ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমনে

  • ► ৩৯ দিনের মধ্যে ঘরে উঠবে নতুন ধান
    ► ৬০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ
আশরাফুল হক রাজীব
আশরাফুল হক রাজীব
শেয়ার
ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমনে
ফাইল ছবি

বোরো উত্পাদন মার খাওয়ার কারণে দেখা দেওয়া চাল সংকট মেটাতে এখন আমনই ভরসা। আর ৩৯ দিনের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করবে নতুন ধান। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করা হয়েছে আমন। তার ওপর বন্যার পলিতে বেশ ভালো ফলন হয়েছে।

কৃষকের পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের চোখেও স্বপ্ন এ আবাদ ঘিরে। প্রকৃতি সদয় হলে এই আমন দিয়েই চরম অস্বস্তি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছে সরকারও।

টার্গেট ছিল ৫৩ লাখ পাঁচ হাজার হেক্টরের, কিন্তু রোপা আমনের চাষ হয়েছে আরো ৬০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। এর থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার টন ধান উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. গোলাম মারুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কৃষকরা বেশি করে আমন লাগিয়েছে। অনেকে পাট কেটে সবজি চাষের জন্য জমি ফেলে না রেখে আমন বুনেছে। সব কিছু মিলিয়ে ফলন নিয়ে আমরা দারুণ আশাবাদী। কারণ বন্যার পর পলিতে ভালো ফলন হয়।
শুধু আমনই নয়, অন্যান্য ফসলও কয়েক বছর ভালো হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, আমন কাটা শুরু হতে আর মাত্র ৩৯ দিন বাকি আছে। কার্তিকের ২০ তারিখ থেকে পুরোদমে ধান তোলা শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় আমন কাটা শুরু হয়েছে। এই ধান অনেক আগে লাগানো।

নীলফামারী, রংপুর ও হাওরের কিছু জায়গায় এ বিশেষ আমন লাগানো হয়। নতুন ধান উঠতে শুরু করলে চালের দাম কমে যাবে।’

দিনাজপুরে বেশ ভালো ধান হয়। সেখান থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, এবার দিনাজপুরে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আগস্ট মাসের শুরুতে শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয় কৃষকরা। এক লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আশঙ্কা দেখা দেয় আমন চাষে বিপর্যয় ঘটার। কৃষি বিভাগ ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালায়। এতে সফলতাও আসে। নাবি জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করে ও দগচি দিয়ে শুরু হয় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আমন চারা রোপণ। শেষ পর্যন্ত আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ হেক্টরে।

আমন উত্পাদন বাড়াতে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কলার ভেলায় আপত্কালের জন্য রোপা আমনের ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলা তৈরির জন্য সাত লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আপত্কালীন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে নাবি জাতের রোপা আমন ধানের বীজ বিতরণের জন্য তিন লাখ দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন ও বিতরণের জন্য ৯০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা সাত হাজার ৭৮০ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার আগাম সতর্কতা পেয়ে গত ২৭ জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা বা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। পরে সে অনুযায়ী কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘যে বছর বন্যা হয়, সেই বছর ফলনও ভালো হয়। বন্যার পলি ধানের জন্য খুবই উপকারী। তা ছাড়া আমরা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের বাম্পার ফলন হবে।’

কয়েক বছর ধরেই ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। লাভ না হওয়ায় কৃষকরা ধান ছেড়ে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অন্যতম সবজি উত্পাদনকারী দেশ। তবে কৃষকরা এভাবে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে বাংলাদেশ ভয়ংকর বিপদে পড়বে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশ থেকে চাল কিনে এনে বিপুলসংখ্যক মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই ধান চাষে যেকোনো মূল্যে কৃষকদের ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আউশের উত্পাদন ছিল ২১ লাখ ৩৪ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ কম। আবাদের জমি কমায় এ বিপত্তি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর ১১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ ৯২ হাজার হেক্টরে আউশ আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কম।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। উত্পাদনের টার্গেট ছিল এক কোটি ৯১ লাখ টন। শেষ পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টরে আবাদ হলেও বোরো কাটার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ভারি বৃষ্টি হয়। এতে করে হাওর এলাকার ধান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট সরকারকে জানিয়েছে, বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে বোরোর ফলন ৫ শতাংশ কম হয়েছে।

