ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

নীরবে ডুবছে পুঁজিবাজার

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
নীরবে ডুবছে পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করার আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। উল্টো দিনে দিনে পুঁজি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকার পতনের পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। কিন্তু সেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এখন পথে নেমেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে চলা পতন থামছে না কোনো উদ্যোগেই। চলমান অস্থিরতার মধ্যে ভালো কম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়াকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে দরপতনের প্রধান কারণ হচ্ছে আস্থার অভাব। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে কেনা শেয়ার বিক্রি (ফোর্সড সেল), নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অস্থিরতাসহ নানা কারণে অনেকে বাজার ছাড়ছেন।

ভালো ব্যাংকগুলো এখন আমানতের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশের ওপরে সুদ দিচ্ছে, অন্যদিকে ট্রেজারি রেটও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর প্রভাবে শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ সরে গেছে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একসময় পুঁজিবাজারে ৩৩ লাখ সক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিলেন, এখন তা নেমেছে ১২ লাখে।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার, যার জের ধরে দেশের ব্যাংক খাতসহ কয়েকটি খাতে উন্নতি দৃশ্যমান।

কিন্তু এখনো পুঁজিবাজারে সংস্কারের কোনো প্রভাব নেই। তাই আস্থার সংকট কাটেনি। এখন আস্থা ফেরানোর বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে মুখ্য। পুঁজিবাজার যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের পদক্ষেপ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে সূচক দুই মাস ধরে নিম্নমুখী অবস্থানে আছে।

যদিও আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সূচকের সাময়িক উত্থান হয়েছিল। সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সংকটেরও যেন কোনো সমাধান নেই। এ কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সর্বশেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ৫০ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা ৯ কর্মদিবস ধরে এই প্রধান সূচকের পতন চলছে। এই ৯ কর্মদিবসে প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ২৩৩ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার পয়েন্টের ঘরে নেমে এসেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৬৭ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৫.৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৫২৪ পয়েন্টে। সিএসইতে সাত কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার আট মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮০২.৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে। বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন।

এদিকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে অপসারণের দাবিতে প্রায়ই রাজধানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন।

বিক্ষোভকালে বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন ঘটছে এবং প্রতিদিন বিনিয়োগকারীরা তাঁদের শেয়ার ফোর্সড সেলে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের বিনিয়োগের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হারিয়ে গেছে। এখন তাঁদের কোনো আস্থা নেই বর্তমান নেতৃত্বে। তাঁদের এখন মূল দাবিই হলো বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, পদত্যাগ করলেই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে।

চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিএসইসিতে সম্প্রতি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, শেয়ারবাজারের সঙ্গে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি জড়িত। দেশে বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থায় আছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বল্পকালীন সরকার থাকে, ততক্ষণ বিনিয়োগকারীরা নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশে তেমন বিনিয়োগ হয় না। বিনিয়োগ যদি না হয়, মানুষ ব্যবসা সম্প্রসারণ না করে, তাহলে পুঁজিবাজার গতিশীল থাকবে না। এতে ভালো আইপিও আসবে না, ব্যবসা ভালো না চললে লভ্যাংশও ভালো আসবে না। এ রকম পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না। হবে হয়তো, তবে তার জন্য সময় লাগবে।

বিএসইসির এই সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, অত্যন্ত সংবেদনশীল এই বাজারকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছুটা তাড়াহুড়াও করেছে। এটি আগে থেকে আস্থা সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমিয়েছে। এর প্রভাবেও শেয়ারবাজারের পতন হচ্ছে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, চলমান দরপতনের মূলে আছে ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়া। সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের সুদের হার বাড়ানোও এর অন্যতম কারণ। ব্যাংকে হতাশা ছড়ানোর কারণে কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমে গেছে। আমাদের তালিকাভুক্ত কম্পানির ৪০ শতাংশই হলো ব্যাংক। এই কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন ত্বরান্বিত হয়েছে।

শাকিল রিজভী বলেন, আগে বন্ডের সুদের হার ছিল ৬ শতাংশ। এখন তা বাড়িয়ে ১১-১২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে শেয়ারবাজারে চাপ পড়বেই। আগের সরকারের সমর্থিত যাঁরা ব্যবসায়ী ছিলেন তাঁদের ওপরও চাপ বেড়েছে। তাঁদের কম্পানিগুলো ভালোভাবে চলছে না। অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যা এড়িয়ে গেলে চলবে না। অর্থনীতি সংস্কারের কাজ চলছে। সংকটগুলো ধীরে ধীরে কাটছে। পুঁজিবাজার দেশের পরিস্থিতির বাইরে নয়, আশা করি, দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতিও ভালো হবে। পুঁজিবাজারে উন্নতি না হোক কিন্তু প্রতিদিন কমে যাবে কেনএটাই আশাঙ্কার বিষয়। আস্থার ঘাটতি যদি থাকে তাহলে তা ফেরাতে স্টেকহোল্ডারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর আস্থার ঘাটতি থাকলে চলবে না। 

