ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

এক দিনে সড়কে শেষ ২৩ প্রাণ

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
এক দিনে সড়কে শেষ ২৩ প্রাণ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রাকের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ভটভটি। এ ঘটনায় ১৩ জন নিহত হন। ছবি : কালের কণ্ঠ

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় বেপরোয়া গতির ট্রাকের চাপায় একটি ভটভটি লণ্ডভণ্ড হয়ে আরোহী ১৩ শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অন্তত ৯ জন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রবিবার সকাল ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ও আহতরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক, তাদের বাড়ি উপজেলার বড় বলদিয়া গ্রামে। অন্যদিকে বাগেরহাটের কচুয়ায় বাসচাপায় রিকশা ভ্যান আরোহী দুজন, হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজার এলাকায় পাজেরোচাপায় এক শিশু, নাটোরে পাওয়ারটিলারের ধাক্কায় এক স্কুল ছাত্র, নরসিংদীতে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে এক যাত্রী এবং খুলনায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চারজন নিহত হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় বাসচাপায় নিহত হয়েছে একজন। আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ভটভটি দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন আবদুর রহিমের ছেলে আবদার আলী (৪৫), ঠাণ্ডু মণ্ডলের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩৬), মৃত ইন্নাল হোসেনের ছেলে আকুব্বর হোসেন (৪৮), গোলাম হোসেনের ছেলে ইজ্জত আলী (৪২), কিতাব আলীর ছেলে নজির হোসেন (৩৬), গাজীর উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ শান্ত (৩৮), বাবুল আক্তারের ছেলে হাফিজুল রহমান (৩৫), ফিরোজ আলীর ছেলে শফিকুল রহমান (৩৭), কানাই মণ্ডলের ছেলে লাল মোহাম্মদ (৪৫), রমজান আলীর ছেলে রফিকুল আলম (৪০), ভোলাই মণ্ডলের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩৯), খোদা বকসের ছেলে জজ মিয়া (২৮) ও লিয়াকত আলীর ছেলে মোহাম্মদ শাহীন (২৫)।

চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, সকালে দামুড়হুদার বড় বলদিয়া গ্রামের ২২ জন শ্রমিক একটি ভটভটিতে করে রাস্তার নির্মাণ কাজের জন্য আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে দামুড়হুদার জয়রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক (চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৫৮৮) ভটভটিটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভটভটির আট যাত্রী নিহত হন। পরে গুরুতর আহত ১৪ জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তরিকুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে দুইজনের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো দুইজন মারা যান। বাকি একজনের মৃত্যু হয় দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ঘাতক ট্রাকটি চুয়াডাঙ্গার নীলকমল ওয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রতনের বলে জানা গেছে।

আহতরা হলেন—আলী হোসেন (৫৫), মোহাম্মদ কালু (১৯), মজিবর রহমান (২৫), জিয়াউর রহমান (৩৫), শফি উদ্দিন (২৪), আতিকুল ইসলাম (৩০), শফিকুল ইসলাম (২৭), আলতাফ হোসেন (৩০)।

বাকি একজনের নাম জানা যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে জানান, দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক ট্রাকটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ভটভটিটি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে। রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা লাশগুলো ছিন্নভিন্ন। শ্রমিকরা সঙ্গে করে দুপুরে খাওয়ার জন্য যে খাবার ও কাজের জন্য যে কোদাল নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেসবও ছটিয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে রাস্তার ওপর। দুর্ঘটনার পরপরই জয়রামপুর গ্রামের বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তা ব্যারিকেড দেয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

দামুড়হুদা থানার ওসি আবু জিহাদ মোহাম্মদ ফকরুল আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপার আগেই পালিয়ে গেছে। নিহতদের স্বজনরা মামলা না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি আরো জানান, লাশগুলো উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

নিহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু প্রমুখ।

নিহতদের বড় বদলিয়া গ্রামটি মদনা-পারকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আওতাধীন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিহতরা সবাই হতদরিদ্র। দিনমজুরি করে তাঁদের সংসার চলে। এ দুর্ঘটনা অনেক পরিবারকে পথে বসিয়ে দিল।’ 