সাবেক কৃষিসচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের আমন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এর ওপর ভরসা করে বসে থাকলে চলবে না। কারণ আমাদের দেশে কৃষকরা সাধারণত আমন ধান বিক্রি করে না। এটা তারা নিজেদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। সর্বোচ্চ দুই-তিন লাখ টন চাল হয়তো আমন মৌসুমে সংগ্রহ করতে পারবে খাদ্য অধিদপ্তর। কাজেই আমন ভালো হলেও সরকারকে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হবে। এই নির্ভরতা আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত চলতে থাকবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, টানা এক বছর আমদানি করে সরকারের সরবরাহ লাইন ঠিক রাখা কঠিন। কিন্তু এ ছাড়া কোনো বিকল্পও নেই। আমন উঠবে কিন্তু সরকার খুব বেশি সংগ্রহ করতে পারবে না। এমনকি বাম্পার ফলন হলেও না। তাই আমন ভালো হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করা খুবই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছর ভারতের কাছে প্রথম জিটুজি পদ্ধতিতে চাল চাওয়া হয়েছিল। তারা এমন দাম চাইল, যা বাজারদর থেকে অনেক বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে জিটুজি করার ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পিইসির প্রতিনিধিরা প্রতি টন চালের জন্য ৫১৬ ডলার চেয়েছিলেন। অথচ তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চালের দাম ছিল ৪৪০ ডলার। এত বেশি দামে চাল কেনা হলে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে জিটুজি প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে চাল আমদানি করা সম্ভব হয়নি। 

থাইল্যান্ড থেকেও চাল আনার চেষ্টা করা হয়েছে। দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন ট্রেড বা ডিএফটির প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসেছিলেন। বাজারদর ৪৪০ ডলার থাকলেও ডিএফটি ৫০৮ ডলারের কমে চাল দিতে রাজি হয়নি। ভারত, থাইল্যান্ডে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ যায় ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আনার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ টন চলে এসেছে। অবশিষ্ট চালও বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছেছে। কম্বোডিয়া থেকেও আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আনার ঘোষণা দেওয়া হলেও তারা কোনো চুক্তি করেনি।

দাম কমানোর জন্য সরকার খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) শুরু করেছে। কিন্তু সেই চাল আতপ হওয়ায় ক্রেতাদের সাড়া কম। এ সময় সিদ্ধ চাল খোলা বাজারে বিক্রি করলে দাম আরো কমত বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ

    আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এনসিপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন নাহিদ
খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গোপালগঞ্জে মুজিববাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও মুজিববাদীরা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে তিনি সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। 

গতকাল বুধবার রাতে তিনি খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, গোপালগঞ্জের হামলা আওয়ামী ও মুজিববাদীদের পুরনো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির এটি ছিল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনকে জানিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা জেনেই গোপালগঞ্জ সফরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে ।

এর পরও গোপালগঞ্জে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আওয়ামী লীগের বাইরেও যে অন্য কোনো দল কর্মসূচি করতে পারে সেটি এনসিপি প্রমাণ করে দিয়েছে।

সমাবেশের আগে ও পরে দফায় দফায় হামলার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, এ হামলা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটি প্রমাণিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আরো সতর্ক থাকতে পারত উল্লেখ করে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেভাবে সহায়তা দিয়েছে সে জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

নাহিদ জানান, আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরসহ সারা দেশের পূর্বঘোষিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শুধু মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে বুধবারের যে কর্মসূচি ছিল সেটি স্থগিত করা হয়েছে, পরে ওই দুই জেলার কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনা এসে পৌঁছেন। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে। তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এই ঘোষণা দেন।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এনসিপির মশাল মিছিল : গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ আয়োজনে গতকাল মশাল মিছিল হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে আজ রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও থানায় স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া) এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

মন্তব্য
ফিরে দেখা ১৭ জুলাই

শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৭তম দিন ১৭ জুলাই ছিল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তবে ছুটির দিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ঢাকাসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া অন্তত ১০ স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই স্থানে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

আগের দিন সংঘর্ষে আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কফিল মিছিল ও গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

১৭ জুলাই দিনভর রাজধানীর শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। রাতে হানিফ ফ্লাইওভারের (বর্তমানে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত দুই বছরের শিশুসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের চিত্র

