগ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত কমিটির কাছে পাঠাতে হবে
নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী ধরনের পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা হাতা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে। পরতে হবে ফরমাল জুতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যাংকে নবীন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে, যাঁদের অনেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ধারাবাহিকতায় চলাফেরা করছেন। অফিসে এক ধরনের পেশাদার সাম্য ও ঐক্য নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক।
আরিফ হোসেন খান আরো বলেন, ‘কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, বরং অফিস-সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত পরিসরে কে কী পোশাক পরবেন, সেটা একান্তই তাঁদের বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) একটি বিভাগীয় মাসিক সভার এজেন্ডা ও কার্যবিবরণীতে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেসব সিদ্ধান্তের একটি ছিল পোশাক নিয়ে। গৃহীত সিদ্ধান্তের ১১(ঘ) নম্বরে বলা হয়, বাংলাদেশ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সি ও ডি শ্রেণিভুক্ত কর্মচারীর নির্ধারিত পোশাক ব্যতীত) সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে। যেমন—পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ফরমাল শার্ট লম্বা হাতা বা হাফ হাতা, ফরমাল প্যান্ট (জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে) এবং ফরমাল জুতা। মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না, অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে (শর্ট স্লিভ ও লেন্থের ড্রেস, লেগিংস পরিহার করতে হবে) ও ফরমাল স্যান্ডেল-জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ-হিজাব।
১১ ক্রমিক নম্বরে আরো তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১(ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩-এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ-১-এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১(খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১(গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত


ফিরে দেখা ২৪ জুলাই ২০২৪
কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাত ১২টায় সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। দুই দিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এতে করে কারফিউ শিথিলের সময়ও প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ানো হচ্ছিল। ১৯ জুলাই কারফিউ জারির পর ২৪ জুলাই প্রথমবারের মতো টানা সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়।
দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকায় এবং অফিস খোলায় এদিন নগরবাসীর জীবনে অনেকটা স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও টানা কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর এদিন সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা ছিল।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায় এদিন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি।
রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এদিন অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয় সড়কের। এদিন দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। টানা পাঁচ দিন পর এদিন চার ঘণ্টার জন্য সচিবালয় খোলা হলেও সচিবালয়ে প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। অন্য সময়ের তুলনায় নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল জোরদার। সচিবালয়ের সামনে সেনা সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। প্রবেশপথে ছিল বাড়তি পুলিশ।
টানা তিন দিন পর ব্যাংক খোলায় টাকা তোলার চাপ বাড়ে রাজধানীর ব্যাংকগুলোতে। এটিএম বুথে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সকাল ১১টা থেকে লেনদেন শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে সীমিত পরিসরে সেবা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকে অর্থ লেনদেন ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম তেমন হয়নি।
এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে। সমৃদ্ধির পথে দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের হামলা করতে পারে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি অচল অবস্থা তৈরির জন্য স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি শক্তি ও জঙ্গিরা একত্র হয়ে এ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটিয়েছে। আমরা কোনো সময়ই দেখিনি থানা ভবন আক্রমণ করতে, কারাগার আক্রমণ করতে।’
পরদিন থেকে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা : পরদিন ২৫ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে শুরুতে আন্তনগর ট্রেন চালানো হবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের লোকাল-কমিউটার ট্রেন চলবে বলে জানায় রেলওয়ে।