<p>পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সড়ক, সেতুসহ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। সব মিলিয়ে টেকসই উন্নয়নে এই তিনটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ তাঁর।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিআইএফএফএল আয়োজিত তিন দিনের বিআইএফএফএল গ্রিন অ্যান্ড পিপিপি কনভেনশন অ্যান্ড এক্সপো-২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মেলা চলবে আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে, যেটি এখন উৎপাদন হচ্ছে ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। ওই সময় চাহিদা ৩০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হবে না। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির। দেশের অর্থনীতির জন্যও খুবই স্বস্তির।</p> <p>অর্থমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। উন্নয়নে বাংলাদেশেও অবকাঠামো খাতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে বাংলাদেশের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কোনোভাবেই বাংলাদেশ দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব সবুজ বিনিয়োগ দরকার। অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পিপিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়েছে সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আরো মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এ বৈষম্য দূর করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এ দেশে এখনো এক কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।’</p> <p>আবদুল মুহিত বলেন, দারিদ্র্য কমছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু হতদরিদ্রতা দূর করা না গেলে বৈষম্য কমবে না। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামো ও শিল্প-কারখানার উন্নয়নে দেশের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। আর এ উৎপাদনকে এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। উৎপাদনের এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে হবে ৩০ হাজার মেগাওয়াট।</p> <p>দেশে ভারসাম্যপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং পিপিপি সম্প্রসারণ ও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এখলাছুর রহমান। বিআইএফএফএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরমানুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএফএফএল ২০১৭ সালে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা লভ্যাংশ সরকারি তহবিলে জমা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তিন হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, গ্রিন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এক হাজার ৩৬৩ টাকা, পরিবহন ও বাণিজ্য খাতে দুই হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং পর্যটন খাতে ৯৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।</p> <p>বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ দস্তগীর বলেন, গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। এখন বাংলাদেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিডে এক ইউনিট বিদ্যুৎ যোগ হলে চার ডলার সুফল পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে ১ শতাংশ। </p>