<article> <p align="left">সব মসজিদ আল্লাহর ঘর। কিন্তু মর্যাদা ও ফজিলতের দিক থেকে ইসলামে চারটি মসজিদকে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো—মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদুল আকসা ও মসজিদে কোবা। বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এই চার মসজিদ ছাড়া পৃথিবীর অন্য সব মসজিদের মর্যাদা সমান। নিম্নে উল্লিখিত প্রতিটি মসজিদের পৃথক পৃথক ফজিলত তুলে ধরেছেন মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ</p> <p align="left"><b>মসজিদুল হারামের বিশেষ মর্যাদা</b></p> <p align="left">পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হলো মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম। কোরআন ও হাদিসে এ মসজিদের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন—</p> <p align="left"><b>মুসলমানদের কিবলা</b></p> <p align="left">মুসলমানদের কিবলা হচ্ছে মসজিদে হারাম তথা বায়তুল্লাহ। প্রত্যেক মুসলমানকে সালাতের সময় মসজিদে হারামের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, তুমি মসজিদুল হারামের (কাবাগৃহের) দিকে তোমার চেহারা ফিরিয়ে দাও। আর তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের চেহারাকে সেদিকেই (কাবার দিকে) ফিরিয়ে দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৪)</p> </article> <article> <p align="left"><b>এক লাখ গুণ বেশি সওয়াব : মসজিদুল</b> হারামে সালাত আদায় করলে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি সওয়াব হয়। আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মসজিদুল হারামে সালাত আদায় করার ফজিলত অন্য মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি। (সহিহুল জামি, হাদিস : ৪২১১)</p> </article> <article> <p align="left"><b>কাবাগৃহ সামনে বা পেছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা যাবে না</b></p> <p align="left">আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, যখন তোমরা পায়খানায় যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ কিংবা পিঠ করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে (এটা কাবার উত্তর বা দক্ষিণের লোকদের জন্য। কেননা কাবা হচ্ছে মদিনার সরাসরি দক্ষিণে)। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, আমরা যখন সিরিয়ায় গেলাম, সেখানে পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। তখন আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইস্তিগফার করতাম। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৪)</p> </article> <article> <p align="left"><b>মুশরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ</b></p> <p align="left">কাবাগৃহের বিশেষ মর্যাদা এ কারণেও যে এখানে কোনো বিধর্মী তথা কাফির-মুশরিক প্রবেশ করতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মুশরিকরা নাপাক বৈ কিছুই নয়। অতএব, তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের কাছে না আসে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৮)</p> <p align="left">আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আবু বকর (রা.) নবম হিজরিতে হজে আমাকে এ আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন যে আমি যেন কোরবানির দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় (সমবেত লোকদের) এ ঘোষণা করে দিই যে এ বছরের পর কোনো মুশরিক হজ করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ১১৯০)</p> <p align="left"> </p> <p align="left"><img alt="ইসলামের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ চার মসজিদ" height="262" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/22-04-2024/2_kaler-kantho--22-4-2024.jpg" style="float:left" width="436" /></p> <p align="left"><b>মসজিদে নববীর ফজিলত</b></p> <p align="left">মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে প্রতিষ্ঠিত। এই মসজিদের বিশেষ ফজিলত আছে। এই মসজিদও হারামের অন্তর্ভুক্ত। বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববী এই দুই মসজিদকে একত্রে ‘হারামাইন’ বলা হয়।</p> </article> <article> <p><b>মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ে হাজার গুণ বেশি সওয়াব</b> : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মসজিদুল হারাম (কাবা) ছাড়া আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি সওয়াব। (বুখারি, হাদিস : ১১৯০)</p> <p align="left"><b>এই মসজিদের একটি স্থান হলো জান্নাতের বাগান</b> : আবদুল্লাহ ইবনু জায়েদ মাজিনি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার ঘর ও মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৫)</p> <p align="left">অন্য বর্ণায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার মিম্বার অবস্থিত আমার হাউজের (কাউছার) ওপর। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৬)</p> <p align="left"> </p> <p align="left"><img alt="ইসলামের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ চার মসজিদ" height="274" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/22-04-2024/3_kaler-kantho--22-4-2024.jpg" style="float:left" width="456" /></p> <p align="left"><b>মসজিদুল আকসার ফজিলত</b></p> <p align="left">পৃথিবীর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হলো মসজিদুল আকসা। ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বা ‘বায়তুল মাকদিস’ ফিলিস্তিনের কুদস অথবা জেরুজালেম বা (পুরাতন নাম) ঈলিয়া শহরে অবস্থিত। মক্কা থেকে কুদস (উট বা ঘোড়ায় চড়ে) ৪০ দিনের সফরের দূরত্ব। এই মসজিদেরও কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন—</p> <p align="left"><b>মুসলমানদের প্রথম কিবলা</b> : সালাত ফরজ হওয়ার পর থেকে প্রথম ১৬/১৭ মাস ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা।</p> <p align="left"><b>ইসরার শেষ স্থান : রাসুলুল্লাহ</b> (সা.)-কে মহান আল্লাহ তাআলা মক্কার মাসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসা পর্যন্ত ইসরা বা রাত্রির ভ্রমণ করিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘মহাপবিত্র তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসায়, যার চতুষ্পার্শ্ব আমরা বরকতময় করেছি, তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাবার জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা ইসরা : ১)</p> <p align="left"><b>মিরাজ শুরু হয়েছিল এই মসজিদ থেকে</b> : মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা মুহাম্মাদ (সা.)-কে এই মসজিদ থেকেই মিরাজে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আকাশ থেকে পুনরায় এখানেই নামিয়ে ছিলেন।</p> <p align="left"> </p> <figure class="image" style="float:left"><img alt="ইসলামের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ চার মসজিদ" height="270" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/22-04-2024/4_kaler-kantho--22-4-2024.jpg" width="450" /> <figcaption>মসজিদে কোবা। ছবি : মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা</figcaption> </figure> <p align="left"><b>মসজিদে কোবার ফজিলত</b></p> <p align="left">হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় প্রবেশের আগে কোবা নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং একটি মসজিদ তৈরি করেন। তারপর সেখানে সালাত আদায় করেন। এটাই কোবা মসজিদ নামে পরিচিত। এটি মসজিদে নববী থেকে তিন মাইল বা পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।</p> <p align="left"><b>রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক নির্মিত প্রথম মসজিদ</b></p> <p align="left">রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় পৌঁছার আগে কোবা নামক স্থানে সওয়ারি থেকে অবতরণ করেন ও কিছুদিন অবস্থান করেন এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদের নাম হচ্ছে ‘মসজিদে কোবা’, যে মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে তুমি সেখানে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৮)</p> <p align="left"><b>ওমরাহর সমান নেকি লাভ</b></p> <p align="left">বাড়ি থেকে অজু করে মসজিদে কোবায় গিয়ে সালাত আদায় করলে ওমরাহর সমান নেকী পাওয়া যায়। সাহল ইবনু হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করল অর্থাৎ অজু করল, অতঃপর  কোবা  মসজিদে এসে সালাত আদায়  করল, তার জন্য একটি ওমরাহর সমান সওয়াব আছে। (নাসাঈ, হাদিস : ৬৯৯)</p> </article>