<p>‘ছাই থেকে সোনা!’</p> <p>রতনের মাথায় ঢুকছে না। এ-ও সম্ভব!</p> <p>সন্ধ্যা হলো। মাছভর্তি বাক্স হাতে বাবা এসেছেন। সাগরে মাছ ধরেন সারা দিন।</p> <p>‘টেকা পামু বুঝলি রতন। অনেক টেকা। একবার শুধু ছাইবাবার দেখা পাই।’</p> <p>পরদিন সকাল। বন্ধুরা ডাক দিল স্কুলের জন্য। রাজু, পিংকি আর মিনু।</p> <p>‘স্কুলে যাই বাবা।’</p> <p>ছাইবাবাকে নিয়ে গল্প করতে করতে স্কুলে পৌঁছাল ওরা। কিন্তু ক্লাসে কারোর মন নেই। খেয়াল করলেন কমল স্যার। ক্লাস শেষে ডেকে বললেন, ‘কী হয়েছে তোদের? চারজনেরই দেখলাম ক্লাসে মন নেই।’</p> <p> ‘না স্যার, কিছু না।’ আসলে বলি বলি করেও স্যারকে কথাটা বলতে পারল না রতন।</p> <p>বিকেলে চার বন্ধু গেল বাড়ির পাশের সাগরপারে।</p> <p>‘স্যারকে বলে দিই সব। বললে স্যারও কি ছাইবাবার কাছে যাবেন?’ রতন প্রশ্নটা ছুড়ে দিল বন্ধুদের।</p> <p>পিংকি বলল, ‘মনে হয় না। উনি অত সোনাদানা দিয়ে কী করবেন?’</p> <p>‘ছাই থেকে সোনা বানানো সম্ভব না।’ রাজুর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে মিনু বলল, ‘কিন্তু আমার বড় খালা নাকি পেয়েছেন।’</p> <p>রতন বুঝি অন্য কিছু একটা ভাবছে। হঠাৎ বলল, ‘আচ্ছা, অনেক দিন হলো গ্রামে চুরি হচ্ছে না। আগে তো প্রতি রাতেই হতো।’</p> <p>রাজু বলল, ‘কালু আর বিলুকে দেখা যায় না। চোর না থাকলে আর চুরি হবে কী করে?’</p> <p>রতন আরো চিন্তায় পড়ে গেল। বলল, ‘ওই দিন এক লোক এসে বাবার সঙ্গে গল্প করছিল ছাই নিয়ে। ওই সময় মা নাকি ওই কালুকে ঘুর ঘুর করতে দেখেছিল বাড়ির আশপাশে।’</p> <p>‘ওদের কারসাজি নয়তো?’ বলল মিনু।</p> <p>‘তাহলে একটা কিছু করা উচিত।’ রতনের প্রস্তাবে সায় দিল বাকিরা। ঠিক হলো, কমল স্যারকে জানানো হবে।</p> <p>পরদিন শুক্রবার। কমল স্যারের বাসায় গেল ওরা।</p> <p>মুড়ি আর নারকেল নিয়ে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে উঠানে বসলেন কমল স্যার। সব খুলে বলল ওরা। রতন বলল, ‘এক লোকের সঙ্গে বাবার মাছের বাজারে দেখা হয়েছিল। লোকটা মাছ আর টাকা নিয়ে গিয়েছিল ছাইবাবার কাছে। টাকা আর মাছ পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল ছাইবাবা। অবশ্য পোড়ানোর দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখেনি। দুই দিন খাটের তলায় সে ছাই রেখে দিয়েছিল। তারপর সে সোনার আংটি আর গয়না পেয়েছে নাকি ছাই উড়িয়ে।’</p> <p>চিন্তায় পড়ে গেলেন কমল স্যার। ‘নির্ঘাত বানানো গল্প। সমস্যা হলো, একজনের কথা শুনে বাকিরাও লোভে পড়বে।’</p> <p>সবাই ঠিক করল রাতেই হবে অভিযান। ছাইবাবার জারিজুরি ফাঁস করতে হবে।</p> <p>রাত ৮টা বাজতেই সবাই হাজির ঝাউতলায়। আরো খানিকটা হেঁটে গেলে মংলাপাড়া। সেখানেই সৈকত ঘেঁষে তাঁবু খাটিয়ে আস্তানা গেড়েছে ছাইবাবা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ। তাঁবুর সামনে চার-পাঁচটা চেয়ার। একপাশে মাটির চুলা থেকে ধোঁয়া উঠছে।</p> <p>আড়াল থেকে চমকে উঠল চার বন্ধু। চেয়ারে বসা রতন ও পিংকির বাবা। পিংকির বাবার সামনে মাছের ডালা।