ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঝুঁকিতে এয়ারলাইনসের বিনিয়োগ

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
ঝুঁকিতে এয়ারলাইনসের বিনিয়োগ

বড় স্বপ্ন নিয়ে কার্যক্রম শুরুর পর টিকে থাকতে পারছে না বেসরকারি এয়ারলাইনস। একের পর এক দেউলিয়ার খাতায় নাম লেখাচ্ছে এসব সংস্থা। গত ২৮ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে এক ডজন বেশি দেশি এয়ারলাইনস। নতুন করে নভোএয়ারের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খাতটির বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বিমান চলাচল খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বেসরকারি এয়ারলাইনসের জন্য আইনকানুন ব্যবসাবান্ধব নয়। অসম প্রতিযোগিতা, আর্থিক সক্ষমতা, জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, উচ্চমাত্রার এরোনটিক্যাল ও নন-এরোনটিক্যাল চার্জ দিয়ে লাভজনক হতে না পেরে কার্যক্রম বন্ধ করেছে কিছু বেসরকারি এয়ারলাইনস।

এয়ারলাইনসের উদ্যোক্তারা বলছেন, অতিরিক্ত সারচার্জের কারণে অনেক এয়ারলাইনস দেনা শোধ করতে পারছে না।

দেনার চাপে তারা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে সারচার্জ দিয়ে পাওনা পরিশোধের নিয়ম অনেক দেশেই আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেবিচকের হার অনেক বেশি।

এ ছাড়া নীতি সহায়তা, আর্থিক সক্ষমতার অভাব, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, যুগোপযোগী ব্যাবসায়িক কৌশলের অভাবসহ নানা কারণে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইনস।

আর বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সক্ষমতার ঘাটতি কাজে লাগিয়ে দেশের এভিয়েশনশিল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ দখল করে আছে বিদেশি এয়ারলাইনস।

জানা যায়, দেশে প্রথম ১৯৯৫ সালে বেসরকারি এয়ারলাইন্স অ্যারো বেঙ্গলকে আকাশপথে চলাচলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও ১৯৯৮ সালেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ২০০০ সালে অপারেশন শুরু করে এয়ার বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

এ ছাড়া এয়ার পারাবত, জিএমজি এয়ারলাইনস, রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, মিড এশিয়া এয়ারলাইনস, বিসমিল্লাহ এয়ার, টিএইচটি এয়ার সার্ভিসেস, ভয়েজার এয়ারলাইনস বাংলাদেশ, জুম এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ টিকে থাকতে পারেনি। নতুন করে নভোএয়ার বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিপুল লোকসানে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার বদলে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে মালিকেরা যেমন বড় ধরনের লোকসান থেকে বাঁচবেন, তেমনি মালিকানা বদলের পর সংস্থাটি ব্যবসায় টিকে থাকবে। বিক্রির প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয়, তবে এটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি বিকল্প ভাবনায় রয়েছে তাঁদের। এজন্য নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের উড়োজাহাজসহ অন্যান্য সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিমান সংস্থাটির উড়োজাহাজগুলো নিরীক্ষা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের বিমান পরিবহনসেবা এখনো চলমান। তবে আমরা আমাদের উড়োজাহাজ ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে স্থানীয় বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রির মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরের। যদি বিক্রি হয় তাহলে নভোএয়ার টিকে থাকবে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এয়ারলাইনস বন্ধ হওয়ার মিছিল যত দীর্ঘ হবে, বাংলাদেশের এভিয়েশন তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেসরকারি বিমান সংস্থার মধ্যে গত ২৮ বছরে বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক। এর মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চষে বেড়ানো জিএমজি এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও বেস্ট এয়ার উল্লেখযোগ্য। এখন চালু আছে তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। এর মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ইউএস-বাংলা স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নবপ্রতিষ্ঠিত এয়ার অ্যাস্ট্রা প্রায় দুই বছরের বেশি সময় পার করলেও সঠিক গন্তব্যে এখনো যেতে পারেনি। আরেকটি এয়ারলাইনস নভোএয়ার নিয়ে নানা গুঞ্জনের ডালপালা ছড়ালেও সামনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার দশম বছরে আগাম ঘোষণা ছাড়াই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। বন্ধ হওয়ার সময় এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানটির কাছে বেবিচকের পাওনা ছিল ৫৫ কোটি টাকা। তবে বকেয়া সারচার্জ যুক্ত হয়ে পাওনা গিয়ে ঠেকে ৩৫৫ কোটি টাকায়। এয়ারলাইনসটি চালু করতে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে নতুন সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক বসায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এভিয়েশন ও ভ্রমণ বিষয়ক সাময়িকী বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমকে পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ আর আলোর মুখে দেখেনি।

