<article> <p style="text-align: justify;">আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ভোট থেকে সরছেন না মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থীরা। কিছু জায়গায় আত্মীয়রা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই ভোটে টিকে থাকতে চাইছেন আত্মীয় প্রার্থীরা। এতে ক্ষমতাসীন দলের পরিকল্পিত কৌশলে নিজের অজান্তেই বাধা সৃষ্টি করছেন তাঁরা। আগামী ৮ মে উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোট হবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গতকাল সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। এদিনও বেশির ভাগ আত্মীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেননি।</p> <p style="text-align: justify;">উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার পেছনে আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দল চেয়েছিল ভোটের মাঠ উন্মুক্ত থাকুক। সেই সঙ্গে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। প্রভাবমুক্ত নির্বাচনে প্রশ্ন কম উঠত। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচনের উদাহরণ তৈরি করা যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রার্থী থাকলে নির্বাচন প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। এটা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। শৃঙ্খলা না মানলে দল শক্তিশালী হয় না। দলীয় প্রতীক না রাখা এবং আত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশের পেছনে নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের একটি কৌশল ছিল।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">নেতারা নিজের অজান্তেই সেই কৌশলে বাধা সৃষ্টি করেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোচনা গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। আগামী ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হওয়ার কথা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।</p> <p style="text-align: justify;">দলীয় সূত্র বলেছে, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্যকারী প্রার্থীদের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। দলের সাংগঠনিক পর্যায় থেকে প্রার্থীদের নিয়ে প্রস্তুত করা তালিকাও উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দল।</p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা সব সময় আগে প্রকাশ করা হয় না। দল নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের অনেক কিছু ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। মাঠ পর্যায়ে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা জরুরি।</p> <p style="text-align: justify;"><b>ভোটে রয়ে গেছেন স্বজন প্রার্থীরা</b></p> <p style="text-align: justify;">কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ফয়সাল বিপ্লবের আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিছ উজ্জামান সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) পলাশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। তিনিও গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।</p> <p style="text-align: justify;">নীলফামারী-১ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই মো. আনোয়ারুল হক সরকার এবং ভাতিজা মো. ফেরদৌস পারভেজ দুজনই উপজেলায় ভোট করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মান্নানের ছোট ভাই সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। ফলে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আনাম চৌধুরীর সঙ্গে ভোটে লড়বেন তিনি। পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি পাবনা-১ আসনের এমপি ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন। নীলফামারী-১ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের ভাতিজা মো. ফেরদৌস পারভেজ এবং চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টুও ভোটে থেকে যাচ্ছেন।</p> <p style="text-align: justify;">টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন হারুনার রশীদ হীরা। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের আপন খালাতো ভাই। মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের ছোট ভাই আলী মুনছুর। তিনি দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশীক আলী হাতিয়া উপজেলায়, পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর ই আলম নাজিরপুর উপজেলায়, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচাসহ তিনজন ভোটে অংশ নিচ্ছেন। বরিশাল-৬ আসনের এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিকের ভাই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ভোট করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ ছিল তালিকা তৈরি করা। সেটি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তুলে ধরব। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কাজ করা হবে।’</p> <p style="text-align: justify;"><b>দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও স্বজনরা প্রার্থী</b></p> <p style="text-align: justify;">গত রবিবার ছিল উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সেখানেও মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রথম ধাপের ক্ষেত্রে অনেক প্রার্থী বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত দেরিতে এসেছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এমন সিদ্ধান্ত জানা গেলে প্রার্থীরা পরিকল্পনায় বদল আনতেন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সরাসরি এ কথা বলার সুযোগ নেই।</p> <p style="text-align: justify;">বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এমপি খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনের বাবা সিরাজুল ইসলাম খান রাজু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এমপির বাবার চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু রেজা খানসহ ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে দুজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন তিনজন। মনোনয়নপত্র দাখিল করা প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।</p> <p style="text-align: justify;">কুমিল্লার বরুড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের শ্যালক মো. হামিদ লতিফ ভূঁইয়া ওরফে কামাল। গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।</p> <p style="text-align: justify;">আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের একটি শৃঙ্খলা আছে। নেতাকর্মীদের এটা মেনে চলা উচিত। আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম, এবার মাঠের ত্যাগী নেতারা যেন ভোট করার সুযোগ পান। এখনো সেই পরিকল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া প্রভাবশালীদের নিকটাত্মীয় ভোটে থাকলে ভোট প্রভাবিত হতে পারে।’</p> <p style="text-align: justify;">[প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেছেন]</p> </article>