<p>রানওয়ে হয়ে নির্দিষ্ট আউটার হ্যাঙারে থেমেছে বিমানের চাকা। জ্বলে উঠেছে ভেতরের বাতি। যাত্রীরা সিট বেল্ট খুলে দাঁড়িয়ে পড়েছে। লাগেজ নিয়ে নেমে আসার জন্য তৈরি তারা। কিন্তু সামনের দিকে কেউ নড়ছে না। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর অবশেষে পা চলতে শুরু করল। কিন্তু সামনের দিকে থাকা প্রায় সবাই হঠাৎ এক ঝটকায় মাথা নিচু করে ফেলল। কেউ নাচের ভঙ্গি করে এগিয়ে যাচ্ছিল। পেছনের দিকের যাত্রীরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল দমকা হাওয়ার মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ধেয়ে আসছে মশার দঙ্গল।</p> <p>গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টার কিছুটা পরে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীরা মশার এমন ভয়ানক আক্রমণের কবলে পড়ে।</p> <p>যাত্রীদের বিদায় অভ্যর্থনা জানাতে বিমানের দরজায় থাকা কর্মীরা জানান, দরজা খুললেই মশার ঝাঁক ধেয়ে এসে ঢুকে পড়ে ভেতরে। এ জন্যই কিছুটা সময় দেরি হয়েছে বিমানের দরজা খুলতে। বাসের দরজা খুলে দেওয়ার পরই তাঁরা বিমানের দরজা খুলেছেন, যাতে যাত্রীরা দ্রুত বাসে ঢুকে পড়তে পারে।</p> <p>কিন্তু বিমান থেকে নামার সময়ই কারো নাকে, কারো কানে, কারো মুখে মশা ঢুকে গেছে। এরপর যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে নিচে নেমে সিঁড়ির কাছেই দাঁড়ানো বাসে উঠতে উঠতেই চারদিক থেকে ঘিরে ধরে মশা।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিমানবালা বলেন, প্রতিদিনই সন্ধ্যার আগমনী ফ্লাইটে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে যে বিমানগুলো মূল টার্মিনালের টানেলে যুক্ত হতে পারে না সেগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটছে। বিমানের ভেতর ঢুকে পড়া মশার ঝাঁক বের করতেও বেগ পেতে হয়।</p> <p>বিমানবন্দরের মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এক বিশেষজ্ঞ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দারা প্রতিদিনই ঘরে-বাইরে মশার উৎপাতে অস্থির থাকে। মশাবাহিত রোগের ভয়ে থাকে তটস্থ। নানা রকমের স্প্রে-কয়েল ব্যবহার করে গা বাঁচানোর চেষ্টা করে মশার কবল থেকে। তবে অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে বাসা-বাড়িতে মশার উৎপাত। কিন্তু এটাকে ছাপিয়ে গেছে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি। সন্ধ্যা নামতেই রীতিমতো ঝাঁক বেঁধে মশার আক্রমণ শুরু হয়ে যায় বিমানবন্দর এলাকায়। বিশেষ করে আউটার হ্যাঙারে ওঠা-নামা করা বিমানগুলোর যাত্রীরা শিকার হচ্ছে এমন মশক আক্রমণের।’ তিনি বলেন, মশার এমন ভয়ানক উৎপাত ঠেকাতে হন্যে হতে হচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পথ খুঁজতে হয়রান সবাই।</p> <p>এরই মধ্যে মশার উৎপাত বন্ধ করতে নতুন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সিভিল এভিয়েশনকে সাত দিন সময় দিয়েছে। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সভায় গুরুত্বসহকারে উঠে এসেছে বিমানবন্দরে মশার উৎপাতের বিষয়টি।</p> <p>গতকাল বুধবার জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল এভিয়েশনকে অধিকতর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য দুই দিন আগেই এক সপ্তাহের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। এই এক সপ্তাহ পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কী ফলাফল এসেছে তা আবার পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’</p> <p>ওই কর্মকর্তা জানান, অবস্থানগত কারণেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন দিকে মশার ব্যাপক উৎস রয়েছে, যেগুলো ধ্বংস না করতে পারলে শুধু বিমানবন্দরের ভেতরে ওষুধ ছিটিয়ে খুব একটা সুফল পাওয়া যায় না। এ জন্য এখন মশার উৎস ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সব চেষ্টাই করা হবে। যদিও কারিগরি কারণে বিমানের ভেতরে মশার ওষুধ দেওয়া যায় না।</p>