বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি পারস্পরিক মুনাফা ও সমৃদ্ধির পথে আপনাদের অংশীদার ও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এ ধরনের লাভজনক অংশীদারিত্ব দুই দেশের বন্ধুত্ব আরো জোরদার করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিশেষ করে নবায়নযোগ্য ও সবুজ জ্বলানি, জাহাজ নির্মাণ ও প্রক্রিয়াকরণ, গাড়ি ও হালকা যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক সার, কৃষিপণ্য, ওষুধ, সিরামিক ও প্লাস্টিক পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও পর্যটন, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, টেলিযোগাযোগ ও কারিগরি শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বেসরকারি শ্রমঘন শিল্পের জন্য প্রায় ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুত হয়ে গেছে। এ সময় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ নীতি এবং দ্বৈত কর এড়ানো সংক্রান্ত সম্মেলনে স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার চিত্রও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তিনি ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা সফর দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ও প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, টাওয়ার করপোরেশন, ওয়ালমার্ট, মেটলাইফ, বোয়িং, শেভরন করপোরেশন, জেনারেল ইলেকট্রিক, কোকা-কোলাসহ বিভিন্ন কম্পানির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক অব পাবলিক অর্গানাইজেশন’ গঠনের প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক অব পাবলিক অর্গানাইজেশন’ গড়ে তোলার বিষয়ে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমঝোতা এবং গণউদ্ভাবনী খাতের বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি চিন্তাভাবনার সম্প্রসারণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের থেকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
গতকাল সকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সাউথ সাউথ কোঅপারেশন অফিস আয়োজিত ‘সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন ইন স্কেলিং আপ ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি দক্ষিণের বন্ধু দেশগুলোকে প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য এবং উত্তরের দেশগুলোকে এজেন্ডা ২০৩০ ফ্রেমওয়ার্কে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির জন্য সমর্থনের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হলে সকলের জন্য সমতাসূচক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সুদূর পরাহতই থেকে যাবে।’
নতুন কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও নেতৃত্ব চেয়েছে কমনওয়েলথ : নারীর ক্ষমতায়নে কমনওয়েলথের নতুন কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন ও নেতৃত্ব কামনা করেছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া জ্যানেট স্কটল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘আমরা নারীর ক্ষমতায়নসংক্রান্ত নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে আমরা আপনার সমর্থন ও নেতৃত্ব চাই।’
সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্যাট্রিসিয়া এই অনুরোধ করেন। নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন কমনওয়েলথ মহাসচিব। প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড সানন্দে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ঢাকা সফর করবেন বলে জানান।
সংলাপের মাধ্যমে সব দ্বিপক্ষীয় বিষয় সমাধানে সম্মত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার : সংলাপের মাধ্যমে সব দ্বিপক্ষীয় বিষয় সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ ব্যাপারে সম্মত হয় দুই দেশ।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যসচিব ইহসানুল করিম জানান, এই দুই নেতা প্রতিবেশী দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন এবং সংলাপের মাধ্যমে তা সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হন। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নেতা সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সু চি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
শরণার্থী অধিকার রক্ষায় চাই ঐকমত্য : অভিবাসী ও শরণার্থীদের অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশকেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্ল্যানারি বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের এই বৈঠকে এদিন অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিষয়ে নিউ ইয়র্ক ঘোষণা গৃহীত হয়।
জাতিসংঘে অধিবেশন শুরু : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। প্রথমেই বক্তব্য দেন সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পিটার থম্পসনের সভাপতিত্বে বান কি মুনের বক্তব্যের পর প্রথা অনুযায়ী ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমের ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বক্তব্য দেন।
গতকাল সকালের অধিবেশনে আরো ১৫টি দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিকেলের অধিবেশনে ১৮টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্য দেওয়ার কথা।