বিশ্বের নজর এখন বাংলাদেশের ওপর। দুই দিনের সফর শেষে গতকাল শনিবারই ঢাকা ছেড়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। এবার আসছেন বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। উন্নয়নের বার্তা নিয়ে তিন দিনের সফরে আজ রবিবার ঢাকায় আসবেন তিনি।
উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতার প্রত্যাশা
দারিদ্র্যজয় দেখতে আসছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট
আরিফুর রহমান

সফরকালে দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভূত জিম ইয়ং কিম বিশ্ববাসীকে শোনাবেন বাংলাদেশের দারিদ্র্য জয়ের গল্প। দারিদ্র্যকে কিভাবে জয় করতে হয়, বাংলাদেশের কাছ থেকে সেই কৌশল শিখতে বিশ্বের অনুন্নত দেশের প্রতি পরামর্শ থাকবে তাঁর।
পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের পর এটিই হবে সংস্থাটির কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
জিম ইয়ং কিমের কণ্ঠেও একই সুর। বাংলাদেশে আসার আগের দিন গতকাল বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি বাংলাদেশে যাওয়ার; যে দেশটি এক দশকে দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের এ কৌশল অন্য দেশগুলো অনুসরণ করতে পারে।’ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার জানার খুব আগ্রহ যে বিনিয়োগ ও শাসনব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক কিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক। এরপর গত আট বছর সংস্থাটির কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসেননি। আগামীকাল (১৭ অক্টোবর) বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে এবার সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর এ দিবস পালন কমর থাকে। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য দেখিয়েছে এমন একটি দেশকে প্রতিবছর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে সেই দেশে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান করে থাকে বিশ্বব্যাংক। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবার বাংলাদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগেরবার মূল অনুষ্ঠানটি করা হয়েছিল আফ্রিকার দেশ ঘানায়।
আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় পা রাখবেন জিম ইয়ং কিম, উঠবেন রেডিসন হোটেলে। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার। সফরকালে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামীকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বক্তব্য দেবেন তিনি। বাংলাদেশ কিভাবে গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকেরও নিচে নামিয়ে এনেছে, বক্তব্যের বড় একটি অংশজুড়ে থাকবে সেসব কথা। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন দেখতে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রাম দেখতে যাবেন তিনি। যেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে।
বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের এ সফরকে গুরুত্ব সহকারেই দেখছে সরকার। কারণ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে সরকারের আরো বেশি অর্থ দরকার। আর তাতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরো বেশি করে সহায়তা আশা করছে সরকার। অবশ্য সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর আভাস দিয়েছে গত অর্থবছর থেকেই। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র বলছে, আগের অর্থবছরগুলোতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এক অনুকরণীয় নাম—এত দিন সরকারের নীতিনির্ধারকদের মুখ থেকে কথাটি শোনা গেলেও গত ২ অক্টোবর এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি বলেছে, সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার কমে ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সংখ্যায় হিসাব করলে অতিদারিদ্র্যের এ সংখ্যা দাঁড়ায় দুই কোটি ৮০ হাজারে। ২০০৫ সালে এ হার ছিল ৪৩.৩ শতাংশ। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি-পিপিপি) অতিদারিদ্র্যের হার পরিমাপ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে এখন ১২.৯ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র; যাদের দৈনিক আয় ১.৯০ ডলারের কম। এক ডলারে ৭৮ টাকা ধরে হিসাব করলে বলা যায়, দিনে ১৪৮ টাকার কম আয় করে তারা। ২ অক্টোবর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, অতিদারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের অর্জন অবিস্মরণীয়। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের মতো দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। দ্রুতগতিতে দারিদ্র্যের হার নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ বিস্ময়কর অগ্রগতি দেখিয়েছে। জিম ইয়ং কিম তাঁর বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরবেন বিশ্বের সামনে।
বাংলাদেশের দারিদ্র্য জয়ের এ চিত্র শহরে না যতটা, তার চেয়ে বেশি গ্রামগঞ্জে। একসময় গ্রামের যেসব বাড়িতে ছিল কুঁড়েঘর, এখন সেখানে পাকাঘর। বাঁশের সাঁকো এখন নেই বললেই চলে। অনেক গ্রামে পৌঁছে গেছে পাকা সড়ক। দূরদূরান্তের গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকলেও সৌরবিদ্যুতের আলো দূর করেছে সেখানকার অন্ধকার। গ্রামের গরিব মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সরকারের ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর রয়েছে নানা কর্মসূচি। এককালে ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে বিপুল প্রাণহানি ঘটলেও এখন তা কমানো সম্ভব হয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে। আর এসব প্রকল্প ও কর্মসূচিতে সরাসরি অর্থায়ন করে অংশগ্রহণ কমরছে বিশ্বব্যাংক। জিম ইয়ং কিম তাঁর সফরকালে গ্রামে গিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য জয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা শুনবেন তাদের মুখ থেকে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র বলছে, আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন জিম ইয়ং কিম। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সাধারণত প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় না। আলোচনা হয় কৌশল নিয়ে। বাংলাদেশ যেহেতু সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, সেই কৌশল বাস্তবায়নে সংস্থাটির কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী এখন চলছে ১৫ বছর মেয়াদি (২০১৬-৩০) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)। এসডিজির যে ১৭টি অভীষ্ট ও ১৬৯টি লক্ষ্য রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নেও ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংক যাতে বিনিয়োগ করে সেই আহ্বান থাকবে সরকারের পক্ষ থেকে। আগামীকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘প্যানেল লেকচার’-এ অংশ নেবেন জিম ইয়ং কিম। সেই আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার, বাংলাদেশের মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আসছেন বাংলাদেশকে ‘শো-কেস’ করতে। গত এক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে যে সাফল্য পেয়েছে, তা তিনি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন। মাথাপিছু জাতীয় আয়ের দিকে ভারত থেকে পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক আগেই ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রাথমিক শিক্ষাসহ সামাজিক সূচকগুলোতে এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। জিম ইয়ং কিম দারিদ্র্যের হার কমাসহ সামাজিক সূচকের সাফল্যের কথাও তুলে ধরবেন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কিছুটা টানাপড়েন তৈরি হলেও সেটিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় বিশ্বব্যাংক। তার অংশ হিসেবে প্রতিবছরই বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা যে ভুল ছিল সে বিষয়ে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশের অর্জনের কথা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন জিম ইয়ং কিম। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে নতুন বার্তা পৌঁছাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে, যাতে উল্লেখ থাকবে গত এক দশকে বাংলাদেশ কতটা উন্নতি করেছে। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন দর্শনের বার্তা নিয়ে আসছেন জিম ইয়ং কিম। এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংও করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ ধরনের ইতিবাচক বক্তব্য এলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের সামনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে জিম ইয়ং কিম নিজেই অভিভূত। তাই সরেজমিন বাংলাদেশ সফর করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর আগ্রহেই উপলক্ষ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসকে।
জিম ইয়ং কিম ২০১২ সালের ১ জুলাই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। সংস্থাটির পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম সফরে এসেছিলেন রবার্ট ম্যাকনামারা। আর সর্বশেষ ২০০৭ সালের নভেম্বরে এসেছিলেন রবার্ট জোয়েলিক। সফর শেষে আগামী মঙ্গলবার জিম ইয়ং কিমের ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।