<p>গোল করে নিজ দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বকাপ গোলদাতা হিসেবে ডেভিড ত্রেজেগেকে পেছনে ফেললেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর পেরুর বিপক্ষে কাল তাঁর ওই গোলেই সি গ্রুপে আর সবাইকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেল এবারের আসরের অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সও।</p> <p>অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ২-১ গোলে জেতা ফ্রান্সের পয়েন্ট টানা দ্বিতীয় জয়ে এখন ৬। একই দিনে কাল ১-১ গোলের ড্রয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়া। আগের ম্যাচে পেরুকে হারানো ডেনমার্ক ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে। ১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া এবং এখনো কোনো পয়েন্ট না পাওয়া পেরু নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বলে তাদের কেউ জিতলেও ধরতে পারবে না ফ্রান্সকে। তাই সেরা দুই দলের একটি হিসেবে শেষ ষোলোতে কালই নাম লেখানো হয়ে গেল দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের।</p> <p>পরের রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত করলেও ফ্রান্স কিন্তু এই বিশ্বকাপের চলতি ধারাটা বদলাতে পারল না। সৌদিদের জালে স্বাগতিক রাশিয়ার গোলবন্যায় শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ। পরদিন স্পেন ও পর্তুগালের ড্র ৩-৩ গোলে! তাতেই অনেকে আশা করেছিল, প্রচুর গোল দেখা যাবে এবারের বিশ্বকাপে। কোনো গোল যেন রেফারির চোখ এড়িয়ে না যায়, সে জন্য রাখা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিও। কিন্তু বিশ্বকাপের ২১ ও ২২তম ম্যাচে এসেও সেই একঘেয়ে একের নামতাই দেখতে হয়েছে দর্শকদের! এবার বেশির ভাগ ম্যাচেরই নিষ্পত্তি হয়েছে ১-০ গোলে, অথবা ১-১ গোলের সমতায় থেকেছে অমীমাংসিত। ফ্রান্স-পেরু ম্যাচের আগে এর ব্যতিক্রম হয়নি ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও।</p> <p>যদিও ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রচুর পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে কোনো ফল পায়নি পেরুও। ফরাসিরাও প্রচুর সুযোগ তৈরি করে পারেনি ব্যবধান বাড়াতে। তাই ৩৪ মিনিটে এমবাপ্পের দেওয়া গোলই হয়ে থাকে একমাত্র ভরসা। আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানের পাস বক্সের ভেতর খুঁজে পায় অলিভিয়ের জিরদের পা। সেখান থেকে তাঁকে শট নিতে দেখে একটু এগিয়ে এসেছিলেন পেরুর গোলরক্ষক পেদ্রো গালেসও। কিন্তু জিরদের শট পেরুর ডিফেন্ডার ক্রিস্তিয়ান রামোসের পায়ে লেগে শূন্যে ভেসে যেতে থাকে গোলের দিকেই। ফাঁকায় দাঁড়ানো এমবাপ্পে শুধু এগিয়ে গিয়ে বলে পা ছুঁইয়েছেন। তাতেই টপকে গেছেন ত্রেজেগেকে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২০ বছর ২৪৬ দিন বয়সে গোল করেছিলেন ত্রেজেগে। কাল তাঁকে পেরিয়ে ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বকাপ গোলদাতা হওয়ার দিন প্যারিন সেন্ত জার্মেইয়ের ফরোয়ার্ডের বয়স ১৯ বছর ১৮৩ দিন। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা দুই দলের দুই তারকা, ক্রিস্টিয়ান এরিকসন ও মাইল জেডিনাকের লক্ষ্যভেদে ১-১ গোলের সমতায় ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়া।</p> <p>পেরুর বিপক্ষে গোটা ম্যাচেই কোণঠাসা হয়ে থাকা ডেনমার্ক জিতে গিয়েছিল ইউসুফ ইউরারি পলসেনের গোলে। সেই ইউরারিই কাল বনে গেছেন ‘খলনায়ক’! এরিকসনের ভলি থেকে করা চমত্কার গোলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল ডেনমার্ক। টটেনহামে খেলা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের এটাই বিশ্বকাপে প্রথম গোল। যদিও খুব বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেনি দিনেমাররা, ৩৫ মিনিটে কর্নার কিকে ভেসে আসা বলে হাত ছুঁ্ইয়ে দলের বিপদ বাড়িয়ে তোলেন প্রথম ম্যাচের গোলদাতা ইউরারি। রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সংকেত দেন পেনাল্টির। ফ্রান্সের বিপক্ষেও স্যামুয়েল উমতিতির হ্যান্ডবলের সৌজন্যে পেনাল্টি পেয়ে গোল করেছিলেন জেডিনাক। কালও হ্যান্ডবল, পেনাল্টি এবং জেডিনাকের গোল। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৪টি পেনাল্টি নিয়ে সবগুলোতেই গোল করেছিলেন জেডিনাক, কালও ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বকাপেই এই নিয়ে তৃতীয়বার পেনাল্টিতে গোল করেছেন অ্যাস্টন ভিলায় খেলা এই মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপে কমপক্ষে তিনটি পেনাল্টি গোল আছে, এমন মাত্র সপ্তম ফুটবলার জেডিনাক। অন্যরা হলেন রব রোসেনব্রিংক, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, ইউসেবিও, ইয়োহান নিস্কেনস, রিস্টো স্টইচকোভ ও স্পেনের বর্তমান কোচ ফার্নান্দো হিয়েরো।</p> <p>ডেনমার্ক দলের সহকারী কোচ ও সাবেক তারকা জন ডাল টমাসন বলেছিলেন, বেশির ভাগ ফুটবল ম্যাচই নিষ্পত্তি হয় ৬০ মিনিটের পরে। তাঁর কথাটা খাটল না নিজের দলের বেলায়ই। প্রথম আধাঘণ্টার মতো সময়ের ভেতর হয়ে যাওয়া দুটি গোলই নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সামারা অ্যারেনায়। ম্যাচ শেষে সকারুদের ডাচ কোচ বার্ত ফন মারউইক হতাশা ঝাড়লেন জয় হাতছাড়া হওয়ায়, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমাদেরই জেতা উচিত। ফ্রান্সের সঙ্গেও এমনটা মনে হয়েছিল। আমি হতাশ, একই সঙ্গে গর্বিত। দুটি ম্যাচ থেকে অন্তত ৪টা পয়েন্ট আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমি খুবই হতাশ।’ অন্যদিকে ডেনিশ কোচ আগে হারিয়েদে দলের মধ্যে উদ্যমের অভাব দেখছেন, ‘আমার দলের খেলোয়াড়দের খুব ক্লান্ত দেখিয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম বদলি খেলোয়াড়দের নামিয়ে গতি বাড়াতে, কিন্তু বেশ রুদ্ধশ্বাস খেলাই হয়েছে বলতে হয়। অনেকবার বল হারিয়েছি, প্রতি-আক্রমণের শিকার হয়েছি। অনেক দৌড়াতে হয়েছে, শক্তি খরচ হয়েছে। তবে এটাই বিশ্বকাপ।’ দুই দলের বলের দখল, গোলমুখী প্রচেষ্টা; সবই কাছাকাছি। ১-১ সমতায় পয়েন্ট ভাগাভাগিই তাই হয়তো ন্যায্য ফল। তাতে অবশ্য সুবিধা হয়ে গেল ডেনমার্কেরই। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তারাই তো শীর্ষে!</p>