প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট গ্রামে আবদুল গফুর শাহ নামে এক কৃষক ছিলেন। কৃষিকাজ ও গরুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
গফুর শাহ প্রতিদিন গরুগুলোকে নিয়ে যেতেন স্থানীয় পাহাড়ে।
প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট গ্রামে আবদুল গফুর শাহ নামে এক কৃষক ছিলেন। কৃষিকাজ ও গরুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
গফুর শাহ প্রতিদিন গরুগুলোকে নিয়ে যেতেন স্থানীয় পাহাড়ে।
কিন্তু একদিন ঘাস খেতে গিয়ে তাঁর একটি গাভির বাছুর আর ফিরে আসেনি।
একদিন গভীর জঙ্গল থেকে ডেকে উঠল বাছুরটি।
শেষে তিনি ভাবলেন কোনো বুজুর্গ ব্যক্তিই এখানে নামাজ পড়েন নিশ্চই। সাধারণ মানুষ এত গভীর জঙ্গলে ভয়েও আসবেন না। পরে সেখানে একটি বাঁশের বেড়া দিয়ে মসজিদ স্থাপন করলেন তিনি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কেউ না থাকলেও এই মসজিদ থেকে গায়েবিভাবে আজানের সুর ভেসে আসত! এ পাহাড় থেকে তখন জনবসতি ছিল অনেক দূরে। কিন্তু আজানের শব্দ ভেসে যেত সেখানেও। ধীরে ধীরে এই গায়েবি আজানের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরাও কৌতহূলী হয়ে সেখানে যেতে শুরু করল। শেষে সবাই মিলে বেড়ার পরিবর্তে একটি মাটির মসজিদ তৈরি করলেন সেখানে। ততদিনে কৃষক গফুর শাহ নিজেও হয়ে উঠলেন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। দূর-দূরান্ত থেকে এ মসজিদে ছুটে আসতে থাকলেন ধর্মভীরু বহু নর-নারী। মসজিদটি পরিচিত হয়ে গেল গফুর শাহ গায়েবি মসজিদ নামে। যিনি যে আশা নিয়ে এখানে আসতেন তা পূরণ হত।
এভাবে ছড়িয়ে পড়ল গফুর শাহ গায়েবি মসজিদের নাম। চারদিকে ব্যাপক নাম ছড়িয়ে পড়ার পর একদিন রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেলেন গফুর শাহ। বহু খুঁজেও তাঁর সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। অনেকে মনে করেন তিনি উধাও হয়ে গেলেও তাঁর দোয়া এখানে সবসময় আছে।
মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন মাওলানা হোসাইন আহমেদ বলেন, ‘আমি ২১ বছর ধরে এই মসজিদের দায়িত্বে আছি। এখানে দারুন এক শান্তির পরিবেশ বিরাজ করে সবসময়। সেই বুজুর্গ ব্যক্তি গফুর শাহ গরু বাছুর খুঁজতে গিয়ে এ স্থানে গায়েবিভাবে তৈরি হওয়া মসজিদটির সন্ধান লাভ করেছিলেন। তিনি এখানে নামাজ পড়তে শুরু করার পর ধীরে ধীরে এলাকাবাসীও আসতে থাকেন।’
তবে তিনি জানান, গায়েবিভাবে আজান শোনার পরই মানুষ স্রোতের মতো আসতে থাকেন। এভাবেই গফুর শাহর তৈরি বেড়ার মসজিদ পরবর্তীতে মাটির মসজিদে রূপান্তর হয়ে এরও অন্তত ১০০ বছর পর এটি পাকা মসজিদে পরিণত হয়। তারও পরে এটি টাইলসসহ অত্যাধুনিক মসজিদ হয়ে ওঠে। মাওলানা হোসাইন আহমেদ আরো বলেন, ‘এখানে বিশ্বাস নিয়ে যাঁরা আসেন তাঁদের মনের আশা পূর্ণ হয়। এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। তবে শুক্রবার সহস্রাধিক মুসল্লির সমাগম হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের একটি কমিটি আছে। তাঁদের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে মসজিদ কমিটির কাউকেই পাওয়া যায়নি। তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি। অবশ্য মসজিদ ইমামের কথা যে সত্যি তা স্বীকার করেন এলাকার সবাই। ছোট দারোগারহাটের বাসিন্দা বৃদ্ধ মো. রহমত আলী বলেন, ‘এ মসজিদ গায়েবি মসজিদ এটা সবাই জানে। আর গফুর শাহ গরু চরালেও আসলে তিনি ছিলেন বুজুর্গ ব্যক্তি। গরুটি ছিল একটি উছিলা। তিনি পবিত্র স্থানটি সবাইকে দেখিয়ে যান। বর্তমানে এখানে জঙ্গলের চিহ্নমাত্রও নেই। ঝকঝকে পরিবেশে সবাই ইবাদত-বন্দেগি সারেন এখানে।’
বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেহান উদ্দিন রেহান বলেন, ‘এটি কয়েক শ বছর আগের মসজিদ। একটি গায়েবি মসজিদ বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। যিনি এ মসজিদ স্থাপন করেন সেই গফুর শাহ আসলেই একজন অলি ছিলেন। মসজিদটি স্থাপনের পর একসময় তিনি উধাও হয়ে যান। তাঁর নামেই মসজিদের নামকরণ হয়। আর এখানে মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন। সবাই এখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন।’
সম্পর্কিত খবর