<article> <p style="text-align: justify;">সমাজব্যবস্থার আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন বা কার্যকারণের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। এখন অপরাধ সংঘটনের আগে অপরাধীরা আধুনিক কৌশল ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শক্তিমত্তা, কৌশল ও ব্যবস্থাপনার প্রতি দৃষ্টি রেখেই তারা তাদের পরিকল্পনার ছক আঁকে। দেখা যায়, তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সোর্স রয়েছে, যাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত জেনে তারা অপারেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের মতো ভয়াবহ অপরাধে নারীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কালের কণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে অবৈধ অস্ত্রে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধের জেরে গত পাঁচ মাসে সারা দেশে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সাড়ে সাত শর বেশি সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই শতাধিক ব্যক্তি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা প্রত্যেকেই শোভন সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণে আগ্রহী। সে কারণেই অপরাধী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে অধিক তৎপর হতে হবে। জনগণকে আরো সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধীদের প্রতিহতে সর্বস্তরের মানুষকে একীভূত করে সমাজের কল্যাণের স্বার্থে অপরাধীদের সমাজ থেকে বিচ্যুত করতে সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারকারী এবং অবৈধ অস্ত্রের মজুদকারীদের শাস্তির বিষয়ে সবাইকে সম্যকভাবে অবগত করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। সরকারের ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে যারা অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগসাজশ থাকায় অনেক সময় তদন্তকালে তারা বাইরে থেকে যায়। ফলে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের শাস্তির সংবাদ পত্রিকার পাতায় ফলাও করে প্রচার করা উচিত। আবার যারা এসব মামলায় জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখতে হবে, তাদের প্রতিহত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">দেশে অস্ত্র প্রবেশের রুটগুলো মোটামুটি চিহ্নিত। এই এলাকাগুলোকে নিরাপদবেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ক্রাইম ম্যাপিং, জিআইএস, জিপিএসের মাধ্যমে অপরাধ ও অপরাধীদের বহুমাত্রিক স্তর এবং পরিসীমাকে চিহ্নিত করে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। চিহ্নিত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টহলের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অপরাধ শনাক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে ক্রমান্বয়ে অবৈধ অস্ত্র পাচারের হার এবং পাচারকারীর সংখ্যাও কমে আসতে শুরু করবে।   </p> <p style="text-align: justify;">তা ছাড়া সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আরো সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, বিশেষ করে যারা অস্ত্র তৈরি করে। আমরা জানি, উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। দেখা যায়, বাংলাদেশের অনেক সন্ত্রাসী অস্ত্র ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ পায় এবং তাদের অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দেয়। অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করেও সন্ত্রাসীরা অস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও আইনের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে এবং এসব অস্ত্রের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এরই মধ্যে যেসব রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের চালান প্রবেশ করে, সেসব অঞ্চল ও রুট শনাক্ত করা গেছে। শুধু তা-ই নয়, অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও তারা তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। এটি তাদের জন্য একটি বড় সফলতা এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সফলতাকে ধরে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও সম্পদের সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্থহীন হয়ে যাবে। নিরাপদ ও স্বস্তিতে বাঁচার অধিকার রয়েছে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। এই অধিকারের সুরক্ষা প্রদানের স্বার্থে সরকারকে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে প্রো-অ্যাক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে এগোতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক : </strong>সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="3" height="146" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/04/06/my1187/54.jpg" width="243" /></p> </article>