এদিকে ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করা জিএমজি এয়ারলাইনস ২০১২ সালে এসে বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লাইট বন্ধের কারণ হিসেবে তারা জেট ফুয়েলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং নতুন ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা নেওয়ার উদ্যোগ-এর কথা জানায়।

অন্যদিকে ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ছিল ২৮৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালে আবারও ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল সংস্থাটি। সে সময় বেবিচকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন রিজেন্টের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আশিস রায় চৗধুরী। দেনার বিষয়ে তাঁরা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন। তবে বেবিচক কোনোভাবেই মোটা অঙ্কের বিলে ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল না। তাই আর ফিরতে পারেনি চট্টগ্রামভিত্তিক বনেদি ব্যবসায়ী গ্রুপ হাবিব গ্রুপের মালিকানাধীন সংস্থাটি।

বেশ কয়েকটি দেশের সিভিল এভিয়েশনের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে সারচার্জ ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১২ শতাংশ, ওমানে ১০ শতাংশ এবং পাশের দেশ ভারতে প্রতিষ্ঠানভেদে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ, পাকিস্তানে আন্ত ব্যাংকিং এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর ২ শতাংশ। বর্তমানে বেবিচকের বকেয়ার ওপর মাসে ৬ শতাংশ হারে বছরে সারচার্জ দিতে হয় ৭২ শতাংশ।

দেশের এভিয়েশন বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত এ সারচার্জে দেনার চাপে অনেক এয়ারলাইনস দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।

এভিয়েশন বিশ্লেষক এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের (পুনর্গঠিত) সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের বিমান চলাচল আইনকানুন বেসরকারি খাতবান্ধব নয়। হানিমুন পিরিয়ড শেষ করে বিগত দিনে তাই অনেক এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। তারা সরকারের পলিসি সাপোর্ট পায়নি। ৭২ শতাংশ সারচার্জ হওয়ায় প্রত্যেকটি এয়ারলাইনসের কাছে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওনা আছে সরকারের। সিভিল এভিয়েশন এই টাকা আদায় করতে পারে না। এক পর্যায়ে এয়ারলাইনস তার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। যত দিন পর্যন্ত এভিয়েশন পলিসি ব্যবসাবান্ধব না হবে তত দিন আমাদের দেশে বেসরকারি এয়ারলাইনস টিকবে না। আর তারা টিকে না থাকতে পারলে বাজার আরো দখলে যাবে বিদেশি এয়ারলাইনসের।

নভোএয়ারের এমডি বলেন, আমাদের দেশে এয়ারলাইন্সের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদ হার বেশি। ঢাকায় উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের দাম অতিরিক্ত। আন্তর্জাতিক পথে যে দামে জেট ফুয়েল কেনা যায়, অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে একই তেল কিনতে বেশি টাকা বেশি দিতে হয়। সারচার্জ ও তেলের দামের এ বৈষম্যের জন্য ব্যবসা করা কঠিন। তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে গেছে অথচ বাংলাদেশে কমেনি। এত খরচ দিয়ে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের উচ্চ পরিচালন ব্যয় যাত্রীদের ওপর চাপাতে পারছি না, কারণ তা অনেকের জন্য সাশ্রয়ী হবে না। যাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া দিয়ে ভলিউম বাড়িয়ে ব্যয় নির্বাহের চেষ্টা করছি। আমাদের বিনিয়োগকারীরা ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর অন্যান্য লাভজনক খাতে না গিয়ে সেবা মূলক এই শিল্পে এসেছেন। কিন্তু তারা কতোদিন লোকসান গুনবেন।

