<p> বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী সৈনিক অন্তর্ভুক্তির মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র, সমাজ ও বিভিন্ন পেশায় কৃতিত্ব অর্জনকারী নারীদের কথা স্মরণ করে বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাবে, যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।</p> <p> গতকাল বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শহীদ শাহেদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিক্যাল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের শহীদ বীর-উত্তম সিপাহি নুরুল ইসলাম প্যারেড গ্রাউন্ডে মেডিক্যাল কোরের প্রথম মহিলা রিক্রুট ব্যাচ-৭১ এর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের নামফলক ও বিভিন্ন স্থাপনার ফলক উন্মোচন করেন।</p> <p> বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে আর্মি মেডিক্যাল নারী অফিসারের পাশাপাশি অন্যান্য কোরেও মহিলা অফিসার নিয়োগের পর এই প্রথম নারী সৈনিক অন্তর্ভুক্ত করা হলো। গতকাল শপথগ্রহণের মাধ্যমে ৮৭৯ জন নারী সৈনিক তাঁদের সাহসী পেশাগত জীবন শুরু করলেন।</p> <p> সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বছর ২৬ জানুয়ারি এসব নারীকে প্রাথমিক নিয়োগ দেওয়ার পর এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা সৈনিক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন। আরো দুই বছর তাঁদের ডিপ্লোমা ইন প্যারামেডিকসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। প্রথম এই নারী রিক্রুট ব্যাচের মোসা. মেমোরি হাসান প্রথম ও শান্তনা রানী মণ্ডল দ্বিতীয় সেরা রিক্রুট বিবেচিত হন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এসব নারী সৈনিকের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। বেগম রোকেয়া কন্টিনজেন্ট, প্রীতিলতা কন্টিনজেন্ট, সুফিয়া কামাল কন্টিনজেন্ট, সেতারা বেগম কন্টিনজেন্ট- এসব নামের বিভিন্ন দলে তাঁরা কুচকাওয়াজে অংশ নেন।</p> <p> এ ছাড়া জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি উন্নত দেশগুলোরও নজর কাড়ে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা তাঁদের প্রশিক্ষণ দেখতে শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসে আসেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াও তিন বার এ প্রশিক্ষণ পরিদর্শনে আসেন।</p> <p> শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, "আমরা জানি ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে নার্সিং সার্ভিসের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই নার্সিং সার্ভিস আজ পৃথিবীর সব সেনাবাহিনীর অপরিহার্য অংশ হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল সার্ভিস আরো বিস্তৃত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আর্মি মেডিক্যাল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল 'ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ টেকনোলজি' পরিচালনার অনুমতি দেয়।"</p> <p> প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজ ৮৭৯ জন নবীন মহিলা প্রশিক্ষণার্থী তাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে শপথ গ্রহণ করলেন। আমি সব নবীন সৈনিককে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই আর ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মো-বোনকে।'</p> <p> প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী বিবি খাদিজা (রা.), আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেসা, মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ড. সেতারা বেগম, তারামন বিবি, এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজনিন, সেনাবাহিনীতে কর্মরত দেশের প্রথম প্যারাট্রুপার ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রথম সামরিক বৈমানিক বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফীকেও স্মরণ করেন।</p> <p> প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন আর্মস ও সার্ভিসের মহিলা অফিসাররা দেশে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মহিলা অফিসারের পাশাপাশি মহিলা সৈনিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এ ছাড়া তিনি ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।</p> <p> অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সেনাপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং নবীন নারী সৈনিকদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p> নারী সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের নামফলক উন্মোচন করেন। সেখানে তিনি জাতির পিতার একটি মুর‌্যাল উন্মোচন করেন। সেনানিবাসের নবনির্মিত সদর দপ্তর, ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেড অফিস ভবন, ১২ তলা বিশিষ্ট অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স, অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সৈনিকদের জন্য বহুতল পারিবারিক বাসস্থানের ফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সেনানিবাসে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার ও ঘাটাইল এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. সফিকুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান।</p> <p>  </p> <p>  </p>