বি চৌধুরী ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বি চৌধুরী ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন, পাশে মির্জা ফখরুল (বাঁয়ে) ও আ স ম রব। ছবি : কালের কণ্ঠ

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তাঁর দল বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে অবশেষে যাত্রা শুরু করল ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এই ফ্রন্টের নেতৃত্বে রয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা ড. কামাল হোসেন। বছরখানেক ধরে চেষ্টা চালানোর পর গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে সরকারবিরোধী এই বৃহত্তর জোট।

বিএনপি ছাড়াও এ জোটে আছে আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া।

নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তিসহ ঘোষিত সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে জোট থেকে।

বস্তুত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিকল্পধারার সঙ্গে একই মোর্চায় থাকা অন্য দুটি দল জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের দূরত্ব তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা থেকে দূরে সরে গেলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বি. চৌধুরী এবং তাঁর দল বিকল্পধারা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সাত দফা দাবি ও ঘোষণা পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বৈধ সরকার গঠন করতে হলে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কাজ করব।

...জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আশা করছে, আপনারা অবশ্যই আমাদের সমর্থন করবেন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য।’

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের ঘটনা তুলে ধরে কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছিলেন, বঙ্গবন্ধু তখন হেসে হেসে উত্তর দিচ্ছিলেন।...আমরাও এখন হেসে হেসে উত্তর দিচ্ছি। আমরা ভয় পাই না।

আমরা ভয়ে ভীত না। কত ট্যাংক, বন্দুক নিয়ে আমাদের ভয় দেখাবে দেখাক। আমরা ভয় পাই না। আমরা হুমকি দিয়ে কথা বলতে চাই না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নব সূচনার দিন।...আমরা এখন একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আজকে লড়াই শুরু হলো নতুন আঙ্গিকে। আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি—দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। এখনো অনেকে ঐক্যপ্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের আহ্বান করব, আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হই।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সরকার ঐক্যের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে। চক্রান্ত করতে পারে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে এসব মোকাবেলা করতে হবে। জনগণকে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো একক দলের পক্ষে এই স্বৈরাচারী দানবকে উত্খাত সম্ভব নয়।’

ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি প্রসঙ্গে রব বলেন, ‘আমরা আগামী দিনে হজরত শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেট, হজরত শাহ মখদুমের পুণ্যভূমি রাজশাহীসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালন করব। আমাদের নেতা (কামাল হোসেন) এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। আমরা কূটনীতিক, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করব।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আশার আলো হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে আমাদের পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে তা মানতে হবে। দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন এ দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য আমরা সাত দফা প্রণয়ন করেছি। আজকে যে ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো, এই স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায়ের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক একটি দিন। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আজ যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলো তা একটি মাইলফলক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণের একটিই পথ আছে, তা হলো জাতীয় ঐক্য।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা কয়েকটি সংগঠন যে চেষ্টা করছিলাম আজ তা সফল পরিণতির দিকে পৌঁছেছে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া স্বৈরতন্ত্রের দৈত্য সরানো সম্ভব নয়। আজ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই শুরু হলো।’

ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার আগে নাটকীয়তা : বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে চলা বৈঠকেই বস্তুত বিকল্পধারার সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল অন্য দলগুলোর। এর সূত্র ধরে গতকাল হঠাৎ করেই বি চৌধুরী ও ড. কামালের মধ্যে দূরত্ব দৃশ্যমান হয়। আর শেষ পর্যন্ত বি চৌধুরীকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জানা যায়, আগের দিন শুক্রবার আ স ম রবের বাসায় বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে বি চৌধুরী বেইলি রোডে ড. কামালের বাসায় যাবেন এবং তাঁরা দুজনে সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের চূড়ান্ত খসড়া শেষবারের মতো পড়ে সম্মতি দেবেন। কারণ ওই খসড়ায় ‘মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে’ এমন কথা বলা আছে। কিন্তু বিকল্পধারার দাবি ছিল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে ঐক্য হবে না—এমন কথা উল্লেখ থাকতে হবে। শনিবার দলগুলোর বৈঠকেও এ ব্যাপারে বিকল্পধারা কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে। বস্তুত ওই বক্তব্য উল্লেখ থাকলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে ইস্যুটি শনিবার শীর্ষ দুই নেতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আর দুই নেতার মধ্যে দেখা বা বৈঠকের বিষয়টি শনিবারের বৈঠক থেকেই সমন্বয় করেন গণফোরামের পক্ষে মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং বিকল্পধারার পক্ষে মাহী বি চৌধুরী। তাঁরা দুজনেই স্ব স্ব দলের প্রধান বি চৌধুরী ও ড. কামালের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার কথা বলে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই সাক্ষাতের আগেই মতিঝিলে ড. কামালের চেম্বারে বৈঠক বসে। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব এবং পরে যোগদান করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। একটি সূত্রের দাবি, বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে মান্না বৈঠকে যেতে চাননি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে বাধ্য হয়েছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আগের দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকেল ৩টার দিকে বি চৌধুরী তাঁর দলের দুই নেতা মাহী বি চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ফারুককে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বাসায় রওনা হন। পথেই তিনি ফোন করেন ড. কামাল হোসেনকে। কিন্তু ওপাশ থেকে প্রথমে তাঁর অফিসের একজন এবং পরে মোস্তফা মহসিন মন্টু ফোন ধরে বি চৌধুরীকে মতিঝিলের অফিসে যাওয়ার অনুরোধ করেন। জবাবে বি চৌধুরী প্রচণ্ড অপমানিত ও রুষ্ট হয়ে বলেন, তাঁকে দাওয়াত করা হয়েছে বাসায়, তিনি অফিসে কেন যাবেন। বি চৌধুরী ড. কামালের মতো ব্যক্তির আচরণ ও শিষ্টাচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একজন মানুষকে দাওয়াত করে এভাবে অভদ্রতা করা তার উচিত হয়নি।’ তিনি জানান, বেশ কয়েক মিনিট বেইলি রোডের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি বাসায় ফেরেন। ওই বাসার দরজা বন্ধ ছিল এবং কেউ সৌজন্যবশত এক কাপ চাও তাঁকে অফার করেননি।