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে যাচ্ছে, ডলারের বাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কম, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে, সুদের হারও বাড়তি। এসব কারণে ট্রেজারি বন্ড অনেক টাকা নিয়ে গেছে পুঁজিবাজার থেকে। ট্রেজারি বন্ডে তারা সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ পাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে আগ্রহ কমেছে। যারা মার্জিন ঋণ নিয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুদের হার বেশি হওয়ায় তারা লাভ করতে পারছে না। তাদের অনেকে ফোর্সড সেলের শিকার হচ্ছে।

এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, মার্কেটে সরবরাহ ঠিক থাকছে না। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তেমন কিছুই করতে পারছে না। শেয়ারবাজারের অপশনগুলো কমে গেছে। আগের মতো মার্জিন ঋণ নিয়ে ট্রেডিং করে লাভ করবে, তা আর হয়ে উঠছে না। এগুলো নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। আইসিবিরও বিনিয়োগ সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু একসময় না একসময় শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। দলীয় সরকার ক্ষমতা আসার আগেই শেয়ারবাজার চাঙ্গা হতে পারে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে দরপতনের প্রধান কারণ হচ্ছে প্রচণ্ড আস্থার অভাব। বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই আস্থা ধরে রাখতে পারছেন না। মধ্যস্থতাকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আমরাও কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা দেখাতে পারছি না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলতে যা বোঝায় তা আমরা তৈরি করতে পরিনি। এখন এনবিএফআইও অস্তিত্ব সংকটে আছে। দু-তিনটি বাদে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন খারাপ অবস্থায় আছে। ব্যাংকের ক্ষেত্রেও ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক শুধু ভালো অবস্থানে আছে। বিনিয়োগ করার মতো খুব কমসংখ্যক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আছে।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএসইসির মূল কাজ হলো কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ এবং বাজারকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা। বাজার উন্নয়নে কোনো নীতি সহায়তা লাগলে সেটা কমিশন দিচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে বাজার যাতে স্থিতিশীল হয় তার জন্য সংস্কারকাজ চলছে। ভালো আইপিও, ভালো সিকিউরিটিজ না আসায় বিগত বছরগুলোতে বেশি বিনিয়োগকারী আসেনি। এ জন্য আমরা সহায়তা দিচ্ছি। নেগেটিভ ইকুইটি সমন্বয়ের মেয়াদ আমরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছি। আমরা আশা করছি, সংস্কারের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ

শেয়ার
ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তান সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ। গতকাল ৮ বলে ১০ রান করে ফিরে যান তিনি। তাঁর আউটের সঙ্গে দলের জয়ের সম্ভাবনাও ফিকে হয়ে যায়। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৭৪ রানে। ছবি : মীর ফরিদ
মন্তব্য

বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। তাঁর ভাষায়, আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজন হলে ডলার কিনব, আবার প্রয়োজন হলে বিক্রিও করব।

এই নীতির আলোকে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু রাখলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার মতো কৌশল গ্রহণ করছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাজারে আপওয়ার্ড সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এতে করে ডলারের রেট একদিকে পুরোপুরি বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকছে, অন্যদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত উপস্থিতিও বজায় থাকছে। এই কৌশল মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ উভয় উদ্দেশেই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার কিনেছে। গত ২৩ জুলাই এই নিলামে কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয় ১২১.৯৫ টাকা, যা আগের তুলনায় ০.৪৫ টাকা বেশি। এর মাধ্যমে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে নিলামে ডলারের রেট উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের দর দেখে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সায় এক কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গভর্নর স্যার অনেকবার বলেছেন, প্রয়োজন হলে মার্কেট থেকে ডলার কেনা হবে। আবার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ। এই নিলামে ডলারের কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১.৯৫ টাকা।

এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে ১২১.৫০ টাকা রেটে যথাক্রমে ১৭৩ ও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছিল। সব মিলিয়ে চলমান নিলাম প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ও বাজারে প্রতিক্রিয়া : শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। তবে এবার আগের মতো অনেক ব্যাংক আগ্রহ দেখায়নি। কারণ অনেক ব্যাংক ধারণা করছে, সামনে ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তারা অপেক্ষা করছে। চড়া দর সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাজারে প্রত্যাশা কিভাবে গড়ে উঠছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো চাচ্ছে, যে ডলার রয়েছে সামনে সেটা দিয়েই দায় পরিশোধ করবে। তা ছাড়া চলতি মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যে কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে তেমন আগ্রহী ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