বেসরকারি বিমান সংস্থা টিকিয়ে রাখতে পাঁচ দফা দাবি : অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি এয়ারলাইনগুলো টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)। এর মধ্যে আছে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, সাশ্রয়ী জ্বালানি তেলের জোগান, উচ্চ কর রহিত করা, যৌক্তিক সারচার্জ নির্ধারণ এবং অসম প্রতিযোগিতার অবসান ঘটানো।

তীব্র প্রতিযোগিতায় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোকে টিকে থাকার জন্য সারচার্জ, এয়ারপোর্টের চার্জ, জ্বালানি খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এভিয়েশন খাত বিশ্লেষক উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এভিয়েশন খাতে দেশিয় এয়ারলাইনসের অংশ খুব কম। সেটা মাত্র ২২ থেকে ২৫ শতাংশ। বাকি ৮৫ শতাংশই বিদেশি এয়ারলাইনসের দখলে। আমাদের উচিত ছিল এটা আরো বাড়ানো।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে এখন বিদ্যমান এয়ারলাইনসগুলো ঠিকমতো চলছে। এর পরও আমাদের দিক থেকে কোনা অসুবিধা থাকলে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো আমাদের সঙ্গে বসতে পারে, তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারে। আমরা যেসব সমস্যার কথা জেনেছি, সেগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। আমরা চাই, দেশের এভিয়েশন খাত আরো বিকশিত হোক, আরো এয়ারলাইনস আসুক, টিকিটের দাম আরো কমুক। আমরা আইকাওয়ের নিয়ম অনুযায়ী এভিয়েশন খাতের নিয়মকানুন যতটা বিনিয়োগবান্ধব করা যায়, সেটা করার চেষ্টা করছি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ

শেয়ার
ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তান সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ। গতকাল ৮ বলে ১০ রান করে ফিরে যান তিনি। তাঁর আউটের সঙ্গে দলের জয়ের সম্ভাবনাও ফিকে হয়ে যায়। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৭৪ রানে। ছবি : মীর ফরিদ
মন্তব্য

বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। তাঁর ভাষায়, আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজন হলে ডলার কিনব, আবার প্রয়োজন হলে বিক্রিও করব।

এই নীতির আলোকে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু রাখলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার মতো কৌশল গ্রহণ করছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাজারে আপওয়ার্ড সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এতে করে ডলারের রেট একদিকে পুরোপুরি বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকছে, অন্যদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত উপস্থিতিও বজায় থাকছে। এই কৌশল মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ উভয় উদ্দেশেই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার কিনেছে। গত ২৩ জুলাই এই নিলামে কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয় ১২১.৯৫ টাকা, যা আগের তুলনায় ০.৪৫ টাকা বেশি। এর মাধ্যমে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে নিলামে ডলারের রেট উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের দর দেখে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সায় এক কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গভর্নর স্যার অনেকবার বলেছেন, প্রয়োজন হলে মার্কেট থেকে ডলার কেনা হবে। আবার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ। এই নিলামে ডলারের কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১.৯৫ টাকা।

এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে ১২১.৫০ টাকা রেটে যথাক্রমে ১৭৩ ও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছিল। সব মিলিয়ে চলমান নিলাম প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ও বাজারে প্রতিক্রিয়া : শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। তবে এবার আগের মতো অনেক ব্যাংক আগ্রহ দেখায়নি। কারণ অনেক ব্যাংক ধারণা করছে, সামনে ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তারা অপেক্ষা করছে। চড়া দর সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাজারে প্রত্যাশা কিভাবে গড়ে উঠছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো চাচ্ছে, যে ডলার রয়েছে সামনে সেটা দিয়েই দায় পরিশোধ করবে। তা ছাড়া চলতি মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যে কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে তেমন আগ্রহী ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

মারুফ বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে যা উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে। এটা দিয়ে বোঝায় যে ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে গেছে এবং যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে, আসলে এত দরকার নেই।

বাজার পরিস্থিতি ও এলসির চাপ : পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি ডলারের বাজার কিছুটা টাইট। কারণ ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ডলারের বাজার স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আগের অস্থিরতা অনেকটাই কেটে গেছে, তবে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