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।

পৃথক দুর্ঘটনায় আরো নয়জন নিহত : আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে সাইনবোর্ড-মোরেলগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কচুয়া উপজেলার পিংগুড়িয়া এলাকায় বাসচাপায় রিকশা ভ্যান আরোহী দুইজন নিহত হন। তাঁরা হলেন কচুয়ার বিলকুল গ্রামের মোবারেক শেখের ছেলে খলিল শেখ (৩৫) এবং প্রতাপপুর গ্রামের আবদুল মাঝির ছেলে মাহবুব মাঝি (৪৫)।

কচুয়া থানার ওসি মো. কাবিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, মোরেলগঞ্জ থেকে কাজ শেষ করে রাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যানে মাহাবুব ও খলিল বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে পিংগুড়িয়া এলাকায় একটি বাস ভ্যানটিকে চাপা দিলে তাঁরা দুজন আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজার এলাকায় পাজারো জিপের চাপায় রিফাত মিয়া (৭) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সুঘর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশু বৈদ্যেরবাজারের বনগাঁও গ্রামের আবদুর রেজাক মিয়ার ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, হবিগঞ্জ থেকে বাহুবল যাওয়ার পথে সুঘর নামক স্থানে কাস্টমসের একটি পাজেরো জিপ (সিলেট ঘ-১১-০১৩৫) শিশুটিকে চাপা দেয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বাহুবল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকেল ৩টার দিকে শিশু রিফাত মারা যায়।

বাহুবল মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, বাহুবল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে গাড়ি রেখে চালক পালিয়ে গেছে। পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে এসেছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, দুপুরে নাটোরের লালপুর উপজেলার বাঘা সড়কের হাপানিয়া এলাকা দিয়ে সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আদনান (১০)। বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি পাওয়ারটিলার ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে লালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। আদনান লালপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হাফিজুল ইসলামের ছেলে।

খুলনা অফিস জানায়, গতকাল বিকেলে ডুমুরিয়া উপজেলার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের টিপনা নতুন রাস্তা মোড়ে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে চারজন নিহত ও অন্তত ১৮ জন আহত হয়। আহতদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহতরা হলেন কৃষ্ণপদ মণ্ডল, রাজেশ সরদার, লাল্টু সরদার ও গোলক মিস্ত্রি। নিহতদের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ গ্রামে।

ডুমুরিয়া থানার ওসি সুভাষ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি থেকে যাত্রীবাহী বাসটি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যাচ্ছিল। ডুমুরিয়ার টিপনা নতুন রাস্তার বাজার এলাকায় পৌঁছার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো একজন মারা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ এসে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার পরই বাসচালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছে। বাসটি উদ্ধারে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ করছে।

নরসিংদী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার সাহেপ্রতাপ এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার এক যাত্রী নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়। নিহত ফারুক ফকির (৩৮) সদর উপজেলার নজরপুরের কাঞ্চন ফকিরের ছেলে।

গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু : রাজধানীর গুলিস্তানে গতকাল সকালে বাসের চাপায় সুজন নামের এক পথচারী নিহত হয়েছে। ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাসের চাপায় গুরুতর আহত হয় মো. সুজন নামের এক যুবক। পরে তাকে পথচারীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মাছিমপুর গ্রামে। বাবার নাম আবু চান। বর্তমানে সে ঢাকা স্টেডিয়াম ভাসমান থাকত।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হতাহতের তথ্য নিয়ে অসংগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হতাহতের তথ্য নিয়ে অসংগতি

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের তথ্যে অসংগতি রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ১০ হাসপাতালে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩১। ১৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে।

বিকেল ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৮ এবং আহত ৬৯ জন।

এমন পরিস্থিতিতে গতকালও হাসপাতালে আহতদের খুঁজতে দেখা গেছে স্বজনদের। তাঁরা নিহতদের সঠিক নাম, তথ্য প্রকাশ এবং আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানান।

