<p>ভাষা সাহিত্যে একুশে পদক পাচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়ার কৃতি সন্তান মিনার মনসুর। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ (একুশ) জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক ২০২৪ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p>মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।</p> <p>কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মিনার মনসুর বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সত্তরের দ্বিতীয়ার্ধে লেখালেখির শুরু করা মিনার মনসুর সম্পাদক, প্রকাশক ও সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন পঁচাত্তর পরবর্তীকালে।</p> <p>১৯৭৫-৮৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে যাওয়া একজন মিনার মনসুর। বিপুল জনপ্রিয়তার গুণে তিনি চাকসুর বার্ষিকী সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রথম সংকলন-গ্রন্থ ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপথ (১৯৭৯; বাংলা একাডেমি, ২০২০)। সে-সময় ‘এপিটাফথ সম্পাদক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে তাঁর স্পর্ধিত তারুণ্য। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘এই অবরুদ্ধ মানচিত্রেথ (১৯৮৩) সামরিক সরকারের গাত্রদাহের কারণে নিষিদ্ধ হয়। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদ ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য। </p> <p>মিনার মনসুর ১৯৬০ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৮৩) ও স্নাতকোত্তর (১৯৮৪) পাশ করেন। উভয় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তির জন্যে শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ স্মৃতি পুরস্কার পান। ২০১৯ সালের ৬ মে দুই বছরের জন্য এবং ২০২১ সালের ১২ জুলাই পুনরায় তিন বছরের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এর সহকারী সম্পাদক এবং পরে প্রধান ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এ কর্মরত ছিলেন।</p> <p>মিনার মনসুর মূলত কবি। তবে গদ্যেও দ্যুতিময় তার কলম। তার কবিতায় সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পাশাপাশি দেশপ্রেম, দ্রোহ একইসঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি, মিথ, ঐতিহ্য লুকিয়ে আছে তাঁর কবিতার পরতে-পরতে। তিনি গ্লোবাল ভিলেজ ধারণায় বিশ্বাসী। তবে ‘গ্লোবালাইজেশন অব পয়েট্রিথর বদলে রচনা করেছেন বাংলাদেশের কবিতা। তাই কবিতায় দুশ্চিন্তা, ভয়, দুঃস্বপ্নের পরিমণ্ডলকে প্রাধান্য দিয়ে চারপাশের মানুষের করুণ অবস্থা তুলে ধরেন তিনি। তুলে ধরেন রাষ্ট্রের যুক্তিহীন আচরণ আর অমানবিকতার স্থির প্রতিচিত্রও।</p> <p>দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার এ কৃতি সন্তান একুশে পদকে ভূষিত হওয়ায় খুশি পটিয়ার সর্বস্তরের জনসাধারণ।</p>