এক দেশে এক মা শূকর তার তিনটি ছেলে শূকর নিয়ে বসবাস করত। কিন্তু তাদের ঠিকমতো খাওয়াতে পারত না। তাই মা ছেলেদের কাজের জন্য দূরে পাঠিয়ে দিল। তিন ভাই এক জঙ্গলে গিয়ে ঘর বানাবে ঠিক করল। পরামর্শমতো প্রত্যেকের জন্য আলাদা ঘর। ছোট ভাইটা ছিল বেশি অলস। সে ঘর বানানোর জন্য এত কষ্ট করতে চাইল না। তাই সে রাস্তাঘাট থেকে কিছু প্লাস্টিকের পাইপ ও পলিথিন নিয়ে এলো এবং তা দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে ফেলে। মেজো ভাই ছিল একটু কম অলস। সে বনজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে কিছু কাঠি ও খড়ি জোগাড় করে ঘর তুলল। বড় ভাইটি ছিল বেশ বুদ্ধিমান আর পরিশ্রমী। সে চিন্তা করল ঘর যখন বানাব শক্ত করে বানাই। তাহলে বিপদে-আপদে নিরাপদ থাকা যাবে। সে অনেক কষ্টে কিছু ইট জোগাড় করল এবং তা দিয়ে সুন্দর একটি ঘর বানিয়ে ফেলল। ঘরের ভেতর ফায়ারপ্লেস ও চিমনির ব্যবস্থাও করে ফেলল। ঘর বানানো শেষ হলে তিন ভাই মহানন্দে গান-বাজনা ও নাচানাচি করতে লাগল। এদিকে জঙ্গলে থাকত এক দুষ্ট নেকড়ে। আওয়াজ শুনে সে দেখতে এলো কী ঘটছে। সে বেশ ক্ষুধার্তও ছিল। নাদুসনুদুস তিনটি শূকরকে দেখে সে লোভ সামলাতে পারল না। চিন্তা করল রাতে তাদের আক্রমণ করবে।
রাতে সে প্রথমে ছোট ভাইটির ঘরে টোকা দিল।
কে?
নেকড়ে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘আমি তোমার বন্ধু। দরজা খোলো।’ কিন্তু শূকরছানা বুঝল এটা দুষ্ট নেকড়ে। দরজা খুলছে না দেখে নেকড়ে বলল, ‘না খুললি তো বয়েই গেল, তোর ঘর আমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেব।’ নেকড়ে ঘর উড়িয়ে দিলে ছানাটি দৌড়ে গিয়ে মেজো ভাইয়ের ঘরে ঢুকল। নেকড়ে তারপর মেজো ভাইয়ের ঘর ভেঙে দিল। দুজনে তখন দৌড়ে গিয়ে বড় ভাইয়ের ঘরে ঢুকল। বড় ভাই সব শুনে বলল, ‘দাঁড়াও বুদ্ধি করি।’ ততক্ষণে নেকড়ে খুব রেগে গেছে। সে শূকরের মাংস না খেয়ে যাবে না। দরজায় টোকা দিতে দিতে বলল, ‘আরে দরজা খোলো। আমি তোমাদের কিছু করব না।’ তখন বড় ভাই বলল, ‘আরে ভাই, দরজা তো খুলতে পারছি না। তুমি ঘরের ছাদে গিয়ে ওঠো। সেখানে একটা জানালা দেখবে। আমি তা খুলে দিচ্ছি।’ বড় ভাই চিমনির দিকের জানালা খুলে দিল আর একটা পানিভর্তি বড় হাঁড়ি চাপাল ফায়ারপ্লেসে। নেকড়ে মহানন্দে ছাদে উঠে যেই না চিমনির জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকতে গেল, অমনি পড়ল গিয়ে হাঁড়ির পানিতে। বড় ভাই সঙ্গে সঙ্গে পাতিলের ঢাকনা লাগিয়ে দিল। তারপর নেকড়ের গ্রিল দিয়ে রাতের ভোজ শেষ করে ঘুমাতে গেল।
গল্পটির ইতিহাস
বহুকাল ধরে আমেরিকায় গল্পটি চালু আছে। দিনে দিনে এদিক-ওদিক বদলেছেও। কেউ ঠিক করে বলতে পারে না এর জন্মকাল; তবে আঠারো শতকে এটি অনেক বেশি লোকের মধ্যে চালু ছিল। ১৯০৪ সালের ইংলিশ ফেয়ারি টেলস নামের একটি বই বের হয়। বছর বছর তার নতুন নতুন সংস্করণ হয়েছে। ১৯২২ সালের সংস্করণে যুক্ত হন ফ্লোরা অ্যানি স্টিল। ফ্লোরা আদতে একজন ব্রিটিশ। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম। ২২ বছর পরিবারের সঙ্গে তিনি ভারতে ছিলেন। মূলত পাঞ্জাব এলাকায়। তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অনেক লোকগল্প সংগ্রহ করেছিলেন। ভারত-সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর কিছু বইও আছে। তবে তিনি শিশুদের জন্য লিখতেই বেশি পছন্দ করতেন। ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব আকবর’, ‘টেলস অব পাঞ্জাব’, ‘অন দ্য ফেস অব দ্য ওয়াটার’ ইত্যাদি তাঁর কিছু নামকরা বই।
তিনি মানুষের মুখে মুখে গল্প শুনতে পছন্দ করতেন। শোনা গল্পগুলোকে তিনি নিজের মতো করে গুছিয়ে লিখতেন। এভাবেই তিনি ওই নেকড়ে ও শূকরের গল্পটি শুনে থাকবেন। তবে মূল গল্পে শূকরছানাদের নাম ছিল—ব্রাউনি, ব্ল্যাকি আর হোয়াইটি। আর তাতে শিয়ালেরও ভূমিকা ছিল। সে-ই ফুসলিয়ে নেকড়েকে নিয়ে যায় শূকরছানাদের কাছে। ফ্লোরার গল্পে শিয়াল নেই। প্রকাশের পরপরই গল্পটি বেশ জনপ্রিয় হয়। শিশুদের গল্পটি এই শিক্ষা দেয় যে আলসেমি করে সফল হওয়া যায় না। পরিশ্রম করলে নিরাপদ ও সুখী জীবন লাভ করা যায়। এটি অবলম্বনে ১৯৩৩ সালের ২৭ মে কার্টুন ফিল্ম ‘থ্রি লিটল পিগস’ নির্মিত হয়। ব্রুট গিলেট ছিলেন পরিচালক। তিনি নেকড়ের নাম রেখেছিলেন জিকি মিডাস উলফ। চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়। তাই ওয়াল্ট ডিজনি পরে চরিত্রটি নিয়ে আরো ছবি বানায়।
মন্তব্য