<p>ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাকে গাজায় আটকে রাখা আরো দুজন জিম্মি বেঁচে থাকার প্রথম প্রমাণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তারিখবিহীন ও বাধ্য করে ধারণ করা ওই ভিডিওতে ওমরি মিরান বলছেন, তিনি ২০২ দিন ধরে আটকে আছেন। আর কেইথ সিয়েজেল এই সপ্তাহের ছুটির দিনের কথা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ভিডিওটি খুবই সম্প্রতি ধারণ করা হয়েছে।</p> <p>তাঁদের দুজনকেই গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার দিনে জিম্মি করা নেওয়া হয়েছিল। ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ওই দুজনের নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে তাঁরা লড়াই অব্যাহত রাখবেন। একই সঙ্গে তাঁরা জিম্মিদের মুক্তির জন্য নতুন চুক্তি করতে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।</p> <p>নতুন ভিডিওটি এমন সময় প্রকাশ করা হলো, যখন হামাস বলছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচনায় গতি আনতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর ইসরায়েলে একটি দল পাঠিয়েছে।</p> <p><strong><span style="background-color:#ecf0f1;">আরো পড়ুন : </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/04/27/1382823"><span style="color:#3498db;"><span style="background-color:#ecf0f1;">ইসরায়েলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস</span></span></a></strong></p> <p>এখনো আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে একটি চুক্তি হলে তা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরায়েলের পরিকল্পিত স্থল অভিযান বন্ধ করতে পারে বলে শনিবার আভাস দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।</p> <p>সিয়েজেল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁকে স্ত্রী আভিভাসহ জিম্মি করা হয়েছিল। পরে নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির সময় তাঁর স্ত্রীকে মুক্তি দেয় হামাস। এক ভিডিওতে আভিভা বলেছেন, ‘কেইথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার না ফেরা পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’</p> <p>এর আগে চলতি মাসের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, জিম্মিকারীরা একটি সুড়ঙ্গে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় কিভাবে এই দম্পতিকে এক পর্যায়ে ফেলে গিয়েছিল। ওই সাক্ষাৎকারের সময় তিনি জানতেন না যে কেইথ তখনো জীবিত আছেন।</p> <p>তাঁর মেয়ে ইলান বলেছেন, ‘আজ বাবাকে দেখার পর এটাই আমাদের ওপর জোর দিচ্ছে যে কত তাড়াতাড়ি আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারব ও প্রত্যেককে বাড়িতে ফেরাতে পারব। আমার দাবি, দেশের নেতারা ভিডিওটি দেখুক এবং দেখুক তাদের বাবারা সহযোগিতার জন্য কাঁদছে।’</p> <p>তাঁর আরেক মেয়ে শির বলছেন, ‘আপনি যদি ভিডিওটি দেখে থাকেন, আপনি দেখেছেন যে আমার বাবা জানেন আমরা প্রতি সপ্তাহে সমাবেশ করছি এবং তাঁর ও অন্য জিম্মিদের জন্য লড়াই করছি।’</p> <p>তেল আবিবে প্রতি সপ্তাহে যেই বিক্ষোভ হয় শনিবার সন্ধ্যায় জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে, সেই সমাবেশে ওমরি মিরানের বাবা দানি মিরান স্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। খুবই শক্তিশালী ভাষণ দিয়েছেন তিনি। এ সময় তাঁকে আবেগপ্রবণ দেখাচ্ছিল। ভিডিওতে ছেলেকে দেখার উত্তেজনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। কারণ তিনি জেনেছেন, ‘সম্ভবত তিনি জীবিত আছেন।’</p> <p>কিন্তু তাঁর ভাষণেও রাজনৈতিক উপাদান ছিল। তিনি সরাসরি সরকারের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। বিশেষত ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির ও অর্থমন্ত্রী বেযালের সমটরিচের নাম উল্লেখ করে জিম্মি চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ‘যেকোনো কার্যকর একটি চুক্তি’ অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উভয় জনগণের জন্য ছোট ও রক্তপাতহীন পদক্ষেপ নিন। ইসরায়েলের সব মানুষ ও বিশ্বের সব জাতি রক্তপাতের অবসান চায় এবং বিশেষ করে আপনার জনগণের দুর্ভোগের শেষ চায়।’</p> <p>আরো যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হলো, ওমরির বাবার ভাষণের আগে জিম্মিদের ভিডিও দেখানো হয় বড় পর্দায়। এটা খুবই অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। কারণ এ ধরনের ভিডিও সাধারণত টিভিতে দেখানো হয় না।</p> <p>দ্য হোস্টেজ ফ্যামিলিজ হেডকোয়ার্টার বলছে, সর্বশেষ ভিডিও হলো ‘একটি পরিষ্কার প্রমাণ—ইসরায়েল সরকারকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তি করতে সব কিছুই করতে হবে’।</p> <p>এর আগে সপ্তাহের শুরুতে এ ধরনের আরেকটি ভিডিও দেখানো হয়েছিল, যেখানে ইসরায়েলি-মার্কিন জিম্মি হার্শ গোল্ডবার্গকে দেখানো হয়। ওই ক্লিপে তাঁর বাম বাহুর একাংশ ছিল না। হামাসের হামলার সময় তাঁর হাতের ওই অংশ উড়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় তাঁর মা-বাবা জিম্মিদের মুক্তিতে চুক্তির জন্য আরো দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।</p> <p>সিয়েজেল গত ৭ অক্টোবর কিবুৎয কেফার আযায় হামাসের হামলার সময় অপহৃত হয়েছিলেন। আর মিরানকে জিম্মি করা হয়েছিল কিবুৎয নির ওজ থেকে। হামাসের প্রকাশ করা ভিডিওতে চাপের মুখে ৬৪ বছর বয়সী সিয়েজেল ও ৪৬ বছর বয়সী মিরান ইসরায়েল সরকারকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য সম্মত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মিরানকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি ২০২ দিন ধরে এখানে জিম্মি হয়ে আছি। এখানকার পরিস্থিতি অসন্তোষজনক, কঠিন এবং এখানে অনেক বোমা।’</p> <p>এদিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছতে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর জিম্মিদের মুক্তির জন্য এখন পরোক্ষ আলোচনা চলছে। এখনো যারা জিম্মি হয়ে আছে তাদের মধ্যে থেকে ৪০ জনের মুক্তির বিনিময়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব ছিল তা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।</p> <p>তারা এর আগে বলছিল, চুক্তি হলে তাতে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও বাস্তুচ্যুতদের বিধি-নিষেধ ছাড়া ঘরবাড়িতে ফেরার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। আর ইসরায়েল বলছিল, তারা গাজায় হামাসকে ধ্বংস করে জিম্মিদের মুক্ত করে আনবে।</p> <p>অন্যদিকে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের সতর্কতার মধ্যে ইসরায়েল রাফাহ শহরে অভিযানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।</p> <p>ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয শনিবার বলেছেন, ‘আমরা অভিযানের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ সেটিই করা প্রয়োজন। তবে আমি আশা করি একটি সমঝোতা হবে।’</p> <p>গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং তারা আরো ২৫০ জনকে জিম্মি করে। জবাবে ইসরায়েল গাজায় পাল্টা অভিযান শুরু করে। তাতে প্রায় ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নভেম্বরে একটি সমঝোতার আলোকে হামাস ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জবাবে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। আর ১৩৩ জন জিম্মি গাজায় আছে বলে মনে করা হয় এবং এর মধ্যে ৩০ জন হয়তো মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>