<p>স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর দীর্ঘ আট বছরেও সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পদমর্যাদা ও কর্মপরিধি চূড়ান্ত করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। বিষয়টি সুরাহা করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে আজ রবিবার বৈঠকে বসছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা। বৈঠকে সমস্যার সমাধান না হলে প্রয়োজনে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৮৮ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী পরিচালিত জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্যের কাজ কী হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই। কোন কোন কাজ তদারকি করতে পারবেন, বা করা উচিৎ, তা জানতে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা। </p> <p>আজ রবিবার কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ১০টায় বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। আর সেখানে সদস্যার সমাধান না হলেও তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি তুলে ধরবেন।</p> <p>সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যারনা প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠানে মানুষের সেবা ও উন্নয়নে জেলা পরিষদের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সরকারের উন্নয়নকাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।</p> <p>চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব হবে প্রতিটি উন্নয়নকাজ যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং নিজ নিজ জেলার সার্বিক উন্নয়ন এবং সমস্যা খুঁজে বের করা। কী করলে সেই জেলার আরো উন্নতি হতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া’। কিন্তু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও তারা স্থানীয় উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এর মূল কারণ তাদের পদমর্যাদা ও কর্মপরিধির বিষয়টি আইনে স্পস্ট না থাকা।</p> <p>এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে তরান্বিত করতে জেলা পরিষদেও জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন হলেও সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদমর্যাদাটা ঠিক করা হয়নি। এ ধরনের বেশ কিছু সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হবে। সেখানে সমাধান না হলে চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবে বলে তিনি জানান।</p> <p>উল্লেখ্য, ১৭৭২ সালে জেলা প্রশাসন সৃষ্টির ১১০ বছর পর ১৮৮২ সালে লর্ড রিপনের ঐতিহাসিক রেজুল্যুশনের মাধ্যমে তিন স্তরের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তনে স্থানীয় ‘জেলা বোর্ড’ শক্তিশালী প্রশাসনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়, যা পাকিস্তানের প্রথম দশক পর্যন্ত বজায় ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জেলা পরিষদের অবকাঠামো, জনবল, সম্পদ ও জাতীয় বাজেটে নিয়মিত বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি আড়ালে চলে যায়। ১৯৭৫ সালে জেলায় ‘গভর্নর’ নিয়োগ করে জেলা প্রশাসকসহ জেলার সামগ্রিক প্রশাসনকে তার অধীন করে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হয়। পরে বিএনপির শাসনামলে ‘জেলা উন্নয়ন সমন্বয়ক’ নামে একটি পদ সৃষ্টি করে প্রতিটি জেলায় রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।</p> <p>১৯৮৮ সালে নতুন আইনে চালু হওয়া জেলা পরিষদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে বিএনপি সরকার জেলা প্রশাসদের (ডিসি) এই দায়িত্বে রাখে। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য সংশোধন আইন করে। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।</p>