১৭ জুলাই সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কফিন মিছিল শুরু করলে বাধা দেয় তারা। এ সময় আহত হন নারীসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন সাংবাদিক।

এদিন আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দুপুরের পর তাদের টানা দুই ঘণ্টার অভিযানে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কফিন মিছিল শুরু হলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর আবার সূর্য সেন হলের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে ঘণ্টাখানেক। পরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে পুলিশ নির্বিচার হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যান। তবে অনেক শিক্ষার্থী হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাতে হলে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারীদের বিচার না হলে হল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান তাঁরা।

এদিন দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের একটি দল মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলা, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পরদিন ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।

 

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাবি ও চবি

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রীদের এবং রাত ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

রংপুরে আবু সাঈদের দাফন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আগের দিন নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের নালিপাড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জানাজা ও দাফনের তাগিদ দেওয়া হলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুই দফা জানাজা শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে আবু সাঈদের লাশ দাফন করা হয়।

 

জাতির উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সৃষ্ট সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।

 

মন্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির ব্লকেড

সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাঁড়াশি অভিযানের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার রাজধানীর শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাঁড়াশি অভিযানে যৌথ বাহিনী ব্যর্থ হলে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এ সময় ২৪ ঘণ্টার জন্য বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং দিল্লির চক্রান্তে গোপালগঞ্জের ভেতরে একটি প্রক্সি স্টেট তৈরি করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই প্রক্সি স্টেট খেলা আমরা হতে দেব না। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে হটিয়ে দিয়েছে।

তাই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ, হামলাকারী ও গণহত্যাকারী কারো অবস্থান এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, ইসি একটি নাটকবাজি করেছে। ইসি বলেছে, নৌকা প্রতীক নাকি এখনো থাকবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলতে চাই, এত বড় একটি গণহত্যার পরেও বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তাদের আওয়ামী লীগ এবং তাদের মার্কা থাকতে পারবে না।

রিফাত বলেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার গোপালি পুলিশ এখনো ছাত্র-জনতার দিকে বন্দুক তাক করে।

এর আগে দুপুরের দিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীর ওপর আওয়ামী নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রশিদুল ইসলাম রিফাত এ ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সারা দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নয়, একই সঙ্গে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি।

 

সারা দেশে বাংলা ব্লকেড : রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকেলে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউস বিল্ডিং মোড় ঘিরে বিক্ষোভে নেমে পড়ে শতাধিক প্রতিবাদকারী। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা বলে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশি সহায়তায় হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে উত্তরা অঞ্চলে তারা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে।

বিকেল ৩টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বরে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিরপুর জোন।

রাজধানীর শাহবাগে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। কর্মসূচি চলাকালে মঞ্চের বক্তারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ঘটনার সঠিক বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় না আনলে লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় অবরোধ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করেছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

তবে জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসতে বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিক্ষোভকারীদের রাস্তার এক পাশে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। 

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার এক পাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফরিদপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, খুলনা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, রাজবাড়ী, ধামরাই (ঢাকা), শেরপুর (বগুড়া), গাজীপুরের টঙ্গীতে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

[তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিরা]

 

 

মন্তব্য
জামায়াত আমির

সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

    প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন, গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে? তিনি লেখেন, গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যত দূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করেই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন, যা তাঁদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার।

কিন্তু মাঠে কার্যকর কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

জামায়াতের আমির সরকারের উদ্দেশে লেখেন, সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় ইতিহাসের দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।

ডা. শফিকুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সংঘাত ও উচ্ছৃঙ্খলতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সাহায্য প্রেরণ করুন।

আমিন।

অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী শাসনব্যবস্থার সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, কর্মসূচির আগে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকর উপস্থিতি দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ কোনো বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অংশ।

সেখানে সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নভাবে চলার নিশ্চয়তা দিতে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব অপরিহার্য।

পরওয়ার দাবি করেন, ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনগণের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে, তবে দেশ এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী দেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তিনি তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, গতকাল বুধবার এনসিপির পূর্বঘোষিত মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়, এমনকি পুলিশের এসপি অফিসেও হামলা করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জে এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ করা হয়েছে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