শিশুর প্রথম পাঠশালা

&lt;p&gt;তুমি এটা করো না-ওটা করো না, বড়দের সঙ্গে এমন আচরণ করতে হয় না, এমন কত নিষেধাজ্ঞা সন্তানের প্রতি আমাদের। কিন্তু আমরা কি মনে রাখি শিশুরা শোনার চেয়ে দেখে দেখে শিখে বেশি? অনুসরণপ্রিয় শিশুরা বাধা-নিষেধের চেয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই অনুসরণ করে বেশি। তাই মা-বাবা যদি সদাচারী, সত্যভাষী ও সহনশীল হন, তাহলে পরিবারের শিশুরাও সেগুলো অনুসরণ করে। মৌখিক উপদেশ আর জ্ঞানগর্ভ ভাষণে নয়, শিষ্টাচারের শিক্ষা শিশু পরিবারের বড়দের আচরণ থেকেই শিখে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;শুধু তা-ই নয়, নৈতিক মূল্যবোধ, ন্যায়-অন্যায় বোধটাও গুরুজনের কাছ থেকেই শিশু শিখবে&mdash;এমনটাই মনে করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজেরে শিশুবর্ধন ও পারিবারিক বিকাশের সহযোগী অধ্যাপক ফাতেমা আফরোজ। তিনি আরো বলেন, উগ্র ভোগবাদী জীবনচেতনা মানুষকে ক্রমেই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। আধুনিকতার নামে ব্যস্ততার মোড়কে নিজেকে আবৃত মানুষ আজ আত্মসাধনায় মগ্ন। দেশ কিংবা সমাজে কী হচ্ছে তা ভাবার সময় কই। দিনে একবার পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়েই দেশের খবর রাখা দায়সারা হলো। তাই কোনো খবরই এখন আর ঠিক খবর হয়ে ওঠে না। ছেলের হাতে বাবা খুন, যৌতুকের জন্য গৃহবধূ হত্যা, সহপাঠী দ্বারা যৌন নির্যাতন, ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, ইয়াবায় বুঁদ শিশু-কিশোর-তরুণ&mdash;এ রকম নানা অপরাধের খবরও আমাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। দিনের পর দিন এসব খবরে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে সবাই। এসব ঘটনা শুধু খবর নয়; বরং সামাজিক অবক্ষয়ের বার্তা, এমনটা ভাবেন না কেউ। অভিভাবকরা শিশুকে দামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠিয়ে ভাবেন, এবার মানুষ হবে। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবার যে প্রধান ভূমিকা রাখে সেটা হয়তো অনেক অভিভাবক খেয়াল করেন না। শুধু নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার অভাবই শিশুকে বিপথগামী করে তুলতে পারে। আর তার সঙ্গে বিপথগামী হতে পারে সমাজ। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিচরিত্র সুগঠিত হলেই সমাজে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। কেননা সমাজজীবনে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন পড়তে বাধ্য। পরিবার হচ্ছে মানবসভ্যতার সূতিকাগার। শিশুর প্রথম পাঠশালা প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। জন্মের পর একটি শিশু তার জীবনের প্রথম আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যেকোনো শিক্ষার পাঠ পরিবার থেকেই গ্রহণ করে। পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই শিশু চরিত্র গঠন ও বুদ্ধিবৃত্তিরও পাঠ নেয়। ভাষা শিক্ষা থেকে শুরু করে আচার-আচরণ, শিষ্টাচার শিশু তার নিকটজনের কাছ থেকে শিখে। শিশুর চরিত্র গঠনে পরিবারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি&mdash;এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;সমকালীন সমাজ প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলা যায়, পরিবার ও পারিবারিক সম্পর্ক অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে পতিত হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন যৌথ পরিবারে শিশুরা দাদা-দাদি, চাচা-চাচি ও চাচাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বড় হতো। পারিবারিক বন্ধন ও দায়বদ্ধতা থেকেই সামাজিক বন্ধন ও দায়বদ্ধতার শিক্ষা পেত। বর্তমানে খুব কম দেশেই যৌথ পরিবারব্যবস্থা টিকে আছে। আমাদের দেশেও যৌথ পরিবার ইতিহাস হতে চলেছে। অথচ যৌথ পরিবারে শিশুরা পরিমিত শিষ্টাচার, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার ভালো শিক্ষা পেত। ক্ষুদ্র ও একক পরিবারে শিশুরা আজ ক্ষুদ্রজগতের বাসিন্দা হয়ে বেড়ে উঠছে। তার শিক্ষা আর বিনোদনের জায়গায় শিক্ষকের ভূমিকায় এখন কম্পিউটার আর ইন্টারনেট। মুক্ত সংস্কৃতির যুগে অপসংস্কৃতির কবলে ধ্বংস হচ্ছে শিশুর মানবিকতা আর নৈতিকতা। পরিবারের একটু অবহেলায় তার মন থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে সহানুভূতি আর সহমর্মিতা। আত্মকেন্দ্রিক এই বেড়ে ওঠাই শিশুকে করছে অপরাধমুখী। যার মাসুল দিতে হচ্ছে সমাজকে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফ মাহমুদ স্মৃতিচারণা করেন এভাবে&mdash;&lsquo;আমরা বড় হয়েছি দাদি-নানির কাছে। গল্প করার সঙ্গী পেয়েছি দাদা-নানা। বাসার ছাদে কিংবা গ্রামে বেড়াতে গেলে দাদা সব সময় সঙ্গী ছিলেন আমার। সারাক্ষণ তাঁর কোল ঘেঁষে থাকতাম আমি। রাতের বেলা শুয়ে শুয়ে সুয়োরানি-দুয়োরানি, রাক্ষস-খোক্ষস, ডাইনিবুড়ি-পান্তাবুড়ির গল্পটা তো দাদার কাছেই শুনতাম। দিনের বেলা এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে বেড়ানো। যত রকমের আবদার ছিল দাদি-নানির কাছে। চাচা-মামার কথা না হয় বাদই দিলাম। বলতে গেলে কথা অনেক বড় হয়ে যাবে। আর আমাদের চাচাতো-খালাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে যে অন্তরঙ্গতা। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে দল বেঁধে বাড়ি যাওয়া এ রকম কি হয় এখন? সেই শৈশবের ছিটেফোঁটাও তো আমরা আমাদের সন্তানদের দিতে পারি না।&rsquo; কথা বলতে বলতে আরিফ মাহমুদের কণ্ঠে আফসোসের গন্ধটিই টের পাওয়া যায়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;গোলা ভরা ধান-গোয়াল ভরা গরুর গল্পের মতো মা-বাবার জীবনে এমন শৈশবের দৃশ্যটা শিশুমনে উঁকি দিয়েও বেড়ায়। সে-ও তো চায় হারিয়ে যেতে রক্ত-মাংস আর আত্মার মাখামাখি এসব স্নেহ-আদরে। কিন্তু ইট-কাঠের বেড়াজালে আটকে যায় শৈশব-কৈশোর। টিভি পর্দা-পাঠ্য বই, কম্পিউটার, মা-বাবার সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়া। বিনোদন বলতে তো এখনকার শিশুদের এই। তবে এর মধ্যে থেকে বের হয়ে আসার কৌশল-পরিকল্পনাগুলো পরিবারের সদস্যদের প্রথম থেকেই করতে হবে। যেহেতু বাইরে তারা সবুজ মাঠে-ঘাটে দৌড়ে বেড়াতে পারে না, সপ্তাহে এক দিন তাকে নিয়ে যেতে হবে আশপাশে কোনো খোলা জায়গায়। সময়-সুযোগমতো পারিবারিক আড্ডা, সবাই মিলে একসঙ্গে হৈ-হল্লা করাটা বাসার ছাদে নিরিবিলি পরিবেশে করতে পারেন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;শিশুদের সার্বিক ও মানসিক চিন্তা-চেতনার বিকাশে পরিবারকে সুযোগ করে দিতে হবে। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ তার নিকটজনকেই সে ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তৃতীয় প্রজন্মের ভাষায় প্রত্যেক মা-বাবাকেই তাঁর সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। সন্তান যাতে নিজেকে একাকী মনে না করে। ক্ষুদ্র ও একক পরিবারে মা-বাবার ব্যস্ততা সন্তানকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। এমনটা যেন না হয়, সেদিকে মা-বাবার খেয়াল রাখা বেশি জরুরি। সৃজনশীল কাজে সন্তানকে আগ্রহী করতে হবে। এগুলো শিশুকে অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে রাখে। মা-বাবা দুজন একসঙ্গে সময় না দিতে পারলেও যেকোনো একজন সন্তানকে আলাদা করে সময় দিতে হবে। তাতে তার একাকিত্ব ঘুচবে। সবচেয়ে বড় কথা, সন্তানকে তার নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করার সুযোগ দিতে হবে। তার অবসর বিনোদনের জন্য সৃজনশীল বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে, যাতে সে এসব থেকে আনন্দের পাশাপাশি শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারে। সন্তানকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাদানে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পরিবারের সবাইকে তাই নিজ পরিবারকে আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্র করে গড়ে তুলতে মনোযোগী হতে হবে।&lt;/p&gt;

