<p>নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ‘কে আলী নিটওয়ার’-এর মালিক কোরবান আলীর তিন মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। বড় মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে শেষ সেমিস্টারে পড়তেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রিয়া দেশে আসেন।</p> <p>শনিবার (২ মার্চ) সকালে বাবার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণে ট্রিট দিতে নিজের আপন বোন সাদিয়া আফরিন আলিসা, খালাত বোন নুসরাত জাহান নিমু, প্রতিবেশী আন্টি নাজিয়া আক্তার ও আন্টির দুই শিশু সন্তান আরিহান (৮), আদিয়ানকে (৬) নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনের পঞ্চম তলার ‘পিজ্জা ইন’-এ যান।</p> <p>খাওয়ার সময়ে হঠাৎ ভবনটিতে আগুন লাগায় তারা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে পারেননি। ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে দুই সহোদর বোনসহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত আলিসা ভিকারননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে এবং নিমু ঢাকা সিটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। এসএসসি পরীক্ষা থাকায় রিয়ার অন্য বোন সাবিয়া আফরিন রিফা তাদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে যায়নি।</p> <p>শুক্রবার সকাল ১১টায় রিয়া ও আলিসার মরদেহ দুটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের চরবাড়িয়া গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে আসেন শিল্পপতি কোরবান আলী। নিহতদের একনজর দেখতে সহস্রাধিক নারীর ভিড় জমে বাড়িতে। গোসল শেষে মরদেহ নারীদের ঘরোয়াভাবে দেখানো হয়।</p> <p>খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে আসেন শিল্পপতি হাজী শাহজাহান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মোতাহের হোসেন জুয়েল, পুলিশের এআইজি মহিউদ্দিন ফারুকী কাজল, এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালের পিএস কেএম সিংহ রতন, এমপি শামীম ওসমান এর পিএস হাফেজ আহমেদ সোহেলসহ কোরবান আলীর ঘনিষ্টজনরা। বিকাল ৪টায় বাড়ির সামনের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দুই বোনকে দাফন করা হয়।</p> <p>রিয়ার চাচা লোকমান হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের কোনো ছেলে নেই। তিন মেয়ে অগ্নিকাণ্ডে দুই মেয়ে মারা গেছে। আগুনে তাদের শরীর পুড়েনি। শুধু ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। ওই রেস্টুরেন্টে তারা ৬ জন একসঙ্গে খেতে গিয়েছিল। কেউ বেঁচে ফিরেনি।</p> <p>নিহত রিয়া ও আলিসার বাবা শিল্পপতি কোরবান আলী বলেন, ‘আমার দুই সন্তান দুনিয়া থেকে চলে গেছে। এ রকম করুণ মর্মান্তিক মৃত্যু আল্লাহ কী কারণে দিয়েছেন সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। শনিবার রিয়াকে নিয়ে আমার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল।’</p> <p>এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬ জনের মধ্যে রিয়ার খালাত বোন নুসরাত জাহান নিমুকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের হাতিগাড়া গ্রামে শুক্রবার দুপুর ১২টায় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিমুর বাবা আবদুল কুদ্দুস রিয়ার বাবার মালিকানাধীনকে আলী নিটওয়ারে চাকরি করেন। আর রিয়ার আন্টি নাজিয়া আক্তার এবং তার শিশু সন্তান আরিহান (৮) ও আদিয়ানকে (৬) বাদ জুমা নোয়াখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড মাইজদীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাদরাসায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।</p>