<p>বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আজও মূলত ব্রিটিশদের করা পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১-র ভিত্তিতেই চলছে। ইংরেজি ভাষায়ই চলে আসছে এর কার্যক্রম। আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ থেমে থাকলেও ১৫৭ বছর পর এটি বাংলায় রূপান্তর করতে এই ভাষার মাসে তৎপর হয়েছে সরকার; যদিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। এবার ১৮৬১ সালের আইনটিসহ পুলিশসংশ্লিষ্ট মোট আটটি আইন ও অধ্যাদেশ বাংলায় রূপ দেওয়া হবে, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সৃষ্টির অধ্যাদেশও।</p> <p>এরই মধ্যে এসব আইন ও অধ্যাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বাংলা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খসড়া হিসেবে পাঠানো হয়েছে। খসড়া যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ কাজ চূড়ান্ত করার পর সেটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পুলিশের অ্যাক্ট ও অধ্যাদেশগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তরের জন্য। এ আদেশ পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরকে সংশ্লিষ্ট ১৫টি আইন, অধ্যাদেশ ও বিধি বাংলা করার জন্য বলা হয়। নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর আইন, অধ্যাদেশ ও রুলসগুলোকে বাংলায় রূপান্তর করে খসড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু এত দিনেও এসব বাংলায় চালু হয়নি।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার আইন ও অধ্যাদেশগুলোর বাংলা রূপ যাচাই-বাছাই করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. হারুন উর রশিদ বিশ্বাসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব ফারজানা জেসমিন, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাসহ আরো একজন।</p> <p>কমিটি গঠনের পর গতকাল ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম সভা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসবের বাংলা রূপ যাচাই-বাছাই শেষ করা হবে। তবে এবার বিধিগুলো রেখে আটটি আইন ও অধ্যাদেশ বাংলায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।</p> <p>যে আটটি আইন ও অধ্যাদেশ প্রথমে বাংলায় চালু হচ্ছে এর মধ্যে পুলিশ অ্যাক্ট ছাড়াও রয়েছে ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশটিও। ওই সময় দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না। ফলে রাষ্ট্রপতির আদেশে একটি অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল ঢাকা মহানগর পুলিশ ইউনিট।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যে আইন ও অধ্যাদেশ বাংলায় চালু হতে যাচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে দ্য পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১, দ্য পুলিশ (ইনসাইটমেন্ট টু ডিজাফেকশন) অ্যাক্ট ১৯২২, দ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, দ্য পুলিশ অফিসারস (স্পেশাল প্রভিশনস) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, দ্য চিটাগাং মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮, দি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯, দ্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ এবং দ্য পুলিশ (নন-গেজেটেড এমপ্লয়ি) ওয়েলফেয়ার ফান্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৮৬। এরপর সাতটি বিধিও বাংলায় রূপান্তর করা হবে।</p> <p>সূত্র জানায়, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর তৎকালীন সরকার ১৮৬১ সালে এ উপমহাদেশের প্রথম পুলিশ আইন তৈরি করে। উপমহাদেশ থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় এবং ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা হয় পুলিশ বাহিনী। ওই পুলিশ বাহিনী দিয়েই ব্রিটিশরা ৮৬ বছরের বেশি তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও লালন-পালন করেছে। ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল পুলিশ ম্যানুয়াল নামে পুলিশের প্রথম প্রবিধিমালা প্রকাশ করা হয়। ১৮৯৭, ১৯০৬ ও ১৯১১ সালে আরো অনেক পরিবর্তন আনা হয় পুলিশ আইনে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করা হয় ১৯১৫ সালে। ১৯২৭ সালে তিন খণ্ডের ‘পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল’ প্রণয়ন করা হয়। তবে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ ও ১৯৪৩ সালে আরো দুই দফা পুলিশ আইনটি সংশোধন করে।</p> <p>স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার ব্রিটিশ আমলের আইন পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়। একটি খসড়াও করা হয়। শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশ আইন-২০১৩’-এর খসড়া পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি নিয়ে কাজ করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো পুলিশ আইনের খসড়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুলিশ আইনের ভালো দিকগুলো নিয়ে নতুন খসড়ার কাজ শুরু করে। আজ পর্যন্ত সেই খসড়া চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।</p>