তবে দায়িত্বশীল অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার আ স ম রবের সঙ্গে অধ্যাপক বি চৌধুরীর দেখা হয়েছে, যেখানে মাহী বি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় রবকে মাহী বলেন যে বিএনপির সঙ্গে কিছুতেই তিনি ঐক্য করতে দেবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁদের জবাই করবে—এমন কথাও মাহী রবকে বলেন বলে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক নেতা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন। ওই নেতার মতে, মাহীর ওই বক্তব্য বিশ্লেষণ করেই ড. কামালের বাসায় বৈঠক করে আর সময় নষ্ট না করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মাহী বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ওই ধরনের কথা তিনি বলেনি। মাহীর মতে, ঐক্য ভাঙার জন্য একেকজন এখন একেক কথা বের করছেন।

এর আগে গত ৮ অক্টোবরের বৈঠকে দুই ইস্যুতে বিকল্পধারার মেজর (অব.) মান্নানের সঙ্গে রবের তর্কবিতর্ক হয়। ইস্যু দুটির একটি হলো, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দলের সঙ্গে ঐক্য করা যাবে না। অন্যটি হলো ক্ষমতার ভারসাম্য, বিশেষ করে সংসদের আসন বণ্টন এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাতে বিএনপি কিছুতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়।

বি. চৌধুরীকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন যাঁরা : এদিকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার জন্য গতকাল ফোন করে অনেকে অনুরোধ জানান বি চৌধুরীকে। সূত্র মতে, বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী উভয়কে ফোন করে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অথবা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে, এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ এ ছাড়া আ স ম রবও বি চৌধুরীর কাছে ফোন করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে অনুরোধ করেন। তিনিও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে বি চৌধুরী বলেন, যে ঘটনা ড. কামাল হোসেন ঘটিয়েছেন তা শিষ্টাচারবহির্ভূত। পাশাপাশি যুক্তফ্রন্টের নেতা হওয়া সত্ত্বেও রব কী করে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে ওই বৈঠকে গেলেন, সে প্রশ্ন তোলেন বি চৌধুরী। এ ছাড়া মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপির দু-একজন নেতাও ফোন করে বি চৌধুরীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানা যায়।

বিকল্পধারা থেকে দুই নেতাকে বহিষ্কার : এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহসভাপতি শাহ আলম বাদল ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গতকাল বিকেলে বারিধারায় বি চৌধুরীর বাসায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের এক বৈঠকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে দলের মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান, মাহী বি চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওই দুই নেতার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৫-এর ২ (গ) ধারায় শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা অনুযায়ী তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়। এখন দুজনকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হলো। 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।

এতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এতে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে, যা জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় সমাবেশে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।

ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবেএলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।

সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।

সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী  প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং  ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।

তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।

তার মানে নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পান না। বরং আগের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁরাই ভোটাধিকার পান।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।

 

তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমনভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

প্রেস সচিব আরো বলেন, এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন। 

একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো তিনজন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

 

মন্তব্য

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা  বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়।  এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।

নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতাগণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার ছিল না।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা,  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।  সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সে সময় নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহবান করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল  সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও  ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালায়  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও এর সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার  নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। ওই সময় প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