<p>বিয়ে একটি সামাজিক ও ধমীয় প্রথা। তবে একাধিক বিয়ে নিয়ে রয়েছে নানা মত। একাধিক বিয়ে নিয়ে কেউ সুখী আবার কেউ বা দুঃখী। যেমন, আমিরাতের (ইউএই) আরবদের একাধিক বিয়ে সংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা কৌতুহলোদ্দীপক। একাধিক বিয়ে বা বউ নিয়ে তারা অত্যধিক সুখী না হলেও দুঃখী কাউকে দেখা যায় না। একাধিক বিয়ে নিয়ে  আরবদের অনেকেই তেমন কিছু বলতে চান না। তবে অনেক ঘনিষ্ঠজনের কাছে প্রসঙ্গক্রমে বলেন অনেক কিছুই- সেসব থেকে জানা কিছু কিছু বিসয় তুলে ধরা হরো এখানে।</p> <p>আমিরাতে বিয়ে করতে গেলে কনে পক্ষকে বিপুল পরিমাণ মোহরানার অর্থ দিতে হয়। এ কারণে বেশ কিছু আরব স্থানীয় আরব মেয়ের পরিবর্তে ভিনদেশি  মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর আরব মেয়েরাও এতে তেমন একটা পিছিয়ে নেই। অবশ্য এখন অনেকেই একাকী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। তাদের মতে সতীনের সঙ্গে ঘর করার চেয়ে একা থাকাই ভালো। এ কারণে অনেক আরব মেয়ে বিয়ে করেননি।</p> <p>আবার অনেকে বিয়ে করে কিছুদিন সংসার করে পিতৃগৃহে বা নিজ ঘরে বসে আছেন। এখানে তালাক দেওয়া-নেওয়ার ঘটনা প্রচুর। যাদের ঘরে তিন-চারটা মেয়ে রয়েছে, তাদের ২-১ জনের বিয়ে হলেও ঘুরে ফিরে আবার তাদের বাপের বাড়িতেই দেখা যায়।</p> <p>আহমদ আল শামসির (ছদ্মনাম) বয়স ৩৪, একটা কম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তার দুজন স্ত্রী এবং চারটি সন্তান। বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতেই বলে ওঠেন, “এখন পর্যন্ত দুটো। তবে চারটা পর্যন্ত করার ইচ্ছে। এখন দুইজনকে দুই ঘরে রাখি, ঝামেলা তেমন একটা হয় না।" কৌশলে সব কিছু ম্যানেজ করেন বলে জানান তিনি। তার বাবার, শ্বশুরের আর দাদারও দুটো করে বউ ছিল বলে জানান।</p> <p>এস হারিবের (ছদ্মনাম) বয়স ৩২, একটি সরকারি অফিসের বিশেষ বিভাগের প্রধান। বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জানান, বউ তার একটাই। তবে ছয়জন ছেলেমেয়ে। ২২ বছর বয়সে নিজের কাজিনকে বিয়ে করেন তিনি।</p> <p>হারিব আরও জানান, তার বাবার তিন বউ, শ্বশুরের চার বউ।  আর বিয়ে করবেন কিনা জানতে চাইলে জানান, অন্তত দুই থেকে তিনটি বিয়ে করবেন তিনি। তবে এখন নয়- তা হবে চল্লিশের পর।</p> <p>তিনি আরো জানান, তার তিনটি মোবাইল, একটি মোবাইলে তিন চারজন গার্ল ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। পরে হয়তো এদের কাউকে বিয়ে করতে পারেন বলে জানান। বউয়ের সঙ্গে এদের কোনো সমস্যা হবে  কিনা প্রশ্ন করলে তিনি  জানান, এসব কিছু ম্যানেজ করতে হবেই। শুধু বাড়ি, গাড়ি আলাদা করে দিলেই হলো। তবে তার বউ  নাকি নিশ্চিত তার আরো দুই তিনজন সতীন আসবে।</p> <p>আবু জিদান (ছদ্ম নাম) অর্থাৎ জিদানের বাবার বয়স ৫২ বছর। তার ছেলের নাম  জিদান তাই তাকে সবাই আবু জিদান বলেই ডাকেন। আরবে কোনো ব্যক্তিকে তার বড় ছেলের নামের আগে আবু যুক্ত করে ডাকার রেওয়াজ রয়েছে। আবু জিদান একজন চৌকস ব্যবসায়ী, ঘরে রয়েছে তিনজন বউ। আলাদা দুই বাড়িতে দুই বউকে, আর তৃতীয়জনকে রেখেছেন একটি ফ্লাটে। ছেলেমেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে বলেন, “অনুমান করেন, কয়টি হবে?” বললাম, “১০ জন হবে।” মুচকি হেসে ‘হাঁ’ বললেন এ বুড়ো খোকা।</p> <p>জানলাম, কয়েক মাস পূর্বে জর্ডান থেকে আরেকটি বিয়ে করে নিয়ে এসেছেন। তার আগে আনলেন মরক্কো থেকে একটি। কেন এসব করছেন- জিজ্ঞেস করলে বলেন, “মন তো আরো বেশি চায়।”</p> <p>সালমা আলীর (ছন্দনাম) বয়স ৩৬। একটি সরকারি অফিসে ভালো চাকরি  করতেন। চার সন্তান নিয়ে আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন তিনি। চাকরির সুবাদে আলাপ ও দেখা হত ২৬ বছরের যুবক আলীর সঙ্গে। প্রতিদিনের আলাপে ফেঁসে যান আলী। একদিন সালমা আলীর ঘরে বউ হয়ে আসেন। তাদের রয়েছে এখন চারটি ছেলেমেয়ে। আগের ঘরের ছেলেরাও মায়ের সঙ্গে থাকেন। সালমা জানেন, সুযোগ বুঝে আলীও কয়েকটি বিয়ে করবেন।</p> <p>তবে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে একাধিক প্রেমের প্রবণতা প্রবল থাকলেও বিয়ের প্রবণতা অনেক কমেছে। আরবের অনেক শেখের উপযুক্ত ছেলেরাও এখনো  বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চান না। যাদের পেতে বা বিয়ে করতে অনেক মেয়েই পাগল। আরবের নতুন প্রজন্মও বোঝে, বিয়ে বা বহু বিবাহ সব সমস্যার সমাধান নয়। বহু বিবাহ তাদের রীতি; বাপ দাদারা করে এসেছেন, তাই তারা করেন। কিন্তু এখন অনেকেই এক বউ বা এক সংসারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যদিও নারী আসক্তিটা তাদের কমবেশি রয়েছেই।</p>