বিদেশি নামকরা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে দেশে একটি ‘হাই প্রোফাইল’ বিনিয়োগ সম্মেলনের পরপরই আবার চড়ল গ্যাসের দাম। তা-ও কমসম নয়, শিল্প-কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগে বাড়তি গুনতে হবে ৩৩ শতাংশ। কেমন হলো ব্যাপারটা! ভেবে স্তম্ভিত দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা ঘুরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই বা কী বার্তা পেলেন? গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলোর তো প্রস্তাব ছিল ১৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর।
অভিমত
বেসরকারি বিনিয়োগই ‘ফ্যাক্টর’
- মোস্তফা কামাল

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম করা হয় ৩০ টাকা। পরে গত বছর ক্যাপটিভে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। তা দেশি-বিদেশি দুই বিনিয়োগকেই ধাক্কা দিয়েছিল।
এবারের পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। প্রেক্ষাপটেও অনেক তফাত। যাবতীয় আলোচনা-পর্যালোচনার মূলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সফরে চীন কী দিয়েছে, আরো কত কী দেবে বাংলাদেশকে—এ প্রশ্ন ঘিরে। এর পরপরই এই বিনিয়োগ সম্মেলন। এর প্রাপ্তি দৃশ্যমান হবে ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে। যেকোনো বিনিয়োগকারী দেশে-বিদেশে যেখানেই বিনিয়োগের চিন্তা করেন, প্রথমেই চান বিনিয়োগকৃত অর্থের নিশ্চয়তা। বিনিয়োগ করতে কত সময় লাগবে, বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছ থেকে কী রকম সহায়তা মিলবে, তা-ও ভাবতে হয়। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের আওয়াজ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ বিনিয়োগ করেছে কি না, সেই তথ্য থাকে না। বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের কাছেও এসংক্রান্ত তথ্য নেই। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিসহ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সেই তালিকা অনুযায়ী আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এখনো ভবিতব্য। তার পরও আশাবাদী সরকারসহ অনেকে। দেশি বা বিদেশি, বিনিয়োগ হওয়া দিয়ে কথা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনের শেষ দিনে সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে অনেক উচ্চাশার কথা জানানো হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে বিনিয়োগের একটি ‘সুযোগভূমি’ বলে জানিয়েছেন। এই সুযোগভূমি শুধু বিদেশিদের জন্য? নিশ্চয় নয়। দেশিদের জন্য মোটেই দুর্যোগভূমি নয়। তাহলে আদতে দেশি বিনিয়োগকারীরা কেন নিজ দেশের এই সুযোগভূমিতে দুর্যোগের আজাবে ভোগেন? সম্মেলনটিতে দেশি বিনিয়োগকারীদের কদর মেলেনি। হতে পারে নামে আন্তর্জাতিক বলে। স্থানিক হওয়ার পরই তো আন্তর্জাতিক। এ ছাড়া বাংলাদেশের যেসব বিনিয়োগকারী বিশ্বের দেশে দেশে বিনিয়োগ করেন সেখানে তাঁরাও বিদেশি। আন্তর্জাতিকও। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিনিয়োগকারীরা চীন-ইংলিশসহ যাঁর যাঁর ভাষায় বাংলাদেশে কারখানার লাইসেন্স, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিলম্বের কথা জানিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন পদে পদে হয়রানির কথা। দেশি বিনিয়োগকারীরা তো বাংলা ভাষায় এসব যন্ত্রণার কথা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। যন্ত্রণার ভাষা ভিন্ন হলেও বেদনা একই। বিনিয়োগ প্রশ্নে দেশি বা বিদেশি, স্থানিক আর আন্তর্জাতিক বিবেচনাও প্রায় একই। পুঁজির গ্যারান্টি উভয়ের কাছেই পয়লা নম্বর শর্ত। এরপর লাভ, রাষ্ট্রীয় নীতি সহযোগিতা, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক-সামাজিক স্থিতাবস্থা ইত্যাদি। তা একেবারে দুইয়ে দুইয়ে যোগ করলে চার হওয়া অঙ্কের মতো। যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ গোটা দুনিয়ায় একই।