স্পট ও আন্ত ব্যাংক বিনিময় হার : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ জুলাই স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আন্ত ব্যাংক বাজারে ডলার লেনদেন হয় ১২১.৬০ থেকে ১২২.০২ টাকার মধ্যে। শীর্ষস্থানীয় আরেক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বুধবার আন্ত ব্যাংক বাজারেই ডলারের দাম ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপওয়ার্ড সিগন্যালের ফলে আগামীকাল এটি আরো বাড়তে পারে।

আইএমএফের শর্তে বাজারভিত্তিক নীতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নির্দিষ্ট রেটে ডলার কেনে না। মে মাস থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ায় এখন নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হয়। এতে করে ডলারের মূল্য নির্ধারণে বাজার প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেরা রেট নির্ধারণ করত। এখন মার্কেট রেটেই লেনদেন হচ্ছে। এই পদ্ধতিই দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে আরো স্বচ্ছ করবে।

মন্তব্য
ফিরে দেখা ২৫ জুলাই ’২৪

মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে শিগগিরই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে বিএনপিও।

এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি করেন। অন্যদিকে এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে বলেন, আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি।

এদিকে এদিনই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রবাসী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্নমেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের জরুরি নন, এমন কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা খোলা ছিল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। কারফিউ বলবৎ থাকায় রাজধানীতে ছিল কঠোর সেনা টহল।

তবে শিথিল সময়ে অফিস-আদালত, বাজারঘাটে ফেরে কর্মচাঞ্চল্য। অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ক্রমে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউ শিথিলের সময়সীমা দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না।

ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার, ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সব ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উত্খাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে ২৩ জুলাই (২০২৪) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ। বিবৃতিতে ৯১ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সহযোগিতা, রংপুরের আবু সাঈদসহ নিহত সবার কবর জিয়ারত, রুহের মাগফিরাত কামনা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো।

২৫ জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ জরুরি চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে না পারায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি তারা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আরেক অংশের একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পরদিন ২৬ জুলাই বাদ জুমা সারা দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা ও শোক মিছিল করা হবে।

নিহত ১৭০ জনের বেশি, আহত হাজারের বেশি জাতিসংঘ : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হালনাগাদ তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং হাজারের বেশি আহত হয়েছে। তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও তরুণদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পর অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত এবং আরো অনেকের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক শ লোকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিনই এক যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ জবাবদিহির আহবান জানান জাতিসংঘের ১৩ জন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বাংলাদেশে সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে তা বন্ধ করার আহবান জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিচার চাইলেন জনগণের কাছে : এদিন সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঘুরে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁকে চোখের পানি মুছতেও দেখা যায়। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।

মামলা ও গ্রেপ্তার : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র দিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে এদিনও অভিযান অব্যাহত ছিল। এদিন বিকেলে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য
প্রসঙ্গ শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা
সেখ বশির উদ্দিন

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা বাসসকে এই তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেয়।

বাণিজ্যসচিব জানান, ইউএসটিআর ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছে।

ওই দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের অফিসে আলোচনা শুরু হবে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। সাক্ষাতে আলোচনা হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ২৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে আলোচনা ভার্চুয়াল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই দফায় বেসরকারি খাতের কয়েকজন রপ্তানিকারক বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকতে পারেন। তবে তাঁরা সরকারি পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন না।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার হ্রাস করবে। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে।

ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা এখন পর্যন্ত ভালোভাবে এগিয়েছে, তাই বাংলাদেশও উল্লেখযোগ্য শুল্কছাড় পেতে পারে।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে মার্কিন পণ্য, যেমনতুলা, গম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিমান ও অন্যান্য কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশ ২০ জুলাই মার্কিন গম সরবরাহকারীদের সঙ্গে সাত লাখ টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো কাজ করা হবে না।

আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একটি অনলাইন মিটিং রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করব। এই নেগোসিয়েশনের জন্য সরকার লবিইস্ট নিয়োগ করেনি বলেও জানান তিনি।

শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রচারণা নাকচ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আমরা কেন এমন কাজ করব? তাহলে তো আন্ত মন্ত্রণালয় মিটিংয়ের দরকার হয় না। কিছু জিনিস মেনে নিয়ে কাজটা করে ফেললেই তো হয়ে যায়। সম্পূরক শুল্কের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোতে লবিইস্ট নিয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