<p style="text-align: justify;">শনিবার রাত সাড়ে ১১টা। খুলনার কয়রা সদরের মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাটের পাশে কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে মিট মিট টর্চ লাইটের আলো জ্বলছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব এক নারী এক হাতে টার্চ লাইট, অন্য হাতে ঝিনুকের চামচ দিয়ে রেণু পোনা বাছাই করে একটি পাত্রে রাখছেন। </p> <p style="text-align: justify;">নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠেন আনোয়ারা। তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে এভাবে খুলনার কয়রার কপোতাক্ষ  নদীর জলে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। থাকেন কপোতাক্ষের পাড়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে। আপন বলতে তা কেউ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর কপাল ভাঙলেও মন ভাঙেনি আনোয়ারার। অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরতে-ধরতে বেড়ে ওঠেন তিনি। অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে পড়ালেখাও বেশি দূর গড়ায়নি। অল্প বয়সেই হয়ে যায় বিয়ে। স্বামীর ঘরে গিয়েও পাননি সুখের কোনো সন্ধান। বিয়ের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সন্তান সম্ভবা অবস্থায় হারান স্বামীকে। এরপর থেকেই শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। </p> <p style="text-align: justify;">আনোয়ারা বলেন, তিনি অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অভাবের সংসারে অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। ছোট বেলা থেকেই তিনি নদীতে জাল টেনে রেণু পোনা ধরা শুরু করেন।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো জানান, কখনো ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত আবার কখনো দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিংবা রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন। কখনো কখনো মধ্য রাতে থেকে ভোর রাত পর্যন্তও নদীতে মাছ ধরেন আনোয়ারা। পরে এসব মাছ স্থানীয় ব্যবসায়ী সেটে বিক্রি করেন তিনি। এতে তার আয় হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। </p> <p style="text-align: justify;">ষাটোর্ধ্ব এই নারী বলেন, রেণু ধরনে ধরতে নদীর সঙ্গে তার জীবনের সম্পর্ক হয়ে গেছে। শুধু তিনিই নন, এই নদীতে মাছ ধরে  জীবিকা নির্বাহ করেন আরো অনেক নারী ও পুরুষ। এই নদীর সঙ্গেই এখন মিশে আছে তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ ও মান-অভিমান।</p>