<p>ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার লংঘন নদীর পাড় ঘিরে বেশ ব্যস্ততা। কেউ ধান নৌকা থেকে নামাচ্ছেন। কেউ বা কেটে আনা ধান তুলছেন যানবাহনে। কেউ বা ব্যস্ত ধান শুকানোর কাজে। নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে গরু নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। যতটুকু চোখ যায় শত ব্যস্ততা চোখে পড়ে ধান ঘিরেই। চোখ আটকায় একা বসে ধান কুড়াতে থাকা নারীর দিকে। বেশ যত্ন করে ধান ছাড়াচ্ছিলেন তিনি। উঠে গিয়ে আবার ধানের গাছ কুড়িয়ে আনেন।</p> <p>বুধবার (৮ মে) দুপুরে কাজের ফাঁকে কথা হয় মিনিট বিশেক। জানালেন নাম সুকন্তলা দাস। কথার শুরুতেই বললেন, 'আমার নাম জাইন্না কী হইবো বাবা। আমি তো দুখিনী।’</p> <p>কিসের এত দুঃখ আপনার? এমন প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস। মুখটা আরো মলিন। বললেন, ‘এখানেই থাকি, এখানেই বসে খাই। আমার বাড়ি নাই। ঘর নাই। আমার চেয়ে দুখী আর কে আছে।’</p> <p>কথা প্রসঙ্গে জানালেন, দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তিন ছেলেও বিয়ে করে ফেলেছে। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তাই মাকে দেখভাল করার সুযোগ তাদের হয় না।</p> <p>স্বামী কবে মারা গেছেন-এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সুকন্তলা দাস। মাঝে মাঝে অসংলগ্ন কথাও বলছিলেন। বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো কখনো বোঝাও যাচ্ছিল না।</p> <p>সুকন্তলা দাসের সঙ্গে বসে কথা বলার জায়গায় পাশেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র। সেখানে ভোটগ্রহণ চলছে। শকুন্তলা জানালেন, তিনি ভোট দেননি। ভোট দিতে যাবেনও না।</p> <p>তিনি বলেন, 'পুত আর পুতের বউরা বুড দিবো। আমি জাইতাম না। আমারে ত কেউ অহন বুডের কতাও কয় না।'</p> <p>পড়ে থাকা গাছ থেকে ধান তোলা শেষ সুকন্তলা দাসের। এবার পান চিবুলেন। একটু পরই আবার ধানের চারার খোঁজে সুকন্তলা।</p> <p>হাঁটতে হাঁটতে কথা হলে জানান, এই ধানই তার অন্ন জোগায়। ভাত খুব একটা খাওয়া হয় না। তবে কুড়িয়ে পাওয়া ধান বিক্রির টাকায় এটা-সেটা কিনে খেয়ে জীবন চলে তার।</p>