ঋণের উচ্চ সুদ, জ্বালানির উচ্চমূল্য, অতিমূল্যায়িত ডলার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ নিয়ে রপ্তানি বাজারেও নানা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। শুধু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কমে আসা মূল্যস্ফীতি ১২.৬৭ শতাংশ ছাড়ানোর শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
ব্যবসা-বিনিয়োগে সংকট বাড়ছে
মাসুদ রুমী

শিল্প-কারখানার উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে টিকবে না শিল্প খাত। নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও পড়বে ঝুঁকিতে। বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রপ্তানি শিল্পে।
তাঁরা বলেছেন, শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোয় পুরো শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেশের বেসরকারি খাতভিত্তিক থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন বৈশ্বিক কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যমান, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, রপ্তানি বাজারে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ ঘাটতি, জ্বালানির অনির্ভরযোগ্যতা, যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যমূলক শুল্কারোপ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা শিল্প খাত এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকটাই নিরুৎসাহী হবে।
মূলধনী যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য একটি অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি এগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উল্লিখিত পাঁচ সূচকের মধ্যে তিনটিই নেতিবাচক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নতি হয়নি। নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। এলসি খোলা কমে গেছে। এর অর্থ হলো শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো নয়। এর মধ্যে আবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ঋণের সুদহার বেশি। যেসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলোর সমাধান না হলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদের হার বাড়ার ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সামগ্রিক ব্যাবসায়িক পরিবেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এর ফলে বাজারে একটি অসম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করছে এবং শিল্পায়নের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে।’
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ‘টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের বিনিয়োগ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম, তখনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এত চড়া দামে গ্যাস বিল দিয়ে কেউ শিল্প স্থাপন করতে সাহস করবে না।’
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে উচ্চ সুদের কারণে নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহ হচ্ছেন। তাই অনেক কারখানা আংশিকভাবে উৎপাদন বন্ধ বা সীমিত করতে বাধ্য হচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, রিজার্ভ এখনো আগের অবস্থায় পৌঁছায়নি। বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। ব্যবসা পরিচালনার খরচও আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি। দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন এই জায়গায় আসন্ন বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।’
বাংলাদেশ নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে না এবং বিনিয়োগও হবে না। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও সরবরাহ কিন্তু বাড়ানো হচ্ছে না।’
উৎপাদন ব্যয় উল্লম্ফনের সম্ভাবনা : বিল্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অন্য সব কিছু অপরিবর্তিত থাকলেও শুধু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূল্যস্ফীতি ১২.৬৭ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিল্পে মোট উৎপাদন ব্যয়ের ১০ শতাংশ জ্বালানির জন্য বিবেচনা করলে এবং মূল্য সংযোজনের হার ২৬ শতাংশ ধরে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্যের দাম ৮.২৩ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯.২৮ ট্রিলিয়ন টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে, যা সরাসরি ভোক্তা মূল্য সূচকে প্রভাব ফেলবে।
যা বলছে বিডা : উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলেছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ কথাগুলো জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
আশিক চৌধুরী চিঠিতে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সিদ্ধান্তে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। বিডা সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছে না। তবে ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়টি সর্বজনীন করা যেতে পারে।’ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছে বিডা।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘আমরা জ্বালানির চাহিদা এবং তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্যকাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানাচ্ছি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বৃহৎ লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি নির্ধারণের দাবি জানাই।’
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।