<p>মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন মো. সিরাজ। একসময় তিনি বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রীর নামে প্রতারণা করতেন। পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয়ে এমপি, মন্ত্রী ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ফোন করে নানা তদবির করতেন। বিভিন্নজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া ছাড়াও পদোন্নতির তদবিরের নামে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ছাড়া তাঁর আরেকটি নেশা হলো বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানে একটি করে বিয়ে করেন। এভাবে তিনি তিনটি বিয়ে করেন। এর আগে বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে তাঁকে পাবনা জেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।</p> <p>আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রাজধানীর মিন্টো রোডে তাঁর কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে ডিবি দক্ষিণের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ডিসি শহিদুল ইসলাম, এডিসি নিশাত রহমান মিথুন ও ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি সাইফুর রহমান আজাদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>ডিবি প্রধান বলেন, ‘সিরাজ মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি পরিচয়ে বিভিন্ন এমপিকে কল করতেন। তাঁদেরকে নানা তদবির করতেন। তাঁর নামে দুটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। প্রতারণা করে সিরাজ তিনটি বিয়ে করেছেন। এক স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা, একজন নার্স এবং আট মাস আগে করেছেন তৃতীয় বিয়ে। সিরাজের বাড়ি রংপুর সদরের মীরবাগ এলাকায়। তাঁর বাবার নাম তাহের উদ্দিন। সিরাজ আগে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। তিনি নিজেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের ফোন করতেন। এ ছাড়াও তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে বিভিন্ন তদবির করতেন তিনি। সম্প্রতি নবীনা খাতুন ও পারভীন আক্তার নামে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই সিনিয়র স্টাফ নার্সকে বদলির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কল করেন তিনি। এ সময় নিজেকে রাষ্ট্রপতি পরিচয় দিয়ে তাঁদের অন্যত্র বদলির জন্য বিভিন্ন তদবির করেন।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘তিনি প্রায় ছয় মাস ধরে রাষ্ট্রপতির নাম-পরিচয় ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য একটি মোবাইল নম্বর একবার ব্যবহার করে সিমটি হারিয়ে গেছে মর্মে নিজেই থানায় জিডি করতেন। পরে আবার নতুন একটি নম্বর ব্যবহার শুরু করতেন।’</p> <p>ডিবির সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘জ্ঞান ফেরার পর তাঁকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া সিরাজ নিজে রাষ্ট্রপতি না হলেও কোনো মোবাইল সিম কেনার পরই তিনি সেটি তাঁর মোবাইলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নামে সেভ করতেন। ফলে সেটি ট্রু কলারে রাষ্ট্রপতি উঠত অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির ফোনে। এতে অনেকে ভাবতেন রাষ্ট্রপতি কল দিয়েছেন।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘সিরাজের নামে মামলার পর তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করব তিনি কেন এই পেশাটা বেছে নিলেন। তিনি কেন একেকটি সিম দিয়ে মন্ত্রীদের কল করতেন। এসব বিষয় আমরা তদন্ত করে আরো তথ্য বের করব।’</p>