শিশুর প্রথম পাঠশালা

ফরিদা আক্তার শেলী

ফরিদা আক্তার শেলী

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

প্রেমানন্দের প্রেমের স্কুল

মক্তবে ঈমান শেখে মুসলিম শিশুরা

রাজিন সালেহর পাঠশালা

রত্না দেবনাথের পাঠশালাটি এখন শুভসংঘ স্কুল

সর্বশেষ সংবাদ

ব্রুনোর গোলে স্বস্তি আবাহনীর, জয়ে ফিরল ফর্টিস

তীব্র দাবদাহে মাদারীপুর হাসপাতালে শয্যা সংকট

নোয়াখালীতে বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

চুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাহার

একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮

৪২ ডিগ্রি ছাড়াল পাবনার তাপমাত্রা

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৪ ডিগ্রি

গা‌ড়িচাপায় মহাসড়কে প্রাণ গেল ২ সব‌জি বি‌ক্রেতার

ভটভটির ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ মোটরসাইকেল আরোহীর

গাজায় মৃত মায়ের গর্ভ থেকে রক্ষা পাওয়া শিশুর মৃত্যু

বাবার কাছে যেতে চান ইরফানপুত্র!

রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কাল

অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা কারাগারে

যুবলীগ সর্বদা নিপীড়িত মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করে : শেখ পরশ

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার : ফিরোজ রশীদ

দেশের জনগণ এই সরকারের বিদায় চায় : রিজভী

‘যুক্তরাজ্যে দক্ষ শ্রমিক দিতে পারবে বাংলাদেশ’

কিশোরগঞ্জে কনসার্টে সন্ত্রাসী হামলা, শিক্ষার্থী নিহত

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি

নায়কের কথাই সঠিক, চার গুণ হল বাড়ল ‘লিপস্টিক’ সিনেমার

রেশন চুরির অভিযোগে মার্কিন প্রশিক্ষিত সোমালি কমান্ডোদের আটক

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে আমির-ইমাদকে দেখতে চান ওয়াকার

বিএনপি থেকে ৭৩ নেতাকর্মী বহিষ্কার

‘মানবসম্পদ উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই’

মহানবী (সা.)-এর মুয়াজ্জিন ছিলেন যিনি

খালে নেমে নিজেই পরিষ্কার অভিযান শুরু করলেন এমপি

দাবদাহে বেতাগীতে আমের ফলনে বিপর্যয়ের শঙ্কা

ফুলবাড়ীতে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলার উদ্বোধন

১২ বছর বয়সে কী হয়েছিল অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলীর জীবনে?

সর্বাধিক পঠিত

মসজিদে আজান দিল নায়কপুত্র, উচ্ছ্বসিত বাবা

বিশ্বের অন্যদের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান, কী করছেন ঢাকার হিট অফিসার?

না বলে বাবার বাড়িতে যাওয়ায় স্ত্রীকে স্বামীর ২৭ কোপ!

কোরআন থেকে শিক্ষা

বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়ায় দৃষ্টি ভারতের

এই অঞ্চলে কারো আধিপত্য নয় : ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তা

থাইল্যান্ডের রাজা-রানীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা : লেবাননে ফের নির্বাচন স্থগিত

ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে, সোনালি চড়া

চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন

উভয় সংকটে আওয়ামী লীগ

হজ করতে পারবেন না সেবায় নিয়োজিতরা

‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত’

দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড

‘বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়’

মাউশির ডিজি পদে নেহাল আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

মুশফিকের আউট বিতর্কের ম্যাচে জয় পেল মোহামেডান

শেয়ারবাজারে হাহাকার

বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই : শেহবাজ শরিফ

নাশকতার মামলায় জামাত বিএনপির ৭ নেতাকর্মী কারাগারে

হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলি বেসামরিক নিহত

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে চোখের ক্ষতি

চাঁদপুরে পলাতক জামায়াত নেতা গ্রেপ্তার

নফল রোজার প্রভাব ও প্রতিদান

নেপাল সফরে গিয়ে বিপাকে উইন্ডিজ ক্রিকেটাররা

চাঁদা তুলে খেলতে নামা দলটি ইতিহাস লিখে ফেলল

দোহায় লেবাননের বিপক্ষে ফিরতি লেগ খেলবে বাংলাদেশ

খালে নেমে নিজেই পরিষ্কার অভিযান শুরু করলেন এমপি

ফ্যানে ঝুলছিল স্বামী, খাটে স্ত্রীর মরদেহ

দেশকে মরুকরণ করা হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন