দেশে দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি থাকতেও কোনো কোনো খাতে চাকরির ক্ষেত্রে বিদেশিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কর্মী নিয়োগ চলছে। এ প্রবণতা শুধু বিদেশি কম্পানি বা সংস্থায়ই নয়, খোদ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এখন বিদেশি কর্মী রাখা রীতিমতো ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বিদেশি থাকলেই যেন প্রতিষ্ঠানের ‘দাম’ বেড়ে যায়।
চাকরিতে বিদেশিপ্রীতি
আরিফুজ্জামান তুহিন ও আরিফুর রহমান

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে ভারতীয়দের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যম ও মাঝারি পদে ভারতীয়দের জয়জয়কার ছিল। এটা ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে এখন ভারত থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয়দের আধিপত্য দিন দিন বাড়ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নিবন্ধন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইপিজেডে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে হলে অনুমোদন নিতে হয় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) থেকে। এনজিওতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয় এনজিও ব্যুরো থেকে। আর আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা যাঁরা বাংলাদেশের ক্লাবগুলোতে খেলতে আসেন, তাঁদের অনুমতি বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও এখন এটি করে থাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডে এখন অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে কাজ করেন তিন হাজারের মতো বিদেশি। বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমতি নিয়ে দেশে কাজ করেন ১৩ হাজার বিদেশি কর্মী। আর এনজিও ব্যুরোর অনুমতি নিয়ে কাজ করা বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ৫০০। সব মিলিয়ে সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশি কর্মী সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে বৈধভাবে কাজ করছেন। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা বহুগুণ বেশি।
বাংলাদেশে আসলে কতসংখ্যক বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তার সঠিক তথ্য সরকারের কোনো বিভাগের হাতেই নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন। তাঁরা তাঁদের দেশে এক বছরে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। বাংলাদেশ ভারতে পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সহজেই অনুমান করা যায়, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে যেসব ভারতীয় কর্মী ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছেন, তার বাইরে বহুগুণ বেশি রয়েছেন, যাঁরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন। আর তাঁদের অর্জিত অর্থ অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমেই পাচার করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরা। এরপর তাঁরা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ভিসার মেয়াদ শেষের আগেই চলে যান। নতুন করে আবার ভ্রমণ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান এসব বিদেশি কর্মীর বেতন পরিশোধ করে রাজস্বমুক্ত বিভিন্ন খাত থেকে। বিদেশি কর্মীরা ডলার করে টাকা নিয়ে যান নিজের দেশে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সব থেকে বেশি বিদেশি কর্মী কাজ করেন পোশাক খাতে। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান যেমন গার্মেন্ট, কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল, ওভেন ও নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, সোয়েটার ফ্যাক্টরি, বায়িং হাউস, মার্চেন্ডাইজিং কম্পানি মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি কাজ করেন এ দেশে, এমন তথ্য বিভিন্ন সময় শ্রমিক নেতাদের সূত্রে বলা হয়েছে।
অথচ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি বিভাগে আসন রয়েছে ৪৮০টি, বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ২৬০টি, চট্টগ্রামের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭০টি, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৮০টি, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৬০টি, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আসন ৬০টি। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও টেক্সটাইল বিভাগে পড়ানো হয়। এ ছাড়া বরিশাল, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা পড়ানো হয়। সব মিলিয়ে প্রতিবছর টেক্সটাইল বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির বাজারে ঢুকছেন দুই থেকে আড়াই হাজার জন।
বিভিন্ন বহুজাতিক কম্পানি, বেসরকারি বিদ্যুৎকন্দ্র, আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, খাদ্য উত্পাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন কম্পানি, পোল্ট্রি খাদ্য উত্পাদক প্রতিষ্ঠান, চামড়াজাত প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি, মিডিয়া রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনি সংস্থাসহ সাধারণ ফার্নিচারের দোকানেও বিদেশিরা কাজ করছেন।
জানতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিনিয়োগ বোর্ড যেসব কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট দেয়, আমরা শুধু তাঁদের ব্যাপারেই নজরদারি করতে পারি। এর বাইরে যাঁরা আসেন তাঁদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’ তিনি বলেন, বিনিয়োগ বোর্ডের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এটি প্রাথমিক তথ্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কতসংখ্যক বিদেশি কাজ করেন, তা বের করার জন্য বিনিয়োগ বোর্ড অনুসন্ধান করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সংখ্যা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে কতসংখ্যক বিদেশি নাগরিক অনুমতি নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করছেন জানতে চাইলে এনজিও ব্যুরোর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) কে এম আবদুস সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাঁচ শর মতো বিদেশি নাগরিক আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ করছেন।’
