ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

পোকায় খাওয়া গম আমদানি পাকাপোক্ত

  • * ৫০ হাজার টন আমদানির টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ
    * বাতিলের জন্য আইনি নোটিশ
এম বদি-উজ-জামান ও আশরাফুল হক রাজীব
এম বদি-উজ-জামান ও আশরাফুল হক রাজীব
শেয়ার
পোকায় খাওয়া গম আমদানি পাকাপোক্ত
ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানির কারণে দেশজুড়ে সমালোচনার উত্তাপ কমতে না কমতেই পোকায় খাওয়া গম আমদানির ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। গত ২৯ জুলাই গম আমদানির স্পেসিফিকেশনের (বিনির্দেশমালা) সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে অধিদপ্তর। নতুন স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, আমদানি করা গমে ক্ষতিগ্রস্ত দানা ৩ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এই ৩ শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পোকায় খাওয়া দানা গ্রহণযোগ্য।
অথচ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ব্রাজিল থেকে আনা ওই গম নিতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না বলে সরকারকে বিশেষ নির্দেশনা দেন। মূলত নষ্ট গম আমদানি ও দুর্নীতির সুযোগ রাখার জন্যই স্পেসিফিকেশন শিথিল করা হয়েছে, যা সংবিধানের লঙ্ঘন বলছেন আইনজীবীরা।
নতুন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির টেন্ডার (দরপত্র) আহ্বান করা হয়েছে। এই টেন্ডারেই বলা হয়েছে, দশমিক ৫ শতাংশ পোকায় খাওয়া গম গ্রহণযোগ্য হবে।
কোনো আন্তর্জাতিক টেন্ডারে এই প্রথম পোকায় খাওয়া গম নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হলো। এর আগে যত টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, তার কোনোটিতেই পোকায় খাওয়া গম নেওয়ার শর্ত ছিল না।
বিদেশ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য খাদ্য অধিদপ্তর গত ১৩ আগস্ট যে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করেছে, তার শর্তাবলির ২৬(২) নম্বরে আমদানিকৃত গমের ক্ষতির পরিমাণ কী হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দশমিক ৫ শতাংশ পোকায় খাওয়া গম সরবরাহ করা যাবে।
খাদ্য অধিদপ্তরে এই টেন্ডার আজ বৃহস্পতিবার জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু টেন্ডার জমা দেওয়ার আগেই এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট পাবেল মিয়া। পোকায় খাওয়া গম আমদানির সুযোগ রেখে দেওয়া ওই দরপত্র বাতিল করার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনি নোটিশ দিয়েছেন। তাঁরা গত ২৪ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রকিউরমেন্ট শাখার পরিচালককে পোকায় খাওয়া গম আমদানি থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ওই টেন্ডার বাতিল করতে বলা হয়েছে।
অন্যথায় তাঁরা আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে নোটিশে বলেছেন।
নতুন স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দানা ৩ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এই ৩ শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ গমে ক্ষতিগ্রস্ত দানা ও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পোকায় খাওয়া দানা গ্রহণযোগ্য। আগের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত দানা সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হতো। এর মধ্যে শন্য দশমিক ৫ শতাংশ গমে ক্ষতিগ্রস্ত দানা মেনে নেওয়া হলেও পোকায় খাওয়া দানার কোনো উল্লেখ ছিল না। এবারই প্রথম স্পেসিফিকেশনে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পোকায় খাওয়া দানা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের স্পেসিফিকেশনে আমদানিকৃত গমের টেস্ট ওয়েট ছিল সর্বনিম্ন ৭২ কেজি। নতুন স্পেসিফিকেশনে টেস্ট ওয়েট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ কেজি। টেস্ট ওয়েট ৭৫ কেজির নিচে হলে তা গ্রহণ করা হবে না। আগে ভাঙা দানা সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ গ্রহণ করা হতো। বর্তমানে তা ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। অন্য শ্রেণির মিশেল গম আগে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হতো। বর্তমানে তা ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। আগে গমের প্রোটিন মান সর্বনিম্ন ৯.৫০ শতাংশ গ্রহণ করা হলেও বর্তমানে ১২.৫০ শতাংশের কম গ্রহণ করা হয় না। এ ছাড়া পাথর বা কঙ্কর সর্বোচ্চ এক শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের স্পেসিফিকেশনে ৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত দানার কথা উল্লেখ থাকত। নানা কারণে গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে গরম, পোকাসহ আরো কারণ রয়েছে। সরবরাহকারী যদি পুরোটাই পোকায় খাওয়া দানা সরবরাহ করতেন তাহলে খাদ্য অধিদপ্তর তা নিতে বাধ্য হতো। বর্তমান স্পেসিফিকেশনে পোকায় খাওয়া দানা কতটা গ্রহণ করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত গম ৩ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে পোকায় খাওয়া গম নেওয়া হবে শন্য দশমিক ৫ শতাংশ। বিষয়টি স্পেসিফিকেশনে নতুন হলেও এর চর্চা আগে থেকেই ছিল। বর্তমান স্পেসিফিকেশনে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।’
