<p>‘আমার ছেড়িডারে হেরা কইছিন দেইখ্যা নিবো। অহন দেহি ঠিহই হেই দেহাই দেখল, একবারে দুইন্যাইততে উডাইয়া দিল।’ গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বাজার থেকে সন্তানের জন্য ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা ধানক্ষেতে ফেলে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে মেয়েকে। এ ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির সামনে মা রোকেয়া বেগম আহাজারি করে বুক চাপড়ে ওপরের কথাগুলো বলেন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌর সদরের চারআনিপাড়া মহল্লায় নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কের পাশের একটি ধানক্ষেতে। এ ঘটনায় পুলিশ চান মিয়া (৩৫), নাঈম (২০) ও ফাহিম (২৫) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।</p> <p>নিহতের মা রোকেয়া বেগম জানান, প্রায় এক মাস আগে বাড়ির সামনে একটি ধানক্ষেতে মেয়ে নাজমা বেগমের (৪০) পালিত ছাগল একজনের ক্ষেতের ধান খায়। এ নিয়ে ধানক্ষেতের মালিকের লোকজন গালাগালি করে মেয়ের জামাইকে মারধর করে। মেয়ে নাজমা বেগম এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। এ নিয়ে সালিসের আয়োজন হলেও অভিযুক্তরা আসেনি। বরং কেন সালিস ডাকল, এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সময় দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয় ক্ষেতের মালিকরা। </p> <p>নিহতের মা রোকেয়ার অভিযোগ, ওই জেদ পুষে রেখেই সুযোগ বুঝে মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।</p> <p>আজ বৃহস্পতিবার মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজমা বেগম একজন কর্মজীবী নারী ছিলেন। তিনি স্থানীয় করাতকল থেকে কাঠের গুঁড়া সংগ্রহ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতেন। তিনি চার সন্তানের জননী। তার স্বামী একই মহল্লার বাসিন্দা আবদুল মন্নান পেশায় ইজি বাইকচালক।</p> <p>নাজমা বেগমকে যে ধানক্ষেতে হত্যা করা হয়েছে সেখান থেকে প্রায় ২০০ গজ পশ্চিমে তার স্বামীর বাড়ি। অন্যদিকে প্রায় ১৫০ গজ পূর্ব দিকে তার মা রোকেয়া বেগমের বাড়ি।</p> <p>নাজমার ছোট ভাই মো. কামরুল ইসলাম (৩০) জানান, তার বোন দিনের কাজ শেষ করে সন্তানদের জন্য ওষুধ ছাড়াও বিস্কিট ও পরিবারের জন্য পান-সুপারি কিনে গতকাল বুধবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ অজ্ঞাতনামা খুনিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আক্রমণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে যায়। অনেক রাত হলেও বোন বাড়ি না ফেরার সংবাদ পেয়ে তিনি তার মায়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কের ওপর এসে দাঁড়ান। সড়কের পশ্চিম দিক থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান তাঁর বোন ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ধানক্ষেতে পড়ে রয়েছেন।</p> <p>নাজমার আরেক ভাই মামুন হাসান (২৫) জানান, তাঁর বোনকে হত্যার পর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তিনজনকে দ্রুত চলে যেতে দেখেছেন। অটোরিকশাটিকে থামার ইশারা দিলেও সেটি দ্রুত চলে যায়।</p> <p>নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মজিদ জানান, এ ঘটনায় পুলিশসহ পিবিআই ও ডিবি তদন্তে নেমেছে। তা ছাড়া থানায় মামলাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।</p>