বিনিয়োগ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, দেশি বা বিদেশি কোনো শিল্পোদ্যোক্তা যদি তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ দিতে চান, তাহলে তাঁকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা দেশের জনশক্তিকে। সেটি যদি পাওয়া না যায়, তাহলে বিদেশি নাগরিক আনা যেতে পারে। কিন্তু শিল্পোদ্যোক্তারা এসব না মেনেই বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দেন। বিনিয়োগ বোর্ডের আইনে আরো বলা আছে, কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে একজন বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দিলে তার বিপরীতে ২০ জন দেশীয় কর্মী নিয়োগ দিতে হবে বা থাকতে হবে। আর প্রতিষ্ঠানটি যদি বায়িং হাউস বা বাণিজ্যিক অফিস হয়, সেখানে একজন বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দিলে তার বিপরীতে পাঁচজন দেশীয় কর্মী নিয়োগ দিতে হবে বা থাকতে হবে। তবে তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী বহুজাতিক বিদেশি কম্পানি হলে সে ক্ষেত্রে এ শর্ত শিথিল হবে। এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কম্পানি শেভরনে বহু বিদেশি কর্মী কাজ করেন। আর অন্যান্য দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত মানে না। উদ্যোক্তাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি নেই।
আরো নিয়ম আছে, যে প্রতিষ্ঠানে বিদেশিরা কাজ করবেন, এ দেশের শ্রমবাজারের দক্ষতা তৈরি হলে ক্রমান্বয়ে তাঁদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর সেই শূন্যস্থান দেশীয় লোকবল দিয়ে পূরণ করতে হবে। তবে এসব সরকারের আইন ও কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে বহু বিদেশি কম্পানি সাধারণ কাজের জন্যও বিদেশ থেকে লোক আনছে। বছরের পর বছর এসব বিদেশি বাংলাদেশে চাকরি করছেন। ওই সব কম্পানির উচ্চ পদে সবাই বিদেশি। সেখানে বাংলাদেশিদের নিয়োগই হয় না।
মুরগি, ডিম, মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাদ্য উত্পাদনকারী একটি বড় প্রতিষ্ঠানে ড. শিবাজি নামে একজন ভারতীয় আড়াই লাখ টাকার বেশি বেতনে চাকরি করেন। ভেটেরিনারি মেডিসিনের এই বিদেশি নাগরিকের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তি বাংলাদেশে প্রতিবছর বের হয় অন্তত ছয় হাজার। কিন্তু তাঁরা সবাই চাকরি পান না। যাঁরা পান, তাঁরা অনেক কম বেতনে চাকরি করেন।
জানা গেছে, সারা দেশে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও এনিম্যাল হাসব্যান্ড্রি পড়ানো হয়। একেকটি বিভাগে গড়ে ১৫০ জন করে আট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী প্রতিবছর চাকরির বাজারে ঢোকেন। তাঁদের কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদে অনেক বেশি বেতন দিয়ে দেশের বাইরে থেকে লোক আনা হয়।
ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আফতাব ফিডে বহু বিদেশি চাকরি করেন বলে জানা গেছে, যাঁদের বেতন মাসে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এঁদের একজন ফিলিপাইনের নাগরিক জন্ডিলা বাইয়ান। তিনি ফিলিপাইনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনিম্যাল হাসব্যান্ড্রি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি আফতাব ফিডের চিফ নিউট্রিশনিস্টের দায়িত্বে রয়েছেন; প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বেতন পান। এ প্রতিষ্ঠানে বয় নামের আরেক ফিলিপিনো পুষ্টিবিদ কাজ করেন উঁচু বেতনে। অথচ এখানে যেসব দেশি কর্মী এনিম্যাল হাসব্যান্ড্রি থেকে মাস্টার্স করে পুষ্টিবিদ হিসেবে কর্মরত আছেন, তাঁদের বেতন গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে।
জানতে চাইলে আফতাব ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফ ফজলে শাহরিয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়েই বিদেশিদের নিচ্ছি। কারণ এ খাতটি নবীন। যেসব দেশ ইতিমধ্যে পোল্ট্রি সেক্টরে ভালো করেছে, তাদের জ্ঞান আমাদের দরকার। তবে এ পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না। আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে তখন দেশের মানবসম্পদ দিয়েই এ খাত পরিচালনা করা যাবে।’
কনসালট্যান্টরা নিয়ে যান নগদ ডলার : ড. জোয়ার্দার নামে একজন ভারতীয় কনসালট্যান্ট বা পরামর্শক প্রতি মাসে বাংলাদেশে আসেন। বিভিন্ন পোল্ট্রি খাদ্য ও মুরগি উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাঁকে আনা হয়। তিনি কাজ করেন কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি ফার্ম, নারিশ ও সিপির মতো প্রতিষ্ঠানে। প্রতি মাসে একেকটি প্রতিষ্ঠান তাঁকে তিন লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে থাকে। ড. জোয়ার্দার, ড. শিবাজির মতো অনেক বিদেশি পরামর্শক বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে বিপুল অর্থ নিয়ে যান ডলার করে।
রাজস্ব ফাঁকি : বিদেশিরা শুধু দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানেই সংকট সৃষ্টি করছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। বর্তমান আইনে বিদেশিদের অর্জিত আয়ের ৩০ শতাংশ কর দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান অবৈধ কিংবা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশিদের নিয়োগ দিলে ওই কম্পানির প্রদেয় আয়করের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে এ জরিমানা কাউকে কখনো করা হয়েছে কি না তা কেউ জানাতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানছেন না বিদেশিরা।
প্রকৃতপক্ষে কত বিদেশি দেশে আছেন তা কোনো সংস্থাই জানে না। গত ২৮ জানুয়ারি বিনিয়োগ বোর্ড, এনজিও ব্যুরো ও বেপজাকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের তালিকা পাঠাতে অনুরোধ করেছে এনবিআর। বিষয়টি ‘অতি জরুরি’ উল্লেখ করা হলেও এমন তথ্য কত দিনে পাঠাতে হবে, চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়নি।
সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ‘অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।
মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।’
গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।’

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।
মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।
অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।
তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।
সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
বরগুনা প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।