<article> <p style="text-align: justify;">খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার প্রধান মাধ্যম হলো কৃষি। গত পাঁচ দশকে কৃষির উৎপাদন ও রূপান্তর, কৃষি খাতে বেসরকারি খাতের অবদান, দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অবদানসহ নানা বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপ করেছেন বারির মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইদ শাহীন</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>গত পাঁচ দশকে দেশের কৃষির রূপান্তরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> গত পাঁচ দশকে কৃষির শুধু উৎপাদনব্যবস্থায়ই রূপান্তর হয়েছে বিষয়টি এমন নয়, কৃষি নিয়ে আমাদের চিন্তায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিকসহ নানা সূচকেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর দেশের অর্থনীতি ও কৃষিতে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। দেশের কৃষির রূপান্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন নীতিনির্ধারকসহ দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষক। কৃষির বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে আমরা শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছি। ধান, পাট, আম, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদনে আমরা বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছি এখন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কৃষির রূপান্তরে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দুটি পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে একটি বাজেট বৃদ্ধি এবং অন্যটি কৃষিবিদদের মর্যাদাদান। স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ দুটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণেই দেশের কৃষি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। স্বাধীনতার পর পর দেশের মানুষের গড় আয় ও আয়ু খুব কম ছিল। বর্তমানে আয় দুই হাজার ৭০০ ডলারে এবং গড় আয়ু ৭৩ বছরের বেশিতে উন্নীত হয়েছে। পুষ্টিকর খাবার খেতে পারা এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থার উন্নয়নের বদৌলতে গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের জোগান আসে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ থেকে। এ তিনটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে বলে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>কভিড-১৯ সংকট থেকে উত্তরণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কিভাবে মোকাবেলা করছে কৃষি খাত?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>গত মেয়াদে এ সরকারকে এত বড় দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব ও নির্দেশনার কারণে কৃষি খাতে সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছি। করোনার সময় আমরা উৎপাদন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে দিইনি। প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা ও নানা প্রণোদনার মাধ্যমে আমরা উৎপাদন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বড় বাধা হয় কৃষি উপকরণের বাণিজ্য ঠিক রাখা। বিশেষ করে সারের আমদানি বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। যুদ্ধের কারণে আমরা বিকল্প বাজার থেকে সার আমদানি করেছি। কৃষককে কম দামে সার পৌঁছে দিতে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হয়েছে। একসময় মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া হতো। তা গত অর্থবছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় উঠেছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>সার আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>সার উৎপাদন এবং এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বারি সরাসরি যুক্ত নয়। তবে কৃষিতে গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে মনে হয়, সরকার সঠিক পথেই রয়েছে। কৃষকরা সার ন্যায্য মূল্যেই পাচ্ছেন। এই খাতে বেসরকারি খাত এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েও কিছু বিপণন করা হচ্ছে। সার্বিক কাজে যথাযথ জবাবদিহি থাকায় সারের সংকট হচ্ছে না। তবে সবার মধ্যে সমন্বয় এবং বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা—এ দুটিই আরো বাড়ানো প্রয়োজন।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>কৃষির উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বারি কী কাজ করছে?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> বারির বিজ্ঞানীদের কাজ হলো কৃষির উন্নয়নে জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা। দেশের ২১২টি ফসলের বিষয়ে গবেষণা ও জাত উন্নয়নে কাজ করে থাকে বারি। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ফসলের ছয় শর বেশি জাত এবং প্রায় সমানসংখ্যক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মাধ্যমে দেশে ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খোরপোশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সহায়তা ও কৃষির নানা রকম যান্ত্রিকীকরণের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি খাতও এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এ কৃষিতে সমন্বিত উদ্যোগের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এতে কৃষি হবে স্মার্ট ও আধুনিক। এর জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ভাবনা, স্মার্ট প্রযুক্তি ও স্মার্ট কৃষক।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিকূল জলবায়ু, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমির পরেও বাংলাদেশের কৃষির সাফল্য ঈর্ষণীয়। সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তে দেশ খাদ্যে স্বনির্ভর হয়েছে। সামনের দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। কৃষিজমি হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কৃষির ওপর প্রভাব ফেলবে। এসব মাথায় রেখে বারি কাজ করছে। আমরা এলাকাভিত্তিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে জাত উন্নয়ন করছি। এখন মাটির স্বাস্থ্য ও সারের যথাযথ ব্যবহারের দিকেও জোর দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, বাড়ছে মানুষ। এ পরিস্থিতিতে বারির ভাবনা কী?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে ধান হয়। ফলে অনান্য ফসলের জন্য কম জমিতে আবাদ বাড়াতে কাজ করছি। হাওর অঞ্চলে শাক-সবজিসহ ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কাজ চলছে। এ ছাড়া চরাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে কাজ চলছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ :</strong> মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>দেশের মাটি বিভিন্নভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় মাটির ভৌত গঠনে অবনতি হয়েছে। মাটির জৈব উপাদান ও উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নই। সরকার নির্ধারিত মাত্রায় ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সুষম সার ব্যবহার করলে একদিকে যেমন মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে অন্যদিকে সাশ্রয় হয়। ফলনও বেড়ে যায়।