তথ্য প্রকাশে পিছিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় : জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আইএসপিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের হিসাবে একটি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে।

সেটি হলো লুবানা জেনারেল হাসপাতাল। আমরা সেখানে যোগাযোগ করেছি। তাদের নিবন্ধন খাতায় কোথাও কোনো মৃত্যু নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছে, সেখানে দুই শিশু হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আসে, যাদেরকে তাদের অভিভাবকরা নিয়ে গেছেন।
এই দুজন পরে কোনো হাসপাতালে না আসায় মৃত্যুর তালিকায় তাদের নাম নেই।

এ ছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের হিসাবে একটি পার্থক্য হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, সেখান থেকে একজনের মরদেহ সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূলত এই সংখ্যায় আমাদের সঙ্গে আইএসপিআরের পার্থক্য হয়েছে।

অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, আহতদের সংখ্যা বলা হচ্ছে ১৬৫।

এখানে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জনের চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেখানে দু-তিনজন রোগীও নেই। জরুরি চিকিৎসা দেওয়া এবং রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের কারণে সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩০ জন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ১০ জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। অন্যদের মধ্যে ১০ জন শঙ্কামুক্ত এবং দুজনকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে কেবিনে স্থানান্তর করার প্রস্তুতি চলছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য : মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৬৮ জন, মৃত ২৮ জন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪২ জন, এ পর্যন্ত মৃত্যু ১০ জনের। সিএমএইচে ভর্তি ২৩ জন, মৃত্যু ১৫ জনের। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি একজন, মৃত্যু নেই। শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি একজন, মৃত্যু নেই। ঢাকা মেডিক্যালে কোনো রোগী ভর্তি নেই, মৃত্যু একজনের। লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি কোনো রোগী নেই, মৃত্যু একজনের। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন একজন, মৃত্যু নেই। এ ছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে কোনো রোগী নেই, মৃত্যু একজনের।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় হালনাগাদ করা তালিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩৯ জনই শিক্ষার্থী। ছয়জন শিক্ষক, ১৫ জন সেনা সদস্য এবং একজন করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, স্কুল স্টাফ, গৃহকর্মী ও ইলেকট্রিশিয়ান রয়েছে। এ ছাড়া পরিচয় শনাক্ত না হওয়া চারজন রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, এখন পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় ছয়টি লাশ আছে। এর মধ্যে চারজনের স্বজন এসেছেন। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে। বাকি দুজনের স্বজনদের খোঁজ এখনো মেলেনি।

সায়েদুর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে একটি মেডিক্যাল টিম মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছবে। এই টিমে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন নার্স থাকবেন। বুধবার থেকে তাঁরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হবেন।

চিকিৎসা নিয়ে উত্তরার হাসপাতাল ছেড়েছে আহতরা : গতকাল ঘটনার দ্বিতীয় দিন উত্তরার হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব রোগীর মধ্যে অনেকে ঘটনাস্থলের ভয়াবহতা দেখে মানসিক আঘাত বা প্যানিক অ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে কেউ কেউ আহত হয়েছে। সামান্য দগ্ধ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গুরুতর দগ্ধ রোগীদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল ও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি আহত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, এখানে এক শর বেশি শিক্ষার্থী আসে। এর মধ্যে প্রথমে আসা প্রায় ৪০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় শুধু স্যালাইন আর বার্ন ক্রিম দিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরে যারা এসেছে, তারা মূলত আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। রাতের মধ্যে তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। ২৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল, তারাও পরদিন হাসপাতাল ছাড়ে। হাত পুড়ে যাওয়ায় এক শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঘটনার পর দুটি মৃতদেহ হাসপাতালটিতে আনা হয়েছিল, যা পরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন অফিসার নয়ন বলেন, দগ্ধ ১২ জন শিক্ষার্থী এসেছিল। পাঁচজনকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়, অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। এখানে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

মন্তব্য

চার দলের সঙ্গে জরুরি বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চার দলের সঙ্গে জরুরি বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার

বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের চার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক ডাকা হয়। রাত সোয়া ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৈঠকটি চলছিল।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য
সরেজমিন মাইলস্টোন

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতা স্বজনদের হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতা স্বজনদের হাহাকার
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনটিতে গতকালও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা শাখার প্রাথমিক ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। এক দিন আগেও যে ভবনটি শিশু শিক্ষার্থীদের কলহাস্য-গুঞ্জনে মুখর ছিল, সেখানে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে। পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। চারদিকে ছড়িয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতার ছাই আর আধপোড়া জঞ্জাল।

পরিবেশটা আরো দুঃসহ করে তুলেছে সন্তানের খোঁজে আসা অভিভাবক-স্বজনদের হাহাকার।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনও স্কুল ক্যাম্পাসের বাতাস ভারী হয়ে আছে পোড়া গন্ধে। সেই গন্ধে মিশে আছে দুর্ঘটনায় হতাহত শিশুদের কান্না, আতঙ্ক আর অসমাপ্ত পাঠ। থমথমে পরিবেশের মধ্যে শুধু নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

কেউ পাথরের মতো স্থির, কেউ ভেঙে পড়ছেন ছেলের বা মেয়ের নাম লেখা একটি ছেঁড়া খাতার পাতা দেখে।

ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পানি লেগে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ও ব্যাগের টুকরা। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা, আবার কেউ আইডি কার্ডের টুকরা।

তা দেখে বুক ঠেলে আসা হাহাকারে মুষড়ে পড়ছেন মা-বাবা।

এমন একজন অভিভাবক রাবেয়া খাতুন। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বই-খাতাগুলো নিয়ে দেখছিলেন তিনি। হঠাৎ চিকার দিয়ে বলেন, এটা আমার মেয়ের ব্যাগ...আর এটা আমার মেয়ের লেখা। ওর খোঁজ তো পাইলাম না।

এগুলো তার চিহ্ন হয়ে থাকবে।

রাবেয়া খাতুনের ভাই সাগর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, রাইসা মণি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। ক্যাম্পাসসহ রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তার সন্ধান পাইনি।  তাই আজ (মঙ্গলবার) আবার এসেছি। একটি ছেঁড়া খাতায় তার হাতের লেখা আর ব্যবহৃত ব্যাগ দেখে শনাক্ত করতে পেরেছি।

স্কুল ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে কাজ করছিলেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। ভবনের সিঁড়ির পাশে তাঁরা দড়ি দিয়ে একটি করিডর তৈরি করেছেন, অভিভাবকরা যাতে ভেতরে ঢুকে শেষবারের মতো একবার চেনা পরিবেশ দেখে আসতে পারেন। সেখানে কাউকে দেখা যায় নিঃশব্দে দেয়ালের পোড়া দাগ ছুঁয়ে কাঁদছেন, কেউ চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে সয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বুকচাপা কষ্ট।

স্বেচ্ছাসেবক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেকে ভেতরে এসে কেবল দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ কিছু বলেন না। শুধু একটা বই বা আইডি খুঁজে নেন। আমরা তাঁদের সহায়তা করছি, কিন্তু কাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।

সকালে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল অভিভাবকদের ভিড়। এর মধ্যে অনেকের দাবি, তাঁদের সন্তান এখনো নিখোঁজ। রাতভর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। তাই সকাল হতেই ছুটে এসেছেন ক্যাম্পাসে। তাঁরা জানেন না, সন্তানের ভাগ্যে কী ঘটেছে। শেষ স্মৃতি হিসেবে সন্তানের ব্যবহৃত একটি বই, খাতা, আইডি কার্ড বা ব্যাগ স্মৃতি হিসেবে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।

মন্তব্য
পড়ে আছে ৬ এয়ারফিল্ড

ঢাকার আকাশে শিগগিরই বন্ধ হচ্ছে না যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ

    প্রশিক্ষণের অবস্থান নতুন করে ভাবা দরকার : সাখাওয়াত কুর্মিটোলায় স্ট্রং এয়ারবেইস থাকা খুব দরকার : বিমানবাহিনী প্রধান
মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
ঢাকার আকাশে শিগগিরই বন্ধ হচ্ছে না যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ

