<p>মধ্য আমেরিকার দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাওয়া তিন হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর ক্যারাভান ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য দরকার পড়লে সেনা মোতায়েন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অভিমুখে ছোটা ক্যারাভানের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার সিরিজ টুইটে ট্রাম্প এ হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে মেক্সিকোও তাদের সীমান্তে পুলিশ পাঠিয়েছে। যদিও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যারাভানকে বাধা দেওয়া হবে, এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি মেক্সিকো। অবৈধ অভিবাসনের চাপ সামলাতে না পেরে এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এর আগে মধ্য আমেরিকার এ তিন দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ বাতিলেরও হুমকি দিয়েছিলেন। শুধু হন্ডুরাসেই গত দুই বছরে সাড়ে ১৭ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ।</p> <p>ট্রাম্প তাঁর দেশের সীমান্ত অভিমুখে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল ঠেকাতে মেক্সিকোর সরকারের প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন। টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ‘জনগণের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এ দেশগুলোকে সব রকমের অর্থ দেওয়া বন্ধের পাশাপাশি এদের (যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে) হানা ঠেকাতে আমি শক্তভাবে মেক্সিকোকে অনুরোধ করেছি; তারা যদি না পারে তাহলে আমি মার্কিন সেনাবাহিনীকে ডেকে দক্ষিণের সীমান্ত বন্ধ করে দেব।’</p> <p>তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আগামী মাসে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ট্রাম্প মধ্য আমেরিকার ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে তাঁর প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ ভূমিকা দেখিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের নিজেদের ঘাঁটিতেই ডেমোক্র্যাটদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। ভোটের ফল মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসাব-নিকাশেও ওলট-পালট করে দিতে পারে।</p> <p>আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থী কাউকে তাত্ক্ষণিকভাবে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়, এর আগে ওই আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যথাযথ ও আইনি উপায়ে বিবেচনা করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যারাভান সীমান্তে চলে এলে তাদের ফেরত পাঠাতে বেশ বেগ পেতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।</p> <p>চলতি বছর মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে ঢোকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদন বিবেচনার সময় তাদের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেশে-বিদেশে বেশ চাপের মুখেই পড়তে হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে মেক্সিকোও তাদের সীমান্তে পুলিশ পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। যদিও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যারাভানকে বাধা দেওয়া হবে, এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি তারা। বুধবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মেক্সিকোতে কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশকারীদের হয় আশ্রয়ের আবেদন করতে হবে, নতুবা ফিরে যেতে হবে। সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যে গত শুক্রবার হন্ডুরাসের সান পেদ্রো সুলা থেকে রওনা হওয়া ক্যারাভানটি এখন গুয়াতেমালা পার হচ্ছে; তাদের প্রত্যেকের ব্যাকপ্যাকে আছে অতি জরুরি কিছু উপকরণ। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ক্যারাভানটির প্রথম অংশ মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে পৌঁছে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।</p> <p>ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও কিভাবে করবেন, তা বলেননি। ওই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বৈধ উপায়ে হাজারও মানুষ ও শত শত টন পণ্য যাতায়াত করে। সত্যিকার অর্থেই সীমান্ত একেবারে বন্ধ করে দিলে এ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন ও বাণিজ্য খাতে প্রভাব ফেলবে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও মেক্সিকো সফরে যাবেন বলেও ধারণা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে রওনা দেওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যারাভান ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। সূত্র : রয়টার্স।</p> <p> </p>