ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

বাংলাদেশের উন্নয়নে সঙ্গী হতে চায় বিশ্বব্যাংক

  • ► বিশ্বব্যাংক আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ প্রধানমন্ত্রীর
    ► কিভাবে দারিদ্র্য কমাতে হয় বাংলাদেশ আমাদের শিখিয়েছে : জিম ইয়ং কিম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বাংলাদেশের উন্নয়নে সঙ্গী হতে চায় বিশ্বব্যাংক
আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। ছবি : বাসস

চোখের সামনেই তরতর করে ফুলে-ফেঁপে উঠতে দেখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি। আজ তারা ‘এশিয়ান টাইগারের’ খ্যাতি পেয়েছে। বাংলাদেশে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার সেসব দিনের কথা মনে পড়ল বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাতারে পৌঁছবে বলে মনে হয়েছে তাঁর।

এ জন্য বাংলাদেশের জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করে ভবিষ্যৎ উন্নয়নযাত্রায় শামিল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন, আগামী দিনেও এ দেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক, সহায়তাও অব্যাহত থাকবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করার ওপরও জোর দিলেন তিনি।
 

আর বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে  দেশের অর্জনের প্রশংসা লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টাকে আরো বেগবান করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন প্রয়াসে অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদী। এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারি আরো জোরদারের প্রত্যয়ও জানান তিনি। 

বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠানে তাঁরা এসব কথা বলেন।

এর আগে গতকাল দিনের শুরুতেই সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী তিন বছরে বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি শিশুর অপুষ্টি রোধে আগামী দুই বছরে বাড়তি ১০০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন তিনি। 

দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জিম ইয়ং কিম দরিদ্র কোরিয়াকে চোখের সামনেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্যানেল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘১৯৫৯ সালে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার মতো শর্ত পূরণের সক্ষমতাও ছিল না দক্ষিণ কোরিয়ার। কিন্তু দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে জনগণের পেছনে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া আজকের পর্যায়ে এসেছে।

জনসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশও কোরিয়ার পর্যায়ে উন্নীত হবে। বিশ্বব্যাংকও সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের মানুষের দক্ষতা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও আমরা সহায়তা অব্যাহত রাখব।’

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের ওই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার, বেসরকারি খাতের মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক ও অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির উপস্থিত ছিলেন।  

ঘানা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলোচনায় বাংলাদেশের মানুষের দক্ষতার প্রশংসা করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘ঘানার একটি শিল্প-কারখানার উৎপাদন ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেছেন একজন বাংলাদেশি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এমন উদ্ভাবন শক্তি দেখতে চাই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।’

জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষগুলো অনেক সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল। যেকোনো কাজে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগাও বাংলাদেশ, উন্নতির বাংলাদেশ।’

মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে। আর তাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা একত্রে এই যাত্রায় শামিল হতে আগ্রহী। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা উদাহরণ সৃষ্টি করবে।’

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ এটা স্বীকৃতি দিয়েছে যে জনগণের পেছনে বিনিয়োগ তথাকথিত অবকাঠামো, সেতু, সড়ক ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিনিয়োগ মানুষকে শিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে কার্যকরভাবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তুলবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া ও ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করতে বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভালো মানের অনেক বেশি চাকরির ব্যবস্থা করা এবং জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। এর সঙ্গে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে হবে। 

জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে দারিদ্র্যের হার কমিয়েছে, তা আমাদের এই আশা জোগায় যে ভবিষ্যতে দারিদ্র্য কমার ধারা অব্যাহত থাকবে। অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশের কাছ থেকে এই কৌশল অনুকরণ করবে। কিভাবে দারিদ্র্য কমাতে হয় বাংলাদেশ আমাদের শিখিয়েছে। আর তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উদ্ভাবনী। নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণার কারণে অত্যন্ত দ্রুত গরিবের সংখ্যা কমেছে। অবশ্য এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।’ সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমাকে অসাধারণ ও চমৎকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, এ দেশের রাজনীতিবিদরা নিজেরা বুঝতে পেরেছেন অতি দারিদ্র্যের হার কমাতে নারীদের ক্ষমতায়ন জরুরি। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে অর্ধেক নারী। অর্থনীতিতে তাদের অবদান ছাড়া বাংলাদেশ কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পন্ন হতে পারবে না।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাংকপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ জিডিপির ২ শতাংশেরও কম। অথচ ভিয়েতনামে তাদের জিডিপি ৬ শতাংশ। বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। সে জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানো, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

