<p>যতটা কম রান দিলে একজন বোলারকে মিতব্যয়ী বলা যায়, শব্দ খরচে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ছিলেন এর কাছাকাছিই। সিলেট টেস্ট ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে থাকা শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের যেন থোড়াই কেয়ার প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় তারকাকে। গতকাল দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে একাধিক প্রশ্নে তাঁর মাপা মাপা জবাব। সেই মাপও এক-দেড় বাক্যের বেশি নয়।</p> <p>তাই আবার প্রশ্ন, এত কম বলছেন কেন? এবার আরো বেশি স্পষ্টভাষী ধনঞ্জয়া, ‘(বেশি কথা) কেন বলতে যাব। সে তো আমার দলের কেউ নয়।’</p> <p>সাকিব যে দলের, সেই বাংলাদেশ অবশ্য এই অলরাউন্ডারকে ঘিরেই সিরিজ বাঁচানোর আশায় আজ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে নামছে। সিলেটে বিব্রতকর এক হারের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ এক ক্রিকেটারের না থাকার অভাবও সঙ্গী ছিল নাজমুল হোসেন শান্তদের।</p> <p>এই টেস্টে সাকিব থাকায় তা ঘুচে যাচ্ছে অনেকখানিই। তাই বলে বেশ কিছুদিন ধরে টেস্টে বাংলাদেশের সমস্যার আধার হয়ে আছে যে ব্যাপারটি, সেটির সমাধানের নিশ্চয়তা মাঠে প্রমাণ দেওয়ার আগ পর্যন্ত নেই।</p> <p>ব্যাটিংয়ের শুরুতেই একরকম সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিলেট টেস্টে পর পর দুই ইনিংসেই তা হয়েছে।</p> <p>এ রকম কিছুর একগাদা নমুনা আছে সাম্প্রতিক অতীতেও। বল পুরনো হওয়ার আগেই ব্যাটিং অর্ডারের অর্ধেকটা ছাঁটা হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ১০ টেস্টের ২০ ইনিংসে এর ব্যতিক্রম তেমন একটা হয়ওনি। ১১ ইনিংসেই স্কোরবোর্ডে ১০০ রান জমা করার আগে ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা। সিলেটে অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়।</p> <p>প্রথম ইনিংসে ৮৩ রানে ৫ উইকেট খোয়ানো দল রান তাড়ায় ৫১ রানে পরিণত হয়েছিল ৬ উইকেট হারানো দলে।</p> <p>অথচ প্রায় কাছাকাছি অবস্থা থেকেই শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধের গল্প লিখেছিল ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাটে। প্রথম ইনিংসে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা দলের যেখানে তিন অঙ্ক ছোঁয়া নিয়েই সংশয় জেগেছিল, সেখানে এই দুজনের সেঞ্চুরি আর ২০২ রানের পার্টনারশিপে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাদের সেঞ্চুরি আর ১৭৩ রানের জুটিতে লঙ্কানরা ৫১১ রানের দুঃসাধ্য এক লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল স্বাগতিকদের। এবার অবশ্য টপ অর্ডার ব্যাটারদের কাছ থেকে রানের আশা আছে ধনঞ্জয়ার। তাঁদের ব্যর্থতা কেবল এক ম্যাচের বলে লঙ্কান অধিনায়ক খুব একটা চিন্তিতও নন, ‘সবাই তো আর একই দিনে রান পাবে না। তা ছাড়া আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটাররা আগের কয়েকটি ম্যাচে কিন্তু পারফরমও করেছে। আমি নিশ্চিত যে এই ম্যাচে ওরা পারফরম করবেই। ওরা জ্বলে উঠলে এই ম্যাচে হয়তো আমাকে ব্যাটিংই করতে হবে না।’</p> <p>জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটের চেহারা তাঁর দলের ভালো ব্যাটিংয়ের সম্ভাবনায় আরো আশাবাদী করে তুলেছে ধনঞ্জয়াকে। এই মাঠের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অবশ্য স্বাগতিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। সর্বশেষ পাঁচ টেস্টের চারটিতেই এখানে হেরেছে তারা। ২০২২ সালে যে একটি টেস্ট ড্র করেছিল, সেটিতে প্রতিপক্ষ ছিল এই শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু ড্র করলে তো আর সিরিজ বাঁচানো যাবে না। ট্রফি ভাগাভাগি করতে হলে এই টেস্টে জেতা চাই-ই চাই। ব্যক্তিগত কারণে চন্দিকা হাতুরাসিংহের অনুপস্থিতিতে এই টেস্টে হেড কোচের দায়িত্ব পাওয়া নিক পোথাস অবশ্য এখনই অত দূরের ছবি দেখতে চাইছেন না। তিনি বরং এগোতে চান প্রথম টেস্টের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে, ‘আমরা পেছনে তাকাচ্ছি না, তাকাচ্ছি সামনেই। যা শিক্ষা পাওয়ার, আমরা পেয়েছি। এখন কাজ হবে সেটি কাজে লাগিয়ে এই টেস্টে নিজেদের মেলে ধরা।’</p> <p>এ ক্ষেত্রে আগাম ফলের ভাবনায়ও কাতর হতে চান না এই দক্ষিণ আফ্রিকান, ‘আমরা ফলের কথা ভেবে খেলব না। ম্যাচ খেলার পথে ছোট ছোট যে যুদ্ধগুলো সামনে আসবে, সেগুলোতে জিতে আগের ম্যাচের চেয়ে উন্নতি করার কথাই ভাবছি আমরা।’ সেই ভাবনায় এবার সাকিব থাকায় একাদশে নিশ্চিতভাবেই আসছে পরিবর্তন। সিলেট টেস্টে ব্যর্থতার কারণে একজন ব্যাটার কমানোর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ যাবে কি না, সেই কৌতূহলও কম নয়। আবার দুই দলের দৃষ্টিতে চট্টগ্রামের ব্যাটিং উইকেটে তিন পেসার না খেলানোর ভাবনাও হালে পানি পেয়ে যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত যে একাদশই খেলুক, বাংলাদেশের এই সিরিজ বাঁচানোর আশার ভরকেন্দ্রে সাকিব থাকছেনই।</p> <p>তা ধনঞ্জয়া যতই তাঁকে নিয়ে শব্দ খরচে কৃপণ হোন না কেন!</p>