</p> <p>আশপাশে বাড়িঘর নেই। একটা ইঞ্জিন নৌকা আছে তাঁবুর ঠিক পেছনে। জোয়ারের পানিতে দোল খাচ্ছে ওটা। দেখা গেল ছাইবাবাকে। তাঁবু থেকে বেরিয়েই মিহি সুরে বলল, ‘মাছ আনছ তুমি? এক বাক্স মাছ ছাই বানাইতে খরচ ২০ হাজার টাকা। দুই ভরি করে সোনা পাইবা।’</p> <p>মাথা নাড়লেন পিংকির বাবা। সঙ্গে টাকাও এনেছেন।</p> <p>আড়াল থেকে সব দেখলেন কমল স্যারও। ফোন বের করে কল করলেন।</p> <p>‘হ্যালো ওসি সাব? মংলাপাড়া থেকে বলছি।’</p> <p>রতনের সন্দেহ হলো। ছাইবাবা তাড়াহুড়া করে যেভাবে মাছের বাক্স আর টাকা নিয়ে তাঁবুর ভেতর ঢুকল, মনে হলো দ্রুত পালাবে।</p> <p>তাঁবু থেকে মুখে গামছা পেঁচানো এক লোক বেরিয়ে এলো। হাতে দুটি পলিথিন। রতনরা বুঝতে পারল ওটা ছাইভর্তি। রতনের বাবাকে পলিথিন ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই লন ছাই। দুই দিন খাটের নিচে রাখতে হবে। তারপর বাইরে নিয়া উড়াইবেন। দুই ভরি সোনা পাইবেন। এর আগে কাউকে কিছু বলা নিষেধ।’</p> <p>‘তার মানে ওরা আগেই একগাদা ছাই বানিয়ে রেখেছে। মানুষের কাছ থেকে মাছ আর টাকা রেখে সে ছাইটাই পলিথিনে ভরে দিচ্ছে।’ বলল পিংকি।</p> <p>‘স্যার, পুলিশ আসতে কতক্ষণ?’</p> <p>‘আধাঘণ্টা তো লাগবেই।’</p> <p>‘এত সময় নেই মনে হচ্ছে। ওরা নিশ্চিত পালাবে। ওদের কাছে অস্ত্রও আছে দেখছি।’</p> <p>‘হুম। এখন উপায়? তোরা তো ছোট। তা না হলে একটা কিছু করা যেত।’</p> <p>রতন উঠে দাঁড়াল।</p> <p>‘একটা বুদ্ধি আছে। পুলিশ আসা পর্যন্ত ওদের আটকে রাখতে হবে। পিংকি তোর গলায় ওটা পিতলের লকেট না? স্যার, আপনার আঙুলের আংটিটাও দিন।’</p> <p>কথা না বাড়িয়ে দুজনে আংটি আর চেইন খুলে দিল রতনের হাতে। রতন এক দৌড়ে চলে গেল তাঁবুর পেছন দিকটায়। অন্ধকারে কেউ তাকে খেয়াল করল না।</p> <p>হঠাৎ শোনা গেল রতনের গলা। চোখ বড় বড় করে বলছে,</p> <p>‘ও ছাইবাবা! ছাইবাবা!’</p> <p>ডাক শুনে দৌড়ে এলো ছাইবাবা ও দুই সঙ্গী।</p> <p>‘তুই কে রে! কী চাস! যা এখান থেকে!’</p> <p>ধমকে উঠল দুই সঙ্গী। কালু আর বিলুকে চিনতে ভুল হলো না রতনের। এরাই তাহলে ছাইবাবাকে আমদানি করেছে। আপাতত না চেনার ভান করল রতন।</p> <p>‘সোনা! ছাইয়ের মধ্যে সোনা! ছাইবাবাকে দেখাইতে আনছি।’</p> <p>‘অ্যাঁ বলিস কী!’</p> <p>দুই সঙ্গী একে অন্যের দিকে তাকাল। রতন যে-ই না তার পকেট থেকে চেইন আর আংটি দেখাল, অমনি হুড়াহুড়ি লেগে গেল দুই চোরের মধ্যে। এতক্ষণ তারা মাছের বাক্স আর নগদ টাকা তুলে রাখছিল নৌকায়। রতনের কথা</p> <p>শুনে দৌড় দিল তাঁবুর পেছনে লুকিয়ে রাখা ছাইয়ের গাদার দিকে।</p> <p> ‘ভালো করে খোঁজেন। ভালো করে।’ রতনের কথায় কাজ হলো। আরো জোরেশোরে ছাইয়ের গাদায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল দুই চোর। ছাইবাবা বেদিশা হয়ে গেল। ভেবে পাচ্ছে না, কিভাবে এখানে সোনার আংটি এলো।</p> <p>ওদিকে রতন আর পিংকির বাবাকে সব বুঝিয়ে বললেন কমল স্যার। তাঁবুর পেছনে দুই চোর ছাইয়ের গাদায় মারামারি জুড়ে দিয়েছে তখন। পুলিশ যে কখন হাজির হয়েছে টেরই পেল না।</p>