<p>একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লবিস্ট ফার্ম (তদবিরকারী প্রতিষ্ঠান) ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস’কে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করবে ‘র‌্যাস্কি পার্টনার’ নামের আরেক তদবিরকারী প্রতিষ্ঠান। তদবিরকারীদের আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হবে বিএনপিকে।</p> <p>সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য রয়েছে। তবে কী ধরনের দাবি আদায়ে বা লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল পলিটিকোতে গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তদবির করার জন্য বিএনপির হয়ে আবদুস সাত্তার ‘ব্লু স্টারের’ সঙ্গে চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, ব্লু স্টার গত আগস্ট মাসে ২০ হাজার মার্কিন ডলার পেয়েছে। এ বছরের বাকি চার মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্লু স্টার বিএনপির কাছ থেকে মাসে ৩৫ হাজার ডলার করে এক লাখ ৪০ হাজার ডলার পাবে। অর্থাৎ বিএনপির পক্ষে তদবিরের জন্য ব্লু স্টার পাঁচ মাসে পাবে মোট এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।</p> <p>অন্যদিকে ব্লু স্টারের সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে র‌্যাস্কি পার্টনার আগস্ট মাসে ১০ হাজার মার্কিন ডলার পেয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার করে মোট ৬০ হাজার ডলার পাবে র‌্যাস্কি পার্টনার।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বুধবারের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী (এক ডলারে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা) দুই তদবিরকারী প্রতিষ্ঠানের পেছনে বিএনপির ব্যয় হচ্ছে এক কোটি ৯২ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগে নির্বাচিত ও নিযুক্ত কর্মকর্তা, কংগ্রেস, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য, শ্রম, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রে নীতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান, সাবেক কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত, বেসরকারি খাত ও অভিবাসী সম্প্রদায়কে বার্তা পাঠানো এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরার কাজ করবে।’</p> <p>ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসের প্রতিষ্ঠাতা দুজনই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সহকারী। তাঁদের একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ কারেন ট্রামোনটানো এবং অন্যজন প্রধান কার্যক্রম পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) ক্লিনটনের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী রন ব্রাউনের সহকারী স্যালি পেইন্টার। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির মনোভাব ও বক্তব্য তুলে ধরবেন।</p> <p>ওয়াশিংটনের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হয়ে তদবিরকারী প্রতিষ্ঠানটি সে দেশে বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরে চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো শুরু করেছে। কালের কণ্ঠ’র কাছে এসংক্রান্ত একটি তালিকাও এসেছে। ওই তালিকায় আটলান্টিক কাউন্সিলে সাউথ এশিয়া সেন্টারের সহকারী পরিচালক নিধি উপাধ্যায়, পরিচালক ভারত গোপালাস্বামী, ব্রকিংসের জেনিফার ম্যাসন, হান্টার এস মারস্টন, ড. তানভি মাদান, কৌশিক বসু, জোহুয়া হোয়াইট, ব্রুকিংস ইন্ডিয়া সেন্টারের ধ্রুব জয়শঙ্কর, ড. কোস্টানটিনো জ্যাভিয়ার, কার্নেজ এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের র‌্যাচেল ওসনোস, সিআইপিইর জেনিফার অ্যান্ডারসন, মার্ক শ্লেফার, জন মোরেল, মারিয়া ফিলিপ, ম্যাক্স শারজার, কোকো ওয়াই, সিএসআইএসের রিচার্ড এম রোজো, অ্যারোল ইয়াবোকে, কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্সের অ্যালিসা অ্যায়ারস, সমির কুমার, হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের জেফ এম স্মিথ, জেমস জে কারাফানো, হাডসন ইনস্টিটিউটের অপর্ণা পান্ডে, রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্র্যাড অ্যাডামস, শায়না বুচনার, জুলিয়া ব্লেকনার, ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমের জুলিয়েট স্কিমিড, কাইল লেমারজি, ভাসু মোহন, আইআরআইয়ের পলা জে ডোবরিয়ানস্কি, লুসিন্ডা ক্রেইগটন, এরিকা ভেবেরটি, জেফরি পি ম্যাকডোনাল্ড, স্টিভ সিমা, বিবেক শিভারাম, ম্যাথু কার্টার, ডেরেক লুইটেন, ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের ডেবি কপার, রয় কমফুসেন, অ্যালিসন সালউইনস্কি, এনডিআইয়ের অ্যাডাম নেলসন, পিটার এম মানিকাস, ইউএস চেম্বার অব কমার্সের এসপারেঞ্জা গোমেজ জেলালিয়ান, নিশা বিসওয়াল, শাধিনতা সিড মেহরা, ক্যারোলিন পোজনার, উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান, জশোয়া স্পুনার, সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বইয়ের একজন লেখক, বিশ্লেষক ও অধ্যাপকের নাম রয়েছে।</p> <p>জানা গেছে, ব্লু স্টার একটি প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে। সেখানে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের অনেকেরই যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।</p>