বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং গত বুধবার নিজ দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ৫৫ বিলিয়ন ডলার ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষ যাতে কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্যই এ ছাড় বলে জানিয়েছে দেশটির স্টেট কাউন্সিল। অথচ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের দেখানো পথে হাঁটার আকাঙ্ক্ষায় থাকা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আগাম চাপে। শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সিনিয়র মন্ত্রীর কপালেও এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ।
ভ্যাটে ১৫ শতাংশের আতঙ্ক
- অনড় অর্থমন্ত্রী, উদ্বেগ বাণিজ্যমন্ত্রীর
আবুল কাশেম ও এম সায়েম টিপু

বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ ১৫ শতাংশ হারে সব পণ্যে ভ্যাট বসালে এশিয়ার অগ্রসরমান ও দ্রুত বর্ধনশীল বিভিন্ন দেশের তুলনায় চাপে পড়বেন শিল্প মালিক ও ভোক্তারা। এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও ভারতে সর্বোচ্চ ভ্যাট ১৫ শতাংশের চেয়ে কম। চীনে বর্তমানে চার স্তরের ভ্যাট রয়েছে। এর মধ্যে খুচরা পণ্য, বিনোদনসামগ্রী, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাটারিং সার্ভিস, মোবাইল কল, পোস্টাল, ট্রান্সপোর্ট ও লজিস্টিকসের ওপর ১১ শতাংশ; আর্থিক ও বীমা সেবা, ইন্টারনেট ডাটা, তথ্য-প্রযুক্তি ও কনসাল্টিংয়ের ওপর ৬; জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ৩ এবং স্থানীয় শিক্ষার ওপর ২ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘প্রগ্রেসিভ’ রাজস্ব ব্যবস্থার নামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। এরপর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন সংসদে পাস হয়, যেখানে অল্প কিছু পণ্য বাদে বাকিগুলোতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানোর কথা বলা হয়েছে। তখন থেকেই ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে এ আইন প্রয়োগ করতে পারেনি সরকার। ২০১৮ সালের শেষে সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন অর্থমন্ত্রী। তাই আগামী অর্থবছর থেকেই এই আইন বাস্তবায়ন করে ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন প্রয়োগ করার সময়কার অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মতো স্মরণীয় হতে চান তিনি।
১৫ শতাংশ ভ্যাট আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নের জন্য আবদুল মুহিত কয়েক দফা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার এনবিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে শৈথিল্য, উদ্যোগহীনতা বা উদাসীনতা দেখালে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন ভ্যাট আইনে তাঁদেরও আপত্তি নেই। প্যাকেজ ভ্যাট, টার্নওভার ট্যাক্স বিষয়েও তাঁদের খুব একটা সমস্যা নেই। তবে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ কেবল ভোক্তাদেরই চাপে ফেলবে না, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কেনার সামর্থ্য কমে যাবে, যা চূড়ান্ত বিচারে শিল্পের উত্পাদন কমিয়ে দেবে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, কর্মসংস্থানে, সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভ্যাট বাড়ার সঙ্গে কমবে আমদানি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক। অর্থাৎ আমদানি পণ্যের দাম কমে যাবে। একদিকে দেশে উত্পাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে আমদানি পণ্যের মূল্য হ্রাস দেশের শিল্পপণ্যকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে। তাই ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি দেশি শিল্প সুরক্ষার ব্যবস্থা চান তাঁরা।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আয় কতটা বাড়বে, সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তাপর্যায়ে এর কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে কোনো সমীক্ষা অর্থ মন্ত্রণালয় বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করেনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো গবেষণা নেই। তবে দুই পক্ষই নিশ্চিত যে নতুন আইন প্রয়োগ করা হলে ভ্যাট আদায় বাড়বে, ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তবে এই চাপ সামগ্রিক অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই কোনো পক্ষেরই।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিতর্ক চললেও সরকার এর বাস্তবায়ন থেকে সরে আসবে না। কারণ এর পরের অর্থবছরের সর্বোচ্চ ছয় মাস পরই নির্বাচন হবে। তাই এখনই এটি বাস্তবায়ন শুরু না করলে তা আর সম্ভব হবে না। তবে সরকার শুরু থেকেই আইনটি প্রয়োগে খুব বেশি কঠোর হবে না। কারণ নতুন আইনে উত্পাদন ও বিপণনের বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করতে হলে বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা-বিক্রেতাকে বেচা-বিক্রির হিসাব রাখতে হবে। সারা দেশের ব্যবসায়ীদের হিসাবে অভ্যস্ত করাসহ তাঁদের ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার ব্যবহারে বাধ্য করতে যে বেশ সময় লাগবে, সে ব্যাপারে সজাগ নীতিনির্ধারকরা। আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে সরকার আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে।
কর্মকর্তারা জানান, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাস্তবায়ন বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের পেছনে বড় কারণ হলো, একটি মাত্র ভ্যাট হার থাকলে তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। একেক পণ্যে একেক হারে ভ্যাট আরোপ করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা উচ্চ ভ্যাটের পণ্যকে নিম্নহারের পণ্য হিসেবে দেখিয়ে ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজবেন। তাই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের শুরুতে সরকার ১৫ শতাংশ হারেই এটি বহাল রাখতে আগ্রহী। তবে আইন প্রয়োগের পর ভ্যাট কোনো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে, তখন বিশেষ আদেশের (এসআরও) মাধ্যমে তা কমানো হতে পারে।
