<p style="text-align: center;"><strong>সৃজনশীল প্রশ্ন</strong></p> <p style="text-align: center;"><strong>প্রথম অধ্যায়</strong></p> <p style="text-align: center;"><strong>ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতাসংগ্রাম</strong></p> <p><strong>উদ্দীপকটি  পড়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :</strong></p> <p>টেলিভিশনে জলিল একটি নাটক দেখছিল। নাটকের একপর্যায়ে জলিল দেখল কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সেনাপতির কারণে রাজার পরাজয় ঘটে।</p> <p>ক) নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোন যুদ্ধে পরাজিত হন?</p> <p>খ) বঙ্গভঙ্গের কারণ ব্যাখ্যা করো।</p> <p>গ) জলিলের দেখা নাটকটির সঙ্গে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>ঘ) ঘটনাটির ফলাফল পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।</p> <p>উত্তর :</p> <p>ক) নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন।</p> <p>খ) প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি, সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সাম্প্র্রদায়িক বৈষম্য কমাতে বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা ছিল বড় একটি প্রদেশ; আর যোগাযোগব্যবস্থাও ছিল অনুন্নত। একজন গভর্নরের পক্ষে প্রদেশটির শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য ছিল। রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বেশি হওয়ায় পূর্ব বাংলার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছিল। কলকাতা ছিল পশ্চিম বাংলায় আর সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস থাকায় তাদের উন্নতি বেশি হচ্ছিল। ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ায় সাম্প্র্রদায়িক বৈষম্য বাড়ছিল। এসব অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করেন।</p> <p>গ) জলিলের দেখা নাটকটির সঙ্গে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়বরণের মিল রয়েছে।</p> <p>বাংলা-বিহার-ওড়িশার স্বাধীন নবাব ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। তাঁর মৃত্যুর পর নবাব হন তাঁর নাতি সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু বিষয়টি সিরাজউদ্দৌলার নিকট আত্মীয়-স্বজনের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা তাঁকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ষড়যন্ত্রকারী আত্মীয়দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ঘসেটি বেগম, মীরজাফর ও শওকত জং। তা ছাড়া রাজদরবারের অনেক প্রভাবশালী ও অভিজাত ব্যক্তি যেমন—উমিচাঁদ, জগৎ শেঠ ও রাজবল্লভ এ ষড়যন্ত্রে শরিক হন। এ অবস্থাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায় ইংরেজরা। ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসন ও রবার্ট ক্লাইভ মাদ্রাজ থেকে সেনাবাহিনী নিয়ে এসে কলকাতা দখল করে নেন। এরপর নবাবের রাজধানী মুর্শিদাবাদ দখল করতে রবার্ট ক্লাইভ পলাশির আম্রকাননে উপস্থিত হন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে যুদ্ধে সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলা-বিহার-ওড়িশার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। উদ্দীপকে উল্লিখিত জলিল যে নাটকটি দেখছিল সেখানেও অনুরূপ ঘটনাই ঘটে।</p> <p>ঘ) উদ্দীপকের ঘটনাটি অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে বাংলার স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়বরণ করার পর নবাবকে আটক করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ইংরেজরা মীরজাফরকে নবাব বানালেও মূল ক্ষমতা চলে যায় ধূর্ত ও দুর্ধর্ষ ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের হাতে। পরবর্তী সময়ে ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা-বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করে। দেওয়ানি লাভের পাশাপাশি ইংরেজরা প্রশাসনেও তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে। তারা নবাবকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে সিংহাসনে বসিয়ে রাখে। রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত করের  বোঝা চাপিয়ে দেয়। করের চাপ আর অনাবৃষ্টির ফলে বাংলা ১১৭৬ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইতিহাসে এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এ দুর্ভিক্ষে বাংলার মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ  লোক মারা যায়। তবে এ সময় ইংরেজরা বাংলাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি করলেও কিছু কিছৃ ক্ষেত্রে ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া তারা সমাজ সংস্কারেও কিছু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন—রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা বিলোপ আইন পাস করেন।</p> <p>সব শেষে বলা যায়, ইংরেজদের প্রচেষ্টায় সামাজিক পর্যায়ে বেশ কিছু সংস্কার সাধন ও দেশে শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে উঠলেও বৃহত্তর বাঙালিসমাজ ইংরেজ শাসনের দ্বারা  শোষিত হয়েছিল।</p>