রাজধানীর আকাশে সামরিক ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ দিন দিন বাড়ছে। এতে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে সাধারণ মানুষের জীবনে ঝুঁকির মাত্রাও বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর একটি এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ৩১ শিক্ষার্থী নিহত ও ১৬৫ জনের বেশি আহত হওয়ার পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার রেকর্ড এটি।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ছয়টি এয়ারফিল্ড পড়ে থাকলেও রাজধানীর আকাশে কেন ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আকাশও শহরের একটি স্পেস। সেটিকে নিরাপদ রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর আকাশে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি সামরিক ফ্লাইট এবং আরো কয়েকটি বেসরকারি ফ্লাইং ফ্লাইট পরিচালিত হয়। অথচ এসব মহড়ার জন্য শহরের বিকল্প প্রশিক্ষণস্থল যেমন ঈশ্বরদী, শ্রীমঙ্গল বা সৈয়দপুরকে ব্যবহার করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার পরও বিমানবাহিনী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রাজধানীর প্রশিক্ষণ আকাশপথ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশ্লেষক এ টি এম নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের যুদ্ধবিমান নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকে ভাবেন এগুলো শুধু প্রশিক্ষণের জন্য, কিন্তু এগুলো আসলে জেট যুদ্ধবিমানএকটি মেশিনের সামান্য ত্রুটি বড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন, যখন ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছিল, তখন এর আশপাশে এত ঘনবসতি ছিল না। সেখানে আমরা আবাসন, এমনকি স্কুল করতে দিলাম। যে স্কুলটিতে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল, সেই স্কুলটি কি বিমানবন্দরের এত কাছে থাকা উচিত? প্রতিদিন এখানে শতাধিক উড়োজাহাজ উঠছে-নামছে, এর বিকট শব্দ যাচ্ছে শিশুদের কানে। আকাশ প্রতিরক্ষার নিয়ম মানতে হবে, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন থাকতে হবে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বিমানবন্দর সরানো যায়নি আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে।

অন্যদিকে বিমান চলাচলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সামরিক বিমান চলাচল একটি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় বেসামরিক প্রশাসন সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা চেষ্টা করি সব ধরনের ফ্লাইট ট্রাফিক নিরাপদ রাখতে। তবে সামরিক বিমান ওড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

মাইলস্টোন স্কুলের একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সন্তান স্কুলে গিয়ে যদি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়, তবে কাকে জবাবদিহি করব?

 

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি উপেক্ষিত

পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই। সব দেশেই যাত্রীবাহী ও সামরিক বিমান উড্ডয়নের জন্য পৃথক রানওয়ে বা বিমানবন্দর থাকে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মতো উচ্চঝুঁকির ফ্লাইট অপারেশন জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে পরিচালনা করতে হবে।

আইকাওয়ের অ্যানেক্স-১৪-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে, যেটি হবে জনবসতি থেকে দূরে। যেখানে শব্দদূষণ কম হবে এবং ঝুঁকি কম থাকবে। বেবিচকের নীতিমালায়ও একই কথা বলা হয়েছে। তবে এসব বিধান অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিচালনা না করে বিপদে রাখা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

 

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ, আদৌ উপযুক্ত?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ শহরের ওপর দিয়ে জেট ইঞ্জিনধারী যুদ্ধবিমান ওড়ানো এক ধরনের অন্ধ ঝুঁকি নেওয়ার নাম। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা অনুসারে, প্রশিক্ষণ পরিচালিত হওয়া উচিত জনবসতি ও বাণিজ্যিক উড়ানহীন অঞ্চলে’—যা রাজধানীর ক্ষেত্রে পুরোপুরি উপেক্ষিত।

 