বাংলাদেশের পক্ষে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, এসব ভোগান্তি ধীরে ধীরে আর থাকবে না। সরকারের আশ্বাসমতো এসব ভোগান্তি ভবিষ্যতে না থাকলে তা নিশ্চয়ই দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। তাহলে সরকারের দিক থেকে এভাবে ঘটা করে না হলেও মাঝেমধ্যেও কি দেশি বিনিয়োগকারীদের ডাকা যায় না? তাঁদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো যায় না? অভয় দিয়ে তাঁদের বিনিয়োগে উৎসাহ জোগানো যায় না? আগেও বহুবার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশের সম্ভাবনার কথা জানান দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতাটা নিদারুণ। আশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসের সংযোগ ঘটেনি। প্রচারণা সম্মেলনের গণ্ডি পার হতে পারেনি। সমান্তরাল তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশের অনেক সফল উদ্যোক্তা মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, ইউরোপে এমনকি আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পর্যন্ত বিশাল ভলিউমের বিনিয়োগ গড়ে তুলেছেন, যা এ দেশের অনেকের জানা বা ধারণারও বাইরে। সেখানে তাঁরা বিদেশি হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত। বিভিন্ন দেশে তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পাচ্ছেন। রয়েছে ব্যাবসায়িক পরিবেশের স্থায়িত্ব। পড়ছেন না প্রশাসনিক হয়রানিতে, রাজনৈতিক থাবা পার্টির কবলে। করনীতির জটিলতায় ঘুম হারাম হচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শ্রেণিকে আয়ত্ত করতে সরকারের চেষ্টার তথ্য কমের চেয়েও কম। দেশের বর্তমান সরকারটি অরাজনৈতিক। তাদের পক্ষে কিছু উদ্যোগ শুরু করা কঠিন নয়। অন্তত শুরুটা করলে ভবিষ্যৎ কোনো সরকারের পক্ষে তা অগ্রাহ্য করা সম্ভব হবে না। এ জন্য প্রথমেই দরকার সরকারের নীতি সহায়তা। কর-ব্যবস্থা সহজীকরণ ও ডিজিটাইজেশনের একটা বন্দোবস্ত আনা নিশ্চয়ই কঠিন হবে না সরকারের জন্য। অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অংশ নিয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে চাচ্ছে, তা দৃশ্যমান। বার্তাটিতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সংযুক্ত করতে বাধা কোথায়?
বর্তমান সরকারের হাতে এ-বিষয়ক একটা বিশেষ সুযোগ আছে। এ সরকারের ফটো সেশন করার দরকার পড়ে না। তাত্ত্বিকভাবে নানা কথা বলা হলেও বাস্তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে উদ্যোক্তাদের কাছে আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর। বাংলাদেশের উন্নয়নধারা আর দশটা দেশের মতো নয়। একটা বড় পার্থক্য হলো, এ দেশের উন্নয়নযাত্রায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর অবস্থান। কিন্তু সরকারের বাইরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পেছনে তাদের অবদান স্বীকার না করার একটি মানসিকতা রয়েছে। উন্নয়নযাত্রায় নতুন পথে, নতুন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির রূপরেখা দিশা পেতে তাই চলছে নানা অবান্তর-অবাস্তব কথার কচলানি। ব্যাংকের তারল্য সংকট ও উচ্চ সুদহার বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে চাপে ফেলেছে। আবার ডলার সংকটে শিল্প খাতে মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানিতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রারও সংস্থান করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশির মতো স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণও এখন দিন দিন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হলে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়াতেই হবে। পরিবেশকে বিনিয়োগবান্ধব করতেই হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, জ্বালানির সংকট, শ্রমিক-কর্মচারীদের উসকে দেওয়ার মতো ঘটনা হাড়ে হাড়ে বোঝেন শুধু ভুক্তভোগীরাই। তাঁদের বিনিয়োগ প্রবণতায় কেন পিছুটান, তা বোঝার মতো সক্ষম-যশ-খ্যাতিবান ব্যক্তিত্ব এই সরকারে অনেকে আছেন। অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হলে দেশি বা বিদেশি কোনো বিনিয়োগও শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না। স্থানিক উহ্য রেখে আন্তর্জাতিক সোপান গড়ার রেকর্ড দুনিয়ার কোথাও নেই। এ দুইয়ের মধ্যে পয়লা নম্বরে স্থানিক। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেতুবন্ধ কতটা গড়েছে, তা কিন্তু এখনো পরিষ্কার হয়নি। রয়ে গেছে কিছু প্রশ্নও।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।