<p>- তোমরা কি ব্যাচেলার?</p> <p>- না।</p> <p>- তাইলে তোমাদের ফ্যামেলি কই?</p> <p>- গ্রামের বাড়িতে।</p> <p>- ঠিক আছে আসো।</p> <p>আমরা বাড়িওয়ালির পেছনে পেছনে সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে লাগলাম। চারতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটটির কেবলি কাজ শেষ হয়েছে।</p> <p>দুই বেড, দুই বাথ, কিচেন, ড্রয়িং কাম ডাইনিং, দেড়টা বেলকোনি! বাসা আমাদের পছন্দ। কে কোন রুমে থাকবো সেটাও প্ল্যান করে ফেললাম। আমি থাকবো এটাচ বাথ রুমেরটায় আর কাজিন সোহেল ও ভাগনে রাসেল থাকবে তার পাশেরটায়।</p> <p>- বাসা আমাদের পছন্দ।</p> <p>- ঠিক আছে। তোমরা উঠতে চাও কবে?</p> <p>- আমরা কালকেই উঠে পড়ব।</p> <p>- কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার দুটি শর্ত আছে?</p> <p>- শর্ত?</p> <p>ভাড়া-অ্যাডভান্স সবই আমরা মেনে নিয়েছি। তারপরও শর্ত? আমরা একে অপরের দিকে তাকালাম। একটু চিন্তাতেই পড়ে গেলাম। বাড়িওয়ালি আবার কি শর্ত জুড়ে দেন।</p> <p>- হ্যাঁ! এই দুটি শর্ত মানলেই তোমরা বাসা ভাড়া নিতে পারবা।</p> <p>- শর্তগুলো বলেন।</p> <p>- আমি যেকোনো দিন তোমাদের বাসায় ঢুকে চেক করবো। তোমরা কি করো সেটা দেখবো। আমাকে বাধা দেওয়া যাবে না।</p> <p>- ঠিক আছে। আমাদের কোনো সমস্যা নাই।</p> <p>- আর তোমরা শব্দ করে গান শুনতে পারবা না। ছাদেও যেতে পারবা না। রাত ১২টার পর বাসায় আসতে পারবা না। সিঁড়িতে ময়লা ফেলা যাবে না।</p> <p>বাড়িওয়ালির শর্ত থাকার কথা দুটি। এখন দেখছি শর্তের তার শেষ নাই! বাড়িওয়ালির বয়স খুব বেশি না। ভাবি কিংবা আপা ডাকা যায়। আমরা আপাই ডাকলাম। বললাম,</p> <p>- আপা, আপনার শর্ত থাকার কথা দুটি? এখন তো দেখছি ...</p> <p>- তাইলে তোমরা যাও। অন্য বাসা দেখ!</p> <p>- না। আপা। আপনার সব শর্তে আমরা রাজি। আমাদের কোনো সমস্যা নাই।</p> <p><strong>দুই.</strong></p> <p>ডোরবেলের শব্দ শুনতেই দরজা খুলে দেই। দেখি বাড়িওয়ালি আপা আরও দু্‌জন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমরা তিনজন বাসার ছোটখাট আসবাবপত্র গোছাচ্ছি।</p> <p>আসবাবপত্র বলতে দুই বেড রুমে দুটি খাট। দুটি সিলিং ফ্যান। দুটি টেবিল। দুটি চেয়ার। একটা আলনা। একটা বুকশেলফ। কিছু বই। আর রান্নাঘরের কয়েকটা প্লেট, ডেক-ডেকচি।</p> <p>বাড়িওয়ালি ও তার সঙ্গের দুই মহিলাকে বসতে দেওয়ার জন্য দুটি চেয়ার ছাড়া আর কিছু নাই আমাদের। দুটি চেয়ারই এগিয়ে দিই আমরা।</p> <p>- বসেন আপা।</p> <p>বাড়িওয়ালি ও সঙ্গে থাকা আরেকজন মহিলা বসলেন। লম্বা করে মহিলাটি দাঁড়িয়ে থাকলেন।</p> <p>- কই তোমাদের ফ্যামিলি কই?</p> <p>- গ্রামের বাড়িতে।</p> <p>- কবে আসবে?</p> <p>- সামনের শুক্রবারে গিয়ে নিয়ে আসবো।</p> <p>- তাইলে এখন তোমরা কি নিজেরাই রান্না করে খাবা?</p> <p>- সেটাই তো চিন্তা করছি।</p> <p>বাড়িওয়ালি আপা লম্বা করে ওই মহিলাকে দেখিয়ে বললেন,</p> <p>- এ তোমাদের রান্না করে দিতে পারবে।</p> <p>এতদিন যে বাসায় ছিলাম। সেখানে প্রায় একমাস সোহেলই রান্না করতো। তার আগে এক ক্যান্টিন বয়ের বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতাম। রান্না নিয়ে আমাদের টেনশনের সীমা ছিল না।</p> <p>বাড়িওয়ালি আপার এই কথায় আমাদের খুশির সীমা থাকে না। আমরা একে অপরের দিকে তাকাই। বলি,</p> <p>- আপা, তাহলে তো আমাদের খুব ভালো হয়।</p> <p>- তোমরা মিটিয়ে নাও কত টাকা দিবা?</p> <p>- আপা, আপনিই বলে দেন।</p> <p>- তোমরা কয় বেলা রান্না করাবা?</p> <p>- দুই বেলা। সকালে আর রাতে।</p> <p>বাড়িওয়ালি একটু চিন্তা করে বললেন।</p> <p>- ঠিক আছে এক হাজার টাকা দিও।