<p>ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়ার (২৫) ছেলেবেলার বন্ধু মিজান শেখ (২৮)। গত ২৯ মার্চ একসঙ্গে পাগলা মসজিদে তারাবিহ পড়েন তারা। এরপর মুখলেছের বাসায় গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে রাতের খাবার খান মিজান। মধ্যরাতে বন্ধু মুখলেছকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হন তিনি। তাকে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চের কাছে নিয়ে যান। সেখানে অপেক্ষমাণ সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেন মুখলেছকে। পরে হত্যাকারীরা তার লাশ সিমেন্টের ব্লকে বেঁধে নরসুন্দা নদীতে ডুবিয়ে দেয়।</p> <p>মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেই লাশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে পুলিশ।</p> <p>ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন মিজান শেখের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে নরসুন্দা নদীতে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। প্রথম দিন তারা নদীতে কোনো লাশ পায়নি। আজ বিকেল ৩টার দিকে নিহতের লুঙ্গি, লুঙ্গিতে বাঁধা ভাড়া বাসার চাবি ও একটি ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। এর ঘণ্টাখানেক পর মুখলেছের গলিত দেহ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ইট-সিমেন্টের ব্লকে বাঁধা অবস্থায় ছিল।</p> <p>পুলিশ জানায়, মুখলেছ ও মিজান ২৯ মার্চ রমজানে একসঙ্গে পাগলা মসজিদে তারাবিহ নামাজ  পড়েন। এরপর মুখলেছ তার বাসায় বন্ধুকে নিয়ে রাতের খাবার খান। মধ্যরাতে কৌশলে মুখলেছকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হন মিজান। তাকে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল কলেজসংলগ্ন মুক্তমঞ্চের কাছে নিয়ে যান। সেখানে অপেক্ষমাণ সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেন মুখলেছকে। হত্যাকারীরা তার লাশ সিমেন্টের ব্লকে বেঁধে নরসুন্দা নদীতে ডুবিয়ে দেয়।</p> <p>মুখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়া জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি জেলা জজ আদালতে একজন আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুখলেছ শহরের হারুয়া বউবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।</p> <p>অন্যদিকে সন্দেহভাজন ঘাতক মিজান শেখ মিঠামইনের ফুলপুর গ্রামের সেফুল শেখের ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ মিজান শেখের বাবাসহ তার ছোট দুই ভাই মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখকে (২১) হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আটক করা হয়।</p> <p>পারিবারিক ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর বিকেলে নরসুন্দা নদীর পাড়ে কথা হয় মুখলেছের ভাই মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।</p> <p>কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান। নিখোঁজের ঘটনায় ৩১ মার্চ একটি জিডি করেন মিজানুর রহমান। এরপর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের রাতের হারুয়া এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করা হয়। ওই সিসিটিভি ফুটেজে নিহত মুখলেছের সঙ্গে মিজান শেখকেও দেখা যায়। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত জোরদার করে পুলিশ।</p> <p>এর ধারাবাহিকতায় থানায় একটি অপহরণ ও গুমের মামলা দায়ের করা হয়। গত শনিবার হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মিজান শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সঙ্গে আটক করা হয় তার বাবা ও ছোট দুই ভাইকে।</p> <p>গ্রেপ্তার মিজান শেখ পরিকল্পিতভাবে বন্ধুকে হত‌্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মুখলেছকে গলা কেটে শরীর থেকে মাথা আলাদা করার পর পেট চিরে ফেলা হয়, যাতে লাশ ভেসে না ওঠে। তাছাড়া লাশের সঙ্গে ইট-সিমেন্টের সিসি ব্লক বেঁধে দেওয়া হয়।</p> <p>ময়নাতদন্তের জন‌্য লাশ কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার মিজান শেখকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন‌্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।</p> <p>কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, গ্রেপ্তার মিজান হত‌্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। তবে পুলিশ এগুলো যাচাই-বাছাই ও তদন্ত করে দেখছে। মিজান শেখের পরিবারের অন‌্য আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।</p>