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পাবেল মিয়ার পক্ষে আইনি নোটিশদাতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, পোকায় খাওয়া গম আমদানির ধারা অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশে নিম্নমানের গম আসবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিম্নমানের গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে খাদ্যসচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেখানে বলা হয়েছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন।’ এ ছাড়া সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে ব্যক্তির জীবনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কিন্তু দেশে পোকায় খাওয়া গম আমদানি করে জনস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বেআইনি। তিনি বলেন, টেন্ডারে পোকায় খাওয়া গম আমদানির শর্ত জুড়ে দেওয়ায় দুর্নীতিরও পথ খোলা হয়েছে। এ জন্যই দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ও সম্পদের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টেন্ডার বাতিল করার জন্য আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ নোটিশ পাওয়ার পর যদি ওই টেন্ডার বাতিল করা না হয় তবে রিট আবেদন করা হবে।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে চার জাহাজে প্রায় আড়াই লাখ টন গম আমদানি করে খাদ্য অধিদপ্তর। এ গম রেশন হিসেবে পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করতে আপত্তি জানায়। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নিম্নমানের গম কে বা কারা সরবরাহ করল, খাদ্য অধিদপ্তর কেন গ্রহণ করল তা খতিয়ে দেখার জন্য খাদ্যসচিব মুশফেকা ইকফাৎকে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে এসব গম দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি উচ্চ আদালতে গেলে এই গম কাউকে নিতে বাধ্য করা যাবে না বলে রায় দেওয়া হয়। কয়েকজন সংসদ সদস্য তাঁর নির্বাচনী এলাকার খাদ্য গুদাম থেকে এ গম বিতরণে বাধার সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে ওএসডি করা হয়। নতুন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমদকে। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরে যোগ দিয়েই নিম্নমানের গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত চতুর্থ জাহাজটির গম খালাস করতে আপত্তি জানান। শেষ পর্যন্ত ওই নিম্নমানের গম সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর গ্রহণ না করলেও তা ব্রাজিলে ফেরত যায়নি। বাংলাদেশেরই কোনো কোনো সংস্থা এসব গম কিনে আটা করে দেশের বাজারে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ আছে।
মন্তব্য
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।

এতে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এতে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে, যা জনগণ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।

তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় সমাবেশে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।

তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।

ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবেএলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।

সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।

সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।

এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোঅবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন; জুলাই শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

মন্তব্য

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সিনিয়র সহকারী  প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং  ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।

তাঁদের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।

তার মানে নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁরা ভোটার হওয়ার সুযোগ পান না। বরং আগের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাঁরাই ভোটাধিকার পান।

ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল  ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম  বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।

 

তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমনভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। 

অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

প্রেস সচিব আরো বলেন, এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন। 

একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত আরো তিনজন পুলিশ সদস্যকেও রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে। কাউকে কোনো রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

 

মন্তব্য

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।

তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা  বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়।  এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।

নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতাগণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার ছিল না।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা,  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।  সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সে সময় নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়াতে দ্বিতীয়বার আবেদন আহবান করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন  নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল  সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও  ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।

এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালায়  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও এর সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক সংস্থার  নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। ওই সময় প্রথমবারের মতো ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