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>গত পাঁচ দশকে দেশের কৃষির রূপান্তরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> গত পাঁচ দশকে কৃষির শুধু উৎপাদনব্যবস্থায়ই রূপান্তর হয়েছে বিষয়টি এমন নয়, কৃষি নিয়ে আমাদের চিন্তায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিকসহ নানা সূচকেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর দেশের অর্থনীতি ও কৃষিতে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। দেশের কৃষির রূপান্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন নীতিনির্ধারকসহ দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষক। কৃষির বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে আমরা শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছি। ধান, পাট, আম, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদনে আমরা বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছি এখন।</p> <p style="text-align: justify;">কৃষির রূপান্তরে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দুটি পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে একটি বাজেট বৃদ্ধি এবং অন্যটি কৃষিবিদদের মর্যাদাদান। স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন। এ দুটি যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণেই দেশের কৃষি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। স্বাধীনতার পর পর দেশের মানুষের গড় আয় ও আয়ু খুব কম ছিল। বর্তমানে আয় দুই হাজার ৭০০ ডলারে এবং গড় আয়ু ৭৩ বছরের বেশিতে উন্নীত হয়েছে। পুষ্টিকর খাবার খেতে পারা এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থার উন্নয়নের বদৌলতে গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের জোগান আসে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ থেকে। এ তিনটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগত উন্নতি হয়েছে বলে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>কভিড-১৯ সংকট থেকে উত্তরণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কিভাবে মোকাবেলা করছে কৃষি খাত?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> গত মেয়াদে এ সরকারকে এত বড় দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব ও নির্দেশনার কারণে কৃষি খাতে সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছি। করোনার সময় আমরা উৎপাদন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে দিইনি। প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা ও নানা প্রণোদনার মাধ্যমে আমরা উৎপাদন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বড় বাধা হয় কৃষি উপকরণের বাণিজ্য ঠিক রাখা। বিশেষ করে সারের আমদানি বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। যুদ্ধের কারণে আমরা বিকল্প বাজার থেকে সার আমদানি করেছি। কৃষককে কম দামে সার পৌঁছে দিতে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হয়েছে। একসময় মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া হতো। তা গত অর্থবছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় উঠেছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>সার আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার :</strong> সার উৎপাদন এবং এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বারি সরাসরি যুক্ত নয়। তবে কৃষিতে গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে মনে হয়, সরকার সঠিক পথেই রয়েছে। কৃষকরা সার ন্যায্য মূল্যেই পাচ্ছেন। এই খাতে বেসরকারি খাত এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েও কিছু বিপণন করা হচ্ছে। সার্বিক কাজে যথাযথ জবাবদিহি থাকায় সারের সংকট হচ্ছে না। তবে সবার মধ্যে সমন্বয় এবং বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা—এ দুটিই আরো বাড়ানো প্রয়োজন।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>কৃষির উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বারি কী কাজ করছে?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>বারির বিজ্ঞানীদের কাজ হলো কৃষির উন্নয়নে জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা। দেশের ২১২টি ফসলের বিষয়ে গবেষণা ও জাত উন্নয়নে কাজ করে থাকে বারি। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ফসলের ছয় শর বেশি জাত এবং প্রায় সমানসংখ্যক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মাধ্যমে দেশে ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খোরপোশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সহায়তা ও কৃষির নানা রকম যান্ত্রিকীকরণের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি খাতও এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এ কৃষিতে সমন্বিত উদ্যোগের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এতে কৃষি হবে স্মার্ট ও আধুনিক। এর জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ভাবনা, স্মার্ট প্রযুক্তি ও স্মার্ট কৃষক। প্রতিকূল জলবায়ু, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমির পরেও বাংলাদেশের কৃষির সাফল্য ঈর্ষণীয়। সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্তে দেশ খাদ্যে স্বনির্ভর হয়েছে। সামনের দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। কৃষিজমি হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কৃষির ওপর প্রভাব ফেলবে। এসব মাথায় রেখে বারি কাজ করছে। আমরা এলাকাভিত্তিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে জাত উন্নয়ন করছি। এখন মাটির স্বাস্থ্য ও সারের যথাযথ ব্যবহারের দিকেও জোর দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, বাড়ছে মানুষ। এ পরিস্থিতিতে বারির ভাবনা কী?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে ধান হয়। ফলে অনান্য ফসলের জন্য কম জমিতে আবাদ বাড়াতে কাজ করছি। হাওর অঞ্চলে শাক-সবজিসহ ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কাজ চলছে। এ ছাড়া চরাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে কাজ চলছে। পাহাড়ি অঞ্চলে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কালের কণ্ঠ : </strong>মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন?</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ড. দেবাশীষ সরকার : </strong>দেশের মাটি বিভিন্নভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় মাটির ভৌত গঠনে অবনতি হয়েছে। মাটির জৈব উপাদান ও উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও আগাছানাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নই। সরকার নির্ধারিত মাত্রায় ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সুষম সার ব্যবহার করলে একদিকে যেমন মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে অন্যদিকে সাশ্রয় হয়। ফলনও বেড়ে যায়।</p> </article>