পরিত্যক্ত পড়ে আছে দেশের ৬ এয়ারফিল্ড

বাংলাদেশে অন্তত ছয়টি পুরনো এবং পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই সামান্য মেরামতে প্রশিক্ষণ উপযোগী করা সম্ভব বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই এয়ারস্ট্রিপগুলো এখনো কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর আকাশেই যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে বিমানবাহিনী।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিত্যক্ত বা আংশিক ব্যবহৃত অবস্থায় থাকা ছয়টি এয়ারফিল্ড হলোঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল ও ফেনী। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, নীতিহীনতা ও সিকিউরিটি ট্যাগের কারণে এসব বিকল্প ব্যবহার হচ্ছে না।

 

প্রশিক্ষণের অবস্থান নতুন করে ভাবা দরকার : সাখাওয়াত

বিমান প্রশিক্ষণের জন্য স্থান নির্বাচনে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিয়েছেন নৌপরিবহন, শ্রমকর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহর অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা উচিত।

 

ইতিহাস আগেও আছে, গুরুত্ব পায়নি

এই দুর্ঘটনাই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে। বাংলাদেশে এফটি-৭ যুদ্ধবিমানের আরো কয়েকটি দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে থাকা একটি চীনা এফ-৭ বিজি বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় বিমানের পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দীপু মারা যান। ২০১৫ সালের ২৯ জুন চীনা এফ-৭এমবি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সাগরে পড়ে যাওয়া ওই বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিধ্বস্ত হয় একটি চীনা এফটি-৭ যুদ্ধবিমান। বিমান থেকে বেরিয়ে আসার পরও স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান মারা যান।

 

প্রশিক্ষণ বিমান কারা চালান?

রাজধানীর আকাশে বর্তমানে প্রশিক্ষণ পরিচালনায় দুটি পক্ষ সক্রিয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কুর্মিটোলা ঘাঁটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট উড্ডয়ন করে। বেসরকারি ফ্লাইং স্কুল অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী, চট্টগ্রাম, উত্তরা ও আশপাশে প্রশিক্ষণ চালায়।

 

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এমন জায়গা খুঁজে বের করলেও পাশে আবার ঘনবসতি হয়। এখানে যখন বিমানবন্দর হয়েছিল আমি যখন প্রথম এখানে ১৯৮৫ সালে ফ্লাই করেছিলাম তখন ওদিকে কিছুই ছিল না, উত্তরা বলতে কিছু ছিল না। এটার সঙ্গে ঘনবসতির সম্পর্ক করা ঠিক না। আমাদের দেশ ছোট, সব জায়গায় মানুষ। এটা (কুর্মিটোলা) আমাদের মেইন বেইস, সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট জায়গা এটা। ভিআইপিরা এখানে থাকেন, আমাদের স্থাপনা এখানে, পার্লামেন্ট এখানে। একটা প্রটেকশনের ব্যাপার আছেএখানে একটা স্ট্রং এয়ারবেইস থাকা খুবই দরকার।

রাজধানী থেকে প্রশিক্ষণ বিমান স্থানান্তর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা সরানোর উদ্যোগ আমার জানা মতে এই মুহূর্তে নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ঢাকা থেকে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সীমান্তঘেঁষে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সমীক্ষাও করা হয়েছে। এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিমানবন্দরের ড্রয়িং-ডিজাইন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় হয়েছে শতকোটি টাকা। তবে এক যুগ পরও বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা এখনো হিমঘরে। এ বিষয়ে অগ্রগতি নেই বলেও জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

 

কেন  দুর্ঘটনা

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এই দুর্ঘটনাকে মেকানিক্যাল তথা টেকনিক্যাল ফেইলিউর বলছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানবাহিনীর ওই বিমানে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি (যার বিস্তারিত তদন্তসাপেক্ষে জানানো হবে) দেখা দিয়েছিল বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্তের আগে কোনো ধারণার কথা বলা ঠিক হবে না। তবে এটা একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিমান। ইঞ্জিনের অনেক টেকনিক্যাল প্রবলেম হতে পারে, পাখির আঘাত হতে পারে, অন্য কিছু হতে পারে। তদন্ত করতে একটু সময় লাগবে। আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো আপস করে না বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