<p>সকাল থেকেই প্রকৃতিতে গুমোট ভাব। সূর্য উঁকি দেয় তো লুকিয়ে যায়। মৃদু বাতাস বাড়তি পাওনা। এটাতে প্রশান্তি খোঁজে পাওয়া গেল। গত কয়েক দিনের দাবদাহের ঘোর কাটাতে এমন আবহাওয়াই যেন চাওয়া। বিশেষ করে ভোটের দিনে এমন আবহাওয়া তো যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।</p> <p>তবে ভোটারের ‘গোমড়া মুখ’ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খবর আসছিল প্রথম দুই ঘণ্টায় কোথায় ৮ ভাগ কোথাও ১০ ভাগ ভোট পড়ে। এমনও খবর আসে যে কোনো কোনো কেন্দ্রের বুথে ভোটারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দেড় ঘণ্টার মতো সময়!</p> <p>এই যখন অবস্থা তখন আশা জুগিয়েছেন কিছু প্রবীণ। শারীরিক নানা অক্ষমতা সত্ত্বেও তারা ছুটে এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। কেউ নাতির কোলে চড়ে কেউ বা হুইলচেয়ারে করে। ভোট আমানত, ভোট অধিকার, হয়তো এটাই শেষ ভোট<span lang="DA" style="font-size:12.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">―</span></span>এমন সব চিন্তা থেকে তাদের ছুটে আসা।</p> <p>ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বুধবার ভোটের দিনে দেখা হয় বেশ কয়েকজন প্রবীণের সঙ্গে। তারা ব্যক্ত করেছেন মনের অভিব্যক্তি। লক্ষণীয় বিষয় ছিল অন্য ভোটারদের চাইতে তারা ছিলেন বেশ সুস্থির। ধৈর্যচ্যুতি তাদেরকে ছুঁয়ে যায়নি। তবে ভোট দিতে এসে সুষ্ঠুভাবে দিতে পেরে তারা ছিলেন বেশ আপ্লুত।</p> <p>সকাল ৯টা। শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে হুইলচেয়ারে করে ছুটে আসেন আইয়ুব আলী। প্রায় ১০ বছর ধরেই হুইলচেয়ার তার সঙ্গী। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। এলেন নাতি হামীমকে নিয়ে। বললেন, ‘কবে মইরা যাই কইতারি না। ভোট হলো অধিকার। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে ভালো লেগেছে। ভোটের পরিবেশও বেশ ভালো।</p> <p>বাড়িউড়া ক্বাদেরিয়া সুন্নিয়া এবতাদিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসেন প্রায় ৯০ বছর বয়সী রহিমা খাতুন। এক হাতে লাঠির ভর আর অন্য হাতে ছেলেবউ সাকেরা বেগমের সহায়তার তার আসা। বললেন, ‘ভোট দিতে আইছি। কবে মরে যাইগা তো কইতে পারি না।’ </p> <p>অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বেলা পৌনে ১২টায় নাতির কোলে চড়ে আসেন ৯০ বছর বয়সী কাসেম মিয়া। কোল থেকে নেমে দাঁড়ানোটা কষ্টের। তবে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি সেই কষ্টটাকে জয় করলেন। তবে বয়সের ভারে মুখে তেমন কোনো কথা নেই। ইশারায় আর বিড়বিড় করে বোঝালেন ভোট দিতে আসার কথা। </p> <p>নাতি মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকেই দাদা বলছিল ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে। কিন্তু উনি বয়সের ভারে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না বলে বাড়ি থেকে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত কোলে করে নিয়ে আসি। এটা আমার জন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।’</p> <p>একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ৭০ বছরের ওসমান গণি বলেন, ‘চলাফেরায় অনেক কষ্ট করতে হয়। ছেলের কাঁধে ভর করে ভোট দিতে এসেছি। এই বয়সে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে আরো বেশি কষ্ট করতে হতো। কিন্তু ভোটার কম হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি ভোট দিতে পেরে আমি খুশি।’</p> <p>রাজাবাড়িয়া কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পক্ষাঘাতক্গ্রস্ত পিতাকে শামসুল হককে নিয়ে আসেন ছেলে মোক্তার হোসেন। কথা হলে মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা বলে কয়ে নিয়ে এসেছি। একটা ভোটের তো অনেক মূল্য আছে।’ </p> <p>সরাইল অন্নদা সরকরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মোমিনুর রহমান বলেন, ‘নাতির কোলে করে আসা বৃদ্ধ কাশমকে ভোট দিতে আমি নিজে সাহায্য করেছি। পোলিং অফিসারদেরকেও বলা হয় প্রবীণদেরকে গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করতে।’</p>