মারুফ বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে যা উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে। এটা দিয়ে বোঝায় যে ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে গেছে এবং যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে, আসলে এত দরকার নেই।

বাজার পরিস্থিতি ও এলসির চাপ : পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি ডলারের বাজার কিছুটা টাইট। কারণ ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ডলারের বাজার স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আগের অস্থিরতা অনেকটাই কেটে গেছে, তবে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

স্পট ও আন্ত ব্যাংক বিনিময় হার : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ জুলাই স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আন্ত ব্যাংক বাজারে ডলার লেনদেন হয় ১২১.৬০ থেকে ১২২.০২ টাকার মধ্যে। শীর্ষস্থানীয় আরেক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বুধবার আন্ত ব্যাংক বাজারেই ডলারের দাম ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপওয়ার্ড সিগন্যালের ফলে আগামীকাল এটি আরো বাড়তে পারে।

আইএমএফের শর্তে বাজারভিত্তিক নীতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নির্দিষ্ট রেটে ডলার কেনে না। মে মাস থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ায় এখন নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হয়। এতে করে ডলারের মূল্য নির্ধারণে বাজার প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেরা রেট নির্ধারণ করত। এখন মার্কেট রেটেই লেনদেন হচ্ছে। এই পদ্ধতিই দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে আরো স্বচ্ছ করবে।

মন্তব্য
ফিরে দেখা ২৫ জুলাই ’২৪

মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে শিগগিরই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে বিএনপিও।

এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি করেন। অন্যদিকে এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে বলেন, আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি।

এদিকে এদিনই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রবাসী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্নমেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের জরুরি নন, এমন কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা খোলা ছিল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। কারফিউ বলবৎ থাকায় রাজধানীতে ছিল কঠোর সেনা টহল।

তবে শিথিল সময়ে অফিস-আদালত, বাজারঘাটে ফেরে কর্মচাঞ্চল্য। অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউ শিথিলের সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না।

ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার, ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সব ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উত্খাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে ২৩ জুলাই (২০২৪) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ। বিবৃতিতে ৯১ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সহযোগিতা, রংপুরের আবু সাঈদসহ নিহত সবার কবর জিয়ারত, রুহের মাগফিরাত কামনা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো।

২৫ জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ জরুরি চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে না পারায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি তারা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আরেক অংশের একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পরদিন ২৬ জুলাই বাদ জুমা সারা দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা ও শোক মিছিল করা হবে।

নিহত ১৭০ জনের বেশি, আহত হাজারের বেশি জাতিসংঘ : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হালনাগাদ তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং হাজারের বেশি আহত হয়েছে। তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও তরুণদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পর অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত এবং আরো অনেকের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক শ লোকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিনই এক যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ জবাবদিহির আহবান জানান জাতিসংঘের ১৩ জন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বাংলাদেশে সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে তা বন্ধ করার আহবান জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিচার চাইলেন জনগণের কাছে : এদিন সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঘুরে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁকে চোখের পানি মুছতেও দেখা যায়। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।

মামলা ও গ্রেপ্তার : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র দিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে এদিনও অভিযান অব্যাহত ছিল। এদিন বিকেলে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য
প্রসঙ্গ শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা
সেখ বশির উদ্দিন

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা বাসসকে এই তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেয়।

বাণিজ্যসচিব জানান, ইউএসটিআর ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছে।

ওই দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের অফিসে আলোচনা শুরু হবে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। সাক্ষাতে আলোচনা হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ২৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে আলোচনা ভার্চুয়াল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই দফায় বেসরকারি খাতের কয়েকজন রপ্তানিকারক বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকতে পারেন। তবে তাঁরা সরকারি পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার হ্রাস করবে। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে।

ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা এখন পর্যন্ত ভালোভাবে এগিয়েছে, তাই বাংলাদেশও উল্লেখযোগ্য শুল্কছাড় পেতে পারে।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে মার্কিন পণ্য, যেমনতুলা, গম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিমান ও অন্যান্য কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশ ২০ জুলাই মার্কিন গম সরবরাহকারীদের সঙ্গে সাত লাখ টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো কাজ করা হবে না।

আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একটি অনলাইন মিটিং রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করব। এই নেগোসিয়েশনের জন্য সরকার লবিইস্ট নিয়োগ করেনি বলেও জানান তিনি।

শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রচারণা নাকচ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আমরা কেন এমন কাজ করব? তাহলে তো আন্ত মন্ত্রণালয় মিটিংয়ের দরকার হয় না। কিছু জিনিস মেনে নিয়ে কাজটা করে ফেললেই তো হয়ে যায়। সম্পূরক শুল্কের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোতে লবিইস্ট নিয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