<p>তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। বাসদ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দ্রুত তিস্তা পানি চুক্তি করতে না পারলে জনগণকে আন্দোলনের মাধ্যমেই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। একইসঙ্গে নতজানু সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।</p> <p>আজ রবিবার (২১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে তিন দিনব্যাপী ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এ সব কথা বলেন তারা। বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তৃতা করেন নদী ও পানি গবেষক শেখ রোকন, বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী ও কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।</p> <p>সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেওয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা, দেশের ভেতরে সরকারের নতজানু নীতি ও দখল-দূষণের ফলে এক সময়ের এক হাজার ২০০ নদী এখন ২৩০টিতে নেমে এসেছে। নদীর চেহারা খালে পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে ৮০০ কিউসেকে নেমে গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় বাংলাদেশ অংশে কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘শুধু তিস্তা নয় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ৫৪টি নদীর ৫১টিতে ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে পানি প্রত্যাহার করছে। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা সকলের জানা আছে। সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীর উজানে বরাক নদীর টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে ভারত জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কার্যত সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের খরচা মাথায় ঝুলছে। ভারতের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ অনিবার্যভাবে মরুভূমির দেশে পরিণত হবে।’</p> <p>সমাবেশে সংহতি জানিয়ে শেখ রোকন বলেন, ‘২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে এসে সমঝোতা স্মারক করলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিভিন্ন সময়ে এসে প্রায় ৩৫ বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক কিছু নিয়ে গেলেও তিস্তাসহ পানির ন্যায্য হিস্যার চুক্তি করলেন না।’ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।</p> <p>উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি তোপখানা রোড, পল্টন মোড় ঘুরে সেগুনবাগিচা থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। রোড মার্চের তৃতীয় দিন ২৩ এপ্রিল রংপুর প্রেস ক্লাব থেকে মেডিক্যাল মোড়, পাগলাপীর, বড়ভিটা, জলাঢাকা, ডিমলা, শুটিবাড়ী, তিস্তা ব্যারেজ ঘুরে ডিমলা শহীদ মিনারে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।</p>