গত রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। পরে অর্থমন্ত্রী নিজের অনড় অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। আর ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকবে।
অর্থমন্ত্রীর এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভ্যাট কমানোর পক্ষে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবার জন্য সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভ্যাট কমানো বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে রাজি করানোর সাধ্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের। ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেই এ দাবি আদায় করতে চান। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের গত আট বছরে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক ইস্যু ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অর্থমন্ত্রী বারবার সরকারের ভেতর থেকে সমালোচিত হয়েছেন। প্রতিবারই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ফলে আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজে তোফায়েল আহমেদকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তাতেও কাজ না হলে ব্যবসায়ীদের শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছেই যেতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সর্বজনীন ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে না কমানোর অবস্থান তুলে ধরলেও টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।’ বিদ্যমান আইনে বছরে ২৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন, এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হয় না। ২৪ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রেতাকে বার্ষিক মোট বিক্রির ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দিতে হয়। ৮০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করে এমন ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হয়।
এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দাবি ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স দেওয়ার সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করা।’ ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলালউদ্দিন জানান, অর্থমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারে সরকার।
বিদ্যমান আইনে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মোট বিক্রির হিসাব না নিয়ে বছর শেষে ভ্যাট বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেয় এনবিআর। নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাটের বিধান নেই। এফবিসিসিআইয়ের তরফ থেকে প্যাকেজ ভ্যাট বহালের দাবি তোলা হলেও এটি নিয়ে খুব একটা দর-কষাকষি করবে না সংগঠনটি। আর অর্থ মন্ত্রণালয় বা এনবিআরের তরফ থেকেও প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল করার পরিকল্পনা নেই। কারণ প্যাকেজ ভ্যাট বাবদ সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তা আদায় করতেই তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্যাকেজ ভ্যাট বহাল কিংবা টার্নওভার ট্যাক্সসীমা বাড়ানো আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। এফবিসিসিআই চায় দেশের শিল্পের বিকাশ ঘটুক। এ জন্য দেশে উত্পাদিত শিল্পপণ্যের ওপরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের যে সিদ্ধান্ত রয়েছে, তা কমানোর দাবি আমাদের। এত বেশি হারে ভ্যাট বসালে দেশি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা কমবে। এতে শিল্পের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে, সম্পূরক শুল্ক কমে যাবে। তাতে আমদানি পণ্যের দাম কমবে। এ অবস্থায় দেশি শিল্পের স্বার্থ রক্ষা ও ভোক্তার চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমানোর কোনো বিকল্প নেই।’
তবে অর্থমন্ত্রী গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে আইএমএফের সভায় আবারও বলেছেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশই থাকবে।
এফবিসিসিআইয়ের তরফ থেকে বহু স্তর ভ্যাট ব্যবস্থার দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ একেক পণ্যের একেক হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব তাদের। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করার জোর দাবি সংগঠনটির। মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আগামী ৩০ এপ্রিল ও ২ মে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আমাদের সভা হবে। সেখানেও ভ্যাট কমানোর জন্য চাপ দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া শুধু ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আরেকটি বৈঠকে বসতে চেয়েছেন। এসব বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট কত নির্ধারণ করেন, তা দেখার পরই এফবিসিসিআই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে কোন পণ্যের দাম কত বাড়বে, তাতে ভোক্তার ওপর কেমন চাপ সৃষ্টি হবে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আশা করি, সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি ও দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার ভ্যাট কমানোসহ আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন করবে।’
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।