<p>প্রতিদিন গড়ে চারজন দর্শনার্থী ঘুরতে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনের নগর জাদুঘরে। কোনো কোনো দিন একজন দর্শনার্থীও যায় না পুরনো ঢাকার ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে সাজানো এ জাদুঘরটিতে। দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে জাদুঘরটি দৈনিক আয় করে আট টাকা। অথচ এ জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছেন তিনজন কর্মচারী। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, জাদুঘরটিতে পর্যাপ্ত দর্শনীয় বস্তুর সংগ্রহ যেমন নেই, একইভাবে নেই প্রচার-প্রচারণাও। ফলে জাদুঘরটির এই করুণ দশা। জাদুঘরটির উন্নয়নে ১৯৯৬ সালের পর বহুবার মেয়র ও কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েও কোনো ফল পায়নি ট্রাস্টি বোর্ড।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরনো ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক নিদর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন বেশ কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে নগর জাদুঘর। এর প্রধান উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। হাতে গোনা কিছু সংগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাদুঘরটির বয়স ২২ বছর পার হলেও এর আধুনিকায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানা কাজে নগর ভবনে গেলেও কারো মধ্যে আগ্রহ জাগায় না জাদুঘরটি। দুই টাকায় টিকিট কেটে কেউ আগ্রহ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেও ফিরে আসে বিরক্তি নিয়ে।</p> <p>জাকারিয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এই প্রথম এলাম জাদুঘরটি দেখতে। কিন্তু এখানে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই।’</p> <p>নগর জাদুঘরের দর্শনার্থী রেজিস্ট্রারের তথ্যানুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলতি বছর ২৮২ দিনে দর্শনার্থী এসেছে মাত্র এক হাজার ২৫০ জন। আয় হয়েছে দুই হাজার ৫০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৪ দশমিক ৪৩ জন দর্শনার্থী দেখতে গেছে জাদুঘরটি। এর মধ্যে চলতি বছরের ৫, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ জুন একজন দর্শনার্থীও যায়নি জাদুঘরটি দেখতে। একইভাবে ৫ এবং ৬ আগস্টও দর্শনার্থীশূন্য ছিল জাদুঘরটি।</p> <p>বিষয়টি নিয়ে মুন্নী আক্তার পুষ্প নামের এক কর্মচারী জানান, পর্যাপ্ত সংগ্রহ না থাকায় লোকজন ভেতরে প্রবেশ করলেও বেশিক্ষণ অবস্থান করে না। কোনো কোনো দিন একজন দর্শনার্থীও আসে না।</p> <p>জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, ১৯৮৫ সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে নতুন কোনো সংগ্রহ যুক্ত করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে জাদুঘরটি নগর ভবনে স্থানান্তর করা হলেও সংগ্রহশালা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। এমনকি জাদুঘরের জন্য কোনো কর্মীও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যাঁরা জাদুঘরে কর্মরত, তাঁরা সবাই সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন শাখার কর্মচারী। তবে আগামী বছরের প্রথম দিকে জাদুঘরটি নগর ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্ব ব্লকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তাঁরা। দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হলে দর্শনার্থী অনেকটা বাড়বে বলে প্রত্যাশা দায়িত্বরত কর্মচারীদের।</p> <p>জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কলের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাদুঘরটি নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় নেওয়া হলে দর্শনার্থীদের চোখে পড়বে সহজে। এ ছাড়া সংগ্রহশালা বাড়ানোর বিষয়টি সিটি করপোরেশন ও ট্রাস্টি বোর্ডের এখতিয়ার।’</p> <p>ট্রাস্টি বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে কমিটি গঠিত হলেও এ পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি ট্রাস্টি বোর্ডের। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ডাকা হয়নি কোনো কার্যক্রমে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাদুঘরটি উন্নয়নে নগর ভবনে কয়েক দফা প্রস্তাব দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে অনেকে জাদুঘরটির খোঁজখবর নেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন।</p> <p>নগর জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মূলত বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা জাদুঘরটি উপহারস্বরূপ তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এর উন্নয়নে কোনো মেয়রই উদ্যোগ নেননি। ফলে আমরা হতাশ হয়ে এর হাল ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগে।’</p> <p>ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ করা দরকার। আমি অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।’</p>