রবিবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। ৫টিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ আর ২টিতে জামায়াত।
এর আগে তিন দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৩, আওয়ামী লীগ ১, এলডিপি ১ ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয় পান ১টিতে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ১৯ দলীয় জোট প্রার্থীদের ছিল জয়জয়কার।
সর্বশেষ ৪র্থ দফার নির্বাচনে বোয়ালখালীতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়া ৭ উপজেলায় অন্য কোনো পদে বিএনপি সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিততে পারেননি। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে বিজয়ী হন। এ দুই উপজেলায় জামায়াত প্রার্থীরা পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হলেও সব পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। সাতকানিয়া জামায়াতের 'দুর্গ' হিসেবে পরিচিত হলেও বাঁশখালী আসন থেকে সর্বশেষ ৪ বার (৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
সাতকানিয়া থেকে দীর্ঘদিন ধরে (৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছাড়া) জামায়াতের প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন। সেই হিসাবে বিএনপির 'ঘাঁটি' হিসেবে পরিচিত বাঁশখালীতে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত ৩টি পদেই জয়ী হলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোটের অবস্থানে তৃতীয়। ফলাফলে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী থেকে বিএনপি সমর্থিত পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান সর্বনিম্ন ২০ হাজার, সর্বোচ্চ ৮০ হাজার।
উপজেলা নির্বাচনে এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে ৬টিতে (আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড) বিজয়ী হন।
জামায়াত সমর্থিতরা ৩টিতে (বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ৩টি (হাটহাজারী, পটিয়া ও মিরসরাই) এবং এলডিপি সমর্থিত প্রার্থী ১টিতে (চন্দনাইশ) জয়লাভ করেন। আগামী ৩১ মার্চ সন্দ্বীপে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দুই দফায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের একাধিক প্রার্থী ছিলেন না। কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারাও নেমেছিলেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায়। এ কারণে ফলাফলও ভালো হয়।
৩য় দফায় সীতাকুণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের আলাদা প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হন। ৪র্থ দফায় অনুষ্ঠিত ৭ উপজেলার মধ্যে ৩টিতে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থীসহ সব উপজেলায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী ছিলেন। আর অন্তর্কোন্দলের কারণে সব উপজেলায় কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। এছাড়া কোনো উপজেলায় জোট থেকে একক প্রার্থীও দেওয়া হয়নি। জোটের একাধিক প্রার্থীর কারণে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ-আল নোমান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, '৪র্থ দফায় যে ভোট হয়েছে তা কারচুপি বা জালিয়াতি নয়। প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের সামনেই সরকারি দলের ভোট ডাকাতি হয়েছে। প্রশাসন সরকারি দলকে সহযোগিতা না করলে চট্টগ্রামের সব উপজেলায় আমাদের প্রার্থীরাই বিজয়ী হতেন। জোর করে ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের পরও প্রশাসন ভোট স্থগিত করেনি। বিএনপি প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।'
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী জানান, একক প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা একযোগে কাজ করার কারণে ৪র্থ দফায় ৭টির মধ্যে ৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয় এসেছে। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই বেশি বিজয়ী হয়েছেন।
৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কার কত ভোট
রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোহাম্মদ আলী শাহ ৫৭ হাজার ৫৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী সাকা পরিবার সমর্থিত কুতুব উদ্দিন বাহার পেয়েছেন ৩০ হাজার ১৫৫ ভোট।
রাউজানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ কে এম এহছানুল হায়দর চৌধুরী ১ লাখ ১ হাজার ৫৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিএনপি সমর্থিত আনোয়ার হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ১৯ হাজার ৭৪৫।
ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তৌহিদুল আলম বিজয়ী হয়েছেন ৮৯ হাজার ২৪০ ভোট পেয়ে। বিএনপির প্রার্থী সরোয়ার আলমগীর পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২৬৮ ভোট।
সাতকানিয়ায় জামায়াতের মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন ৬৪ হাজার ৬২৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নুরুল আবছার চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৪৫ হাজার ৬২৭ ভোট।
বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের আতাউল হক বিজয়ী হন। তার প্রাপ্ত ভোট ৪৮ হাজার ৯১১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বদরুছ মেহের পান ২৬ হাজার ৮৮১ ভোট।
আনোয়ারায় আওয়ামী লীগের তৌহিদুল হক চৌধুরী ৮৫ হাজার ১৩২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এখানে বিএনপি সমর্থিত জালাল উদ্দিন আহম্মেদ ২৭ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
বাঁশখালীতে জামায়াত সমর্থিত মাওলানা জহিরুল ইসলাম ৬৬ হাজার ৩৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খোরশেদ আলম পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৯০ ভোট।