</p> <p><strong>তিন.</strong></p> <p>- হ্যালো, দুলাভাই?</p> <p>- হ্যালো, কে?</p> <p>- দুলাভাই, আমরা চারতলার নতুন ভাড়াটিয়া।</p> <p>- এত রাতে কি সমস্যা?</p> <p>- না। কোনো সমস্যা না। আমরা বাসার নিচে দাঁড়িয়ে। কলাপসিবল গেট বন্ধ।</p> <p>- তোমাদের জানানো হয়নি? রাত ১২টার পরে বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়?</p> <p>- হ্যাঁ, দুলাভাই, আসলে অফিসের টাইমিংটা চেঞ্জ হয়ে গেছে তো!</p> <p>আমাদের তিনজনেরই অফিস শেষ হয় রাত ১২টার পর। বাসায় আসতে আসতে সাড়ে ১২টা বেজে যায়। সপ্তাহে আবার একদিন আমার ভোররাত হয়ে যায়।</p> <p>এই বাসাটা অফিসের কাছে, ভাড়াও কম। সব মিলিয়ে আমাদের বেশ পছন্দ। বাসায় ওঠার পরদিনই রাত সাড়ে ১২টায় এসে বাড়িওয়ালাকে ফোন দিচ্ছি। আমরা টেনশনে আছি। বাড়িওয়ালা কিংবা বাড়িওয়ালি আবার কিছু বলে কি না?</p> <p>বাড়িওয়ালা থাকেন তিনতলায়। তিনি ব্রাশ করতে করতে নিচে নেমে গেট খুলে দিলেন।</p> <p><strong>চার.</strong></p> <p>- মামা, আজকে কি রান্না করবো?</p> <p>লম্বা করে সেই মহিলাটা আবার আমাদের মামা ডাকে। সোহেল তাকে সকালে কি রান্না করবে আর রাতে কি রান্না করবে বুঝিয়ে দেয়। আমি তখনও বিছানায়। আমার যে রুম, সেখান থেকে ড্রয়িং কাম ডাইনিং হয়ে ফ্ল্যাটের মূল দরজা দেখা যায়।</p> <p>হঠাৎ ডোর বেলের শব্দ। লম্বা মহিলাটি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বাড়িওয়ালি আপা ভেতরে ঢোকেন। আমি বিছানা থেকে উঠে বসি। দেখি, বাড়িওয়ালি আপার হাতে একটা চাবি।</p> <p>- এই চাবিটা রাখো। এত রাতে তাকে আর ফোন দিও না।</p> <p>আমরা তো যারপরনাই খুশি। বললাম,</p> <p>- আপা, ধন্যবাদ। আসলে আমাদের অফিসটাই ...</p> <p>- না। থাক। সমস্যা নাই। আচ্ছা তোমরা বিয়া করছো কে কে?</p> <p>- আমি আর সোহেল।</p> <p>- আমাকে তাদের ছবি দেখাও।</p> <p>আমি মোবাইলে থাকা আমার বউ আর মেয়ের ছবি দেখালাম। বাড়িওয়ালি আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে একটার পর একটা ছবি সরিয়ে দেখলেন। বললেন,</p> <p>- তোমার বউ কি করে?</p> <p>- প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।</p> <p>বাড়িওয়ালি মোবাইলটি আমাকে ফেরত দিয়ে সোহেলের দিকে তাকান। বললেন,</p> <p>- এখন তোমারটা?</p> <p>সোহেল আর রাসেল আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাড়িওয়ালিও আমার দিকে তাকান।</p> <p>আমি আমার ল্যাপটপ চালু করে সোহেল আর সোহেলের বিয়াইনের ছবির ফোল্ডার খুঁজি। তখনও সোহেল বিয়ে করেনি। ওর বিয়াইনের লগে ভাব চলে। কোনো একদিন সেই ভাবের ছবিগুলো আমার ল্যাপটপে রাখছিল।</p> <p>- এই দেখেন?</p> <p>বাড়িওয়ালি ছবিগুলো দেখা শেষ করে খাট থেকে উঠে দাঁড়ান।</p> <p><strong>পাঁচ.</strong></p> <p>দুপুরে গোসল করে ছাদে গেছি লুঙ্গি শুকাতে দিতে। ছাদের গেটটা খোলাই থাকে। সেখানে তালা লাগানো থাকে না। একটা রশি দিয়ে বাঁধা থাকে।</p> <p>ছাদের একপাশে গিয়ে দেখি বাড়িওয়ালিও শাড়ি শুকাতে দিচ্ছেন। তিনি আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন। আমি মানে মানে কেটে পড়তে চাই।</p> <p>- শোনো, তোমার বউ তো শিক্ষক। তাকে কয়েক দিন ছুটি নিতে বলো। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসো।</p> <p>আমি কোনো কথা না বলে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াই। বাড়িওয়ালি আপা আরও যোগ করেন,</p> <p>- একবার কয়েক দিন থেকে গেলে আর সমস্যা হবে না। তোমাদের দুলাভাই সমস্যা করতেছে।</p> <p>আমি আবারও কোনো কথা না বলে শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াই।</p>