প্যানেল আলোচনার শুরুতেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সরকারের প্রধান লক্ষ্য বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে দেশের মানুষ তাদের আজকের সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে সুবিধা ভোগ করতে পারে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করার চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে পৌঁছতে আমি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের সরকার সুবিধা দেবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সামাজিক খাত—শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি সরকারের অগ্রাধিকার খাত।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চাহিদা বাড়ানো। তাতে সফলও হওয়া গেছে। এখন দেশের মানুষের মধ্যে বিপুল চাহিদা কাজ করছে। কয়েক বছর ধরে কৃষি উৎপাদনও অনেক বেড়েছে।

তবে বাংলাদেশের অগ্রগতি সত্ত্বেও শিল্প খাতে যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে যাচ্ছে—এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শহর ও গ্রামের বৈষম্য কমানোর ওপর জোর দিয়েছি। গ্রামাঞ্চলে অনেক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, সেখানেই গ্রামের মানুষ কাজ করছে। দেশের ৫০ লাখ পরিবার রেশন সুবিধা পাচ্ছে, যাদের কার্যত বিনা মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি সরকারের ভর্তুকির ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করলেও আমরা এ কাজকে ভর্তুকি বলছি না। এটি জনগণের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেসরকারি খাতনির্ভর। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বেসরকারি খাতের অবদান ৮২ শতাংশ। সরকার যেসব নীতি গ্রহণ করে তা মূলত বেসরকারি খাতের উন্নয়নকেন্দ্রিক। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার বলেন, পল্লী এলাকা বা গ্রামের মানুষকে ভালো রাখতে হলে সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে, অবকাঠামোগত সুবিধা ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়াকালীন ও এরপর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এক প্রশ্নে স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী বলেন, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করেছে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নও প্রতিষ্ঠা পাবে। এ জন্য নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চালু রাখা হয়েছে। সরকার লৈঙ্গিক বৈষম্য কমাতে পৃথক বাজেট দেওয়া শুরু করেছে, তাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নারীর উন্নয়নে পৃথক বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখছে। মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মোহাম্মদী গ্রুপের এমডি রুবানা হক বলেন, ‘বেসরকারি খাতের বিকাশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা দূর করতে সরকারের নীতি সহায়তা দরকার। বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে সংকট রয়েছে, তবে তা দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের সরকার, সুধীসমাজ, এনজিও মিলে সামাজিক খাতের উন্নয়নে কাজ করছে। এতে বাংলাদেশের দক্ষতাও বেড়েছে। বিশেষ করে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। শিশু অধিকার রক্ষা ও নারীর প্রতি সহিংসতাও কমেছে।    

বিশ্বব্যাংকের আরো জোরালো ভূমিকার প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর : প্যানেল আলোচনার আগে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আরেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিদ্যমান অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী হবে। বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের এই প্রয়াসে বিশ্বব্যাংক আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে।’

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে মানব-উন্নয়ন সূচকে মধ্যম ক্যাটাগরির দেশ এবং মাথাপিছু আয় বিবেচনায় নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ২০২১ সাল নাগাদ তা ৭ বা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই। বর্তমানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা সহসাই স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে আসব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের জনমিতিক সুবিধার সদ্ব্যবহার করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কিছু হাইটেক পার্ক, সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রতিষ্ঠাসহ বেসরকারি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছি।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়ন ও অর্জনে বাংলাদেশ অন্যতম সফল দেশ হিসেবে বিবেচিত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এমডিজি বাস্তবায়নের দৃঢ়ভিত্তিকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে সেগুলো জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করেছি। নির্ধারিত সময় ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম ওজন, খর্বাকৃতি ও অন্যান্য অপুষ্টিজনিত সমস্যাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য মাতৃ ও শিশু পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে এ খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। আমরা জাতীয় পুষ্টি নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করেছি। ভবিষ্যতে আমরা পুষ্টিসেবা কার্যক্রম আরো প্রসারিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ফোরামে বহুবার উল্লেখ করেছি যে বিশ্ব আজ সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ নামের দুটি অন্যতম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমার সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। দেশের জঙ্গিবাদ দমনে আমরা সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রমকেও আরো শাণিত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের আমলে নানা খাতে উন্নয়ন ও অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব আমাদের উন্নয়নের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এর ফলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আশা করি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন পরিবেশসংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা জলবায়ু-সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তহবিল থেকে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে পদ্ধতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নামে একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত ও বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন বক্তৃতা করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহ উদ্দীন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্যরা, সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ‘অ্যান্ড পোভার্টি’ শীর্ষক একটি ভিডিও সংগীত পরিবেশন করেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সমাবেশ আজ

১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের জাতীয় সমাবেশ। এবারই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নানামুখী প্রস্তুতি।

সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়।

তবে সকাল ১০টা থেকেই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার বাস, বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চে আসবেন নেতাকর্মীরা। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম আশা করছে দলটি।

এ জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেন রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করবে, রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এর অনুমোদন দিয়েছে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতরাও থাকবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

সমাবেশের মূল লক্ষ্য ৭ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন ও আদায়ের অঙ্গীকার।

এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারকে ভোটাধিকার প্রদান।

জাতীয় সমাবেশ সফল করতে কাজ করছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং অধীন আটটি উপকমিটি। দেশের সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ভ্রাম্যমাণ মাইক এবং সাংস্কৃতিক দল নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গান, নাটিকা আর স্লোগানে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নগর থেকে গ্রামান্তরে।

সমাবেশস্থলে থাকবে কড়া নিরাপত্তা।

২০টি নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে থাকবেন, যাঁদের জন্য থাকছে আলাদা ইউনিফর্ম। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষের গাড়ি রাখার জন্য ১৫টি আলাদা পার্কিং জোন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

অতিথিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা।

বৃহৎ জনসমাগমের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও ক্যামেরা, যা প্রদর্শিত হবে এলইডি স্ক্রিনে এবং একযোগে প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবেও।

এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন লাখো মানুষ। তিনি নগরবাসীর কাছে সম্ভাব্য যানজট ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। দলটি সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামীর সংলাপে আবার যথারীতি তাদের আগের এ অবস্থানই তারা তুলে ধরবে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে, সেটার বিরোধিতা করবে না দলটি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করবে।

অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করবে; মানে দলীয় অঙ্গীকার থেকে সরে যাবে না বিএনপি।

সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলোযাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম।

সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল।

পরদিন মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে।

অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ ২১টি দল ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে। কয়েকটি দল এমনও প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষেরই দরকার নেই।

দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কিভাবে নির্বাচিত হবেনএ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজে বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও একমত হতে পারেনি দলগুলো।

কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেএমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে।

জামায়াত জানায়, পিআর (ভোটের অনুপাতে) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০% মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকারযে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আগামীতে আরো আলোচনা হবে।

মন্তব্য
সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো দাবি করেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন ও জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি চক্রান্ত চলছে, গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই অংশ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক আইজিপি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জের মতো এত বড় ঘটনা ঘটত না।

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি আরো বলেন, পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে এবং যথাযথভাবে কাজ করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সোহাগ হত্যা প্রসঙ্গে আশরাফুল হুদা বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দুই দিন পর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়, এটা দুঃখজনক।

এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, বলেন তিনি।

মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব সময় ভুক্তভোগীরাই মব ভায়োলেন্স করে না, অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও এটি সংঘটিত হয়। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণএ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিক দল।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটা যেন মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। সমাজের ক্যান্সার হিসেবে এই সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক আরো বাড়বে।

মন্তব্য
মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ট্রাম্প

অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

অন্য দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসগুলোতে তারবার্তা পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, এই নিয়ে কোনো দেশের মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যেন মন্তব্য না করেন। গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে এই তারবার্তা।

এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাস কিংবা ওয়াশিংটন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে না।

নির্বাচনে বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানানো এবং যথাযথ সময়ে বিজয়ী পক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা শুরুর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, বৈধ হয়েছে কি হয়নি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে কি পারেনিএসব নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকরা আগ বাড়িয়ে মন্তব্য তো করবেনই না, এমনকি কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

তারবার্তায় বলা হয়, অবশ্য কোনো দেশের নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে এই নির্দেশনার ব্যতিক্রম ঘটবে; তবু সে ক্ষেত্রে ওই দেশের মার্কিন দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত বা কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকরা কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মুখপাত্ররা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং তা উদযাপনও করছে। অন্যান্য দেশও একই পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, সেই দেশের সঙ্গে তিনি মার্কিন অংশীদারি বিস্তারের